১৬ অক্টোবর, ২০১৯ ২২:৩০

পরিবহন ও খালাস সঙ্কটে পচছে মিয়ানমারের পিয়াজ

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

পরিবহন ও খালাস সঙ্কটে পচছে মিয়ানমারের পিয়াজ

পরিবহন ও খালাস সঙ্কটের কারণে মিয়ানমার থেকে আমদানিকৃত পিয়াজ টেকনাফ স্থলবন্দরে পচে যাচ্ছে। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, বাজারে পিয়াজের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করতে এটি ব্যবসায়ীদের কৌশল।

তবে গত এক সপ্তাহে তিন হাজার বস্তা পিয়াজ পচে গেছে বলে জানিয়েছেন আমদানিকারকরা। এই অবস্থায় মিয়ানমার থেকে গত দুই দিন পিয়াজ আমদানি বন্ধ রাখেন ব্যবসায়ীরা।

জানা যায়, টেকনাফ স্থল বন্দরে পচে যাওয়া পিয়াজ খোলা জায়গায় রাখা হয়েছে। সেখান থেকে শ্রমিকরা ভাল পিয়াজ গুলো সংগ্রহ করে আলাদা করছেন।

নাফনদীর তীরে রেখে দেওয়া হয়েছে পচে যাওয়া পিয়াজের সারি সারি বস্তা। এদিকে, গত দুই দিন আগে আমদানিকৃত পিয়াজভর্তি ৭টি ট্রলার বন্দরে খালাসের অপেক্ষা রয়েছে।

টেকনাফ শুল্ক স্টেশন ও স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, চলতি মাসের ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে আসা ৮ হাজার ৭০১ টন পিয়াজ খালাস করা হয়েছে। গত দুই দিন ধরে মিয়ানমার থেকে কোনো পিয়াজের ট্রলার এ বন্দরে আসেনি। তবে এত বিপুল পরিমাণ পিয়াজ আমদানি হলেও স্থানীয় বাজারে পিয়াজের দাম কমছেনা বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

এ সময় পিয়াজ ব্যবসায়ী শওকত আলম বলেন, একটি ট্রলারে তার কিছু পিয়াজ এসেছিল। জেটিতে বেশি সিরিয়াল থাকায় ও খালাসে দেরি হওয়ায় পিয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। বন্দরের গাফেলতির কারণে ব্যবসায়ীদের লাখ লাখ টাকা ক্ষতি হচ্ছে।

আরেক ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর বলেন, পরিবহন সঙ্কটের কারণে পিয়াজ খালাস দেরিতে হওয়ায় বেশ কিছু পিয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া পিয়াজ বোঝাই ট্রাক গুলো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গেলে ৪-৫ দিন সময় লেগে যায়। তাছাড়া বন্দরে দিনরাত শ্রমিকেরা ট্রলার থেকে পিয়াজের বস্তা গুলো ট্রাকে লোড করতেছে। শ্রমিকের তেমন সঙ্কট নেই। তবে নানা অবকাঠামোর অভাব রয়েছে। পিয়াজ আমদানি করতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের লোকসান গুণতে হলে পিয়াজ আমদানি বন্ধের সম্ভাবনা রয়েছে।

এ ব্যাপারে টেকনাফ ট্রাক টান্সপোর্ট কার্যালয়ের ম্যানেজার আবু তাহের বলেন, টেকনাফ টার্মিনালে শতাধিক ট্রাক রয়েছে। প্রতিনিয়ত ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান গুলো স্থল বন্দর থেকে বিভিন্ন পণ্য বোঝাই করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পৌঁছে দিচ্ছে। পণ্য খালাস করে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান গুলো ফিরতে ৪-৫ দিন সময় লেগে যাওয়ার কারণে পরিবহন সঙ্কট দেখা দিয়েছে। তাই ব্যবসায়ীদের ট্রাক সঙ্কটের কারণে হিমশিম খেতে হচ্ছে। মিয়ানমার থেকে প্রচুর পরিমাণ পিয়াজ আমদানি বেড়ে যাওয়ায় পরিবহনে চাপ বেড়ে যায়। এ সঙ্কট নিরসনে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে ট্রাক এনে কিছুটা হলেও চাপ সামাল দেওয়া হচ্ছে।

টেকনাফ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুর বলেন, গত এক সপ্তাহে খালাসে দেরি হওয়ায় আমদানিকৃত প্রায় তিন হাজার পিয়াজের বস্তা নষ্ট হয়ে গেছে। এতে ব্যবসায়ীদের লাখ লাখ টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে। এতে পরিবহন সঙ্কট অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছেন তিনি। ব্যবসায়ীদের লোকসান কমাতে সরকারের কঠোর নজরদারি বাড়ানো দরকার বন্দরে।'

টেকনাফ স্থল বন্দরের ব্যবস্থাপক মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ব্যবসায়ীরা মিয়ানমার থেকে নিম্নমানের পিয়াজ আমদানি করায় সেগুলো পচে যাচ্ছে। সেখান থেকে পিয়াজের ট্রলার এখানে পৌঁছাতে কয়েক দিন সময় লেগে যায়। মূলত বাজারে পিয়াজের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করতে এসব বাহানা করছে ব্যবসায়ীরা। বন্দর কর্তৃপক্ষ সাধ্যমত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন বলে দাবি করেন তিনি।

স্থল বন্দরের শুল্ক কর্মকর্তা আবছার উদ্দিন বলেন, গত দুই দিন ধরে মিয়ানমার থেকে পিয়াজের কোনো ট্রলার আসেনি। কিন্তু দেশে পিয়াজের সঙ্কট মোকাবেলায় ব্যবসায়ীদের আমদানি বৃদ্ধিতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল হাসান বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষের কিছু সমস্যা রয়েছে, সেগুলো দ্রুত সমাধানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেন পিয়াজ নষ্ট হচ্ছে সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, পিয়াজের বাজার স্বাভাবিক রাখতে মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ জালাল উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল টেকনাফ স্থলবন্দর ঘুরে দেখেন এবং ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলেন। 


বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর