স্কুল কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়ার তিন মাসের মাথায় বিভিন্ন অংশে ফাটল ধরেছে ৪১নং চরযাদবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি। ফলে আতঙ্কে ভবনটিতে পাঠদান করছেন শিক্ষার্থীরা। যেকোনো সময় ভবনটি ধসে পড়তে পারে বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ আশঙ্কা করছে।
জানা গেছে, শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডে ৪১নং চরযাদবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থানীয় পাঞ্জু শিকদার ১৯২৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেন। পরে ১৯৭৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হয়। টিনসেড মূল ভবনের পাশে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প-৩ আওয়তায় এলজিইডি বিভাগ ৭৩ লাখ ৮৮ হাজার ৪০০ টাকা ব্যয়ে একটি নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। চারতলা ভবনটির একতলার নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০১৮ সালে।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে স্কুল কর্তৃপক্ষকে চার কক্ষের ভবনটি বুঝিয়ে দেয় ঠিকাদার। বুঝিয়ে দেওয়ার পর থেকেই ভবনটির বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। মেসার্স আব্দুল মান্নান লস্কর নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান স্কুলের ভবনটি নির্মাণ করেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রতন কুমার মন্ডল বলেন, যে ঠিকাদার ভবনটি করেছেন, সে বলেছে ভবনটিতে শিক্ষার্থীদের নিয়ে ক্লাস শুরু করতে পারেন। তাই ঠিকাদারের কথা অনুযায়ি গত ফেব্রুয়ারি থেকে শিক্ষার্থীদের পাঠদান শুরু করেছি। কিন্তু ভবনের বিভিন্ন অংশে ফাটল ধরেছে। শিক্ষার্থীদের নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে আছি।
শনিবার দুপুরে স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি জানালার কলামে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে । মেঝের ফ্লোর প্লাস্টারগুলো উঠে গেছে। সিঁড়ি ফেটে আলাদা হয়ে পড়েছে। ভবনের দেয়ালেও ফাটল ধরেছে। ভবনের গ্রীলগুলোতে বাসের চটি দিয়ে ফিক দেওয়া হয়েছে। ৪১নং চরযাদবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষার্থী আছে ১৩৮জন। শিক্ষক আছে চার জন।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নজরুল ইসলাম ও খায়্যেদা আক্তার সুমী বলেন, ভবনটি যেকোনো সময়ে ধসে যেতে পারে। যে ঠিকাদার ভবনটি নির্মাণ করেছিলেন, তিনি অত্যন্ত নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করেছেন।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আসমা বেগম বলেন, ভবনের কাজে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। নতুন ভবনটিতে ফাটল ধরার বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।
ঠিকাদার আব্দুল মান্নান লস্কররের মোবাইলে ফোন করে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে সহকারি ঠিকাদার সোহেল খান বলেন, কাজটি পায় মাদারীপুরের মেসার্স আব্দুল মান্নান লস্কর নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। পরে আমার কাছে বিক্রি করে। আমি ঢাকা আছি। ঢাকা থেকে এসে কথা বলবো।
এলজিইডির সদর উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহ আলম মিয়া বলেন, ঠিকাদার এলজিইডিকে ভবনটি এখনও বুঝিয়ে দেননি। স্কুলের ফাটলের বিষয়টি আমি শুনেছি। আজ বিকেলে পরিদর্শনে যাবো, অনিয়ম পেলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিদ্যালয়ের ভবনটি করেছে এলজিইডি। আমি বিদ্যালয়ের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করবো।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল