নানা কর্মসূচীর মধ্যদিয়ে পার্বত্য অঞ্চলে ১০ ভাষাভাষী ১১টি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস পালন করেছে।
বুধবার সকাল ১০টায় দিবসটি উপলক্ষে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উদযাপন কমিটি পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলের উদ্যোগে ও টিআইবির সহযোগিতায় রাঙামাটি পৌরসভা চত্বরে দিন ব্যাপী কর্মসূচী উদ্বোধন করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য বাঞ্ছিতা চাকমা।
এসময় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা গানের সুর আর নাচের তালে তালে উৎসবে মেতে উঠে। উৎসবমুখর হয়ে উঠে পাহাড়ি জনপদ।
ঐতিহ্যবাহী পোশাকে উৎসবে যোগ দেয়- পার্বত্যাঞ্চল বসবাসরত চাকমা, মারমা, খুমী, ম্রো, চাক, বম, খিয়াং, তঞ্চঙ্গ্যা, অহমিয়া, পাংখোয়া ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ। একে একে পাহাড়ি নাচ পরিবেশন করেন এসব সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুনীরা। তাদের নাচের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয়ভাবে আদিবাসী দিবস পালন এবং আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতির দাবি জানান তারা। অনুষ্ঠানস্থলে ভিড় জমায় বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ, জাতি-গোষ্ঠীর মানুষ।
পরে আদিবাসী অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘ ঘোষণার বাস্তবায়ন চাই ‘এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উদযাপন কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি ও সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার।
এসময় বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম পার্বত্য অঞ্চল শাখার সভাপতি শ্রী প্রকৃতি রঞ্জন চাকমার,পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান ও এমএন লারমা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেসনের আহবায়ক বিজয় কেতন চাকমা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি ও সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার বলেন, পার্বত্য চুক্তিকে পদদলিত করে পাহাড়ের সমস্যা শান্তিপূর্ণ সমাধান করা সম্ভব না। একই সাথে বিশ্বব্যাপী আদিবাসী জাতিসমূহের জীবনধারা উন্নয়ন অনিশ্চিত রেখে যেমন উন্নয়নের লক্ষ্য বাস্তবায়ন সম্ভবনা, তেমনি রাষ্টীয়ভাবে আদিবাসীদের স্বীকৃতি না দিয়ে দেশের যথাযথ উন্নয়ন হতে পারে না।
সরকারের নীতি নির্ধারকরা আদিবাসী ইস্যুতে ভ্রান্ত ধারণার কারণে দিবসটি পালনে নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। যা একটি গনতান্ত্রিক সভ্য সমাজে কোনভাবেই কাম্য হতে নয়। ৫৪টির অধিক ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী এদেশে বসবাস করছে। তাই সংবিধান সংশোধন করে দেশের সমতল ও পাহাড়ের ৩০ লক্ষ জনগোষ্ঠীদের ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি হিসেবে নয়, আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতির দিতে হবে।
তিনি বাংলাদেশ সরকার আদিবাসী দিবস পালন না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আগামী বছর থেকেই আদিবাসী দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন এবং তাদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানান।
পরে পৌর চত্বর থেকে বিশাল বর্ণাঢ্য র্যালী বের করা হয়। র্যালীটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা শিল্পকলা একাডেমী প্রাঙ্গনে গিয়ে শেষ হয়। র্যালীতে বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে পার্বত্যাঞ্চলে ১০ ভাষাভাষী ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন।
বিডিপ্রতিদিন/ ৯ আগস্ট, ২০১৭/ ই জাহান