আবহমান গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ নেচে-গেয়ে ও আনন্দ-উল্লাস করে উপভোগ করেছেন টাঙ্গাইলের বিনোদন প্রেমী লাখো মানুষ। সোমবার বিকেলে বাসাইলের বাসুলিয়া নামে খ্যাত চাপড়া বিলে গ্রামবাসীর উদ্যোগে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক মিঞা স্মৃতি নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা উৎসবমূখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বাসাইল উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের এমপি। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলাম। প্রধান আলোচক ছিলেন ঢাকার বিআরবি হাসপাতালের চীফ কনসালটেন্ট অধ্যাপক ডা. আব্দুস সামাদ। এছাড়াও টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামছুন নাহার স্বপ্না প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিশেষ অতিথি ছিলেন, কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুস সামাদ, বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামসুন নাহার স্বপ্না প্রমুখ।
বৈঠা টান দিওরে পাটের বাজার চড়া, জিততে পারলে খাইতে দিব ইলিশ মাছের বড়া- এমন জারি গানের তালে তালে মাঝি মাল্লারা নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করে। আবহমান কাল থেকে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যের আন্যতম অনুষঙ্গ নৌকা বাইচ। নদীমাতৃক বাংলাদেশে নৌকা বাইচ লোকায়ত বাংলার লোকসংস্কৃতির একটি অংশ।
প্রতিযোগিতায় সোনারতরী, ময়ূরপঙ্খী, মায়ের দোয়া, জীবনতরী, পঙ্খীরাজ, আদর্শ গ্রাম, বাংলার বাঘ, জনতারতরীসহ বাহারী রং ও নামের প্রায় অর্ধশতাধিক নৌকা ৬টি গ্রুপে অংশগ্রহণ করে। নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে ভুঞাপুরের আল্লাহ ভরসা, দ্বিতীয় হয়েছে বাসাইল উপজেলার নথখোলার আদর্শ গ্রাম।
বর্ণাঢ্য এ নৌকাবাইচ দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে আগ্রহ নিয়ে ছুটে আসে শিশু-কিশোর, যুবক-যুবতী নারী-পূরুষসহ বিনোদন প্রেমী বিভিন্ন বয়সের হাজার হাজার মানুষ। দুপুর থেকেই বাসুলিয়া অভিমুখে জল ও স্থলপথে নামে জনতার ঢল। গোটা বাসুলিয়া চত্বর জুড়ে লাখো মানুষের মিলন মেলায় পরিনত হয়।
বিভিন্ন যানবাহন, ডিঙি ও ইঞ্জিন চালিত শতশত নৌকাযোগে আসা হাজার হাজার মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে পুড়ো এলাকা। আতি উৎসাহী দর্শনার্থীরা ইঞ্জিন চালিত নৌকায় আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের মুহুর্মুুহু মিউজিকের তালে নেচে গেয়ে উপভোগ করেন নৌকা বাইচ। অনেক তরুণ-তরুণীরা আবার বাহারী রঙের পোষাক পরে রং ঢং এ সেজে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে মানুষের ভীরে। এসব বাহারী সাজ-সজ্জা ও নাচ গান আরো মুগ্ধ করেছে মানুষকে। এ নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে রাস্তার পাশে ও ভাসমান নৌকায় বিভিন্ন ধরনের মালামালের পশরা সাজিয়ে বসে ব্যবসায়ীরা।
অন্য নৌকাকে পেছনে ফেলে নিজেদের নৌকা আগে যাওয়ার চেষ্টায় প্রয়োজন বোধে কাঁসির শব্দে বৈঠার গতি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। নৌকা বাইচের সময় মাল্লারা সমবেত কণ্ঠে যে গান গায় তা সারি গান নামে অভিহিত। চ্যম্পিয়ান পুরস্কার হিসেবে ছিল একটি মোটর সাইকেল, দ্বিতীয় পুরস্কার রঙ্গিন টেলিভিশন এবং প্রত্যেকের জন্য ছিল সান্তনা পুরস্কার। বাইচ শেষে সন্ধ্যায় অতিথবিৃন্দ বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরন করেন।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল