১৩ নভেম্বর, ২০১৯ ০৯:৫৯

''দুই পরিবারের সম্মতিতেই সেই উল্লাপাড়া মেয়রের বিয়ে''

আব্দুস সামাদ সায়েম, সিরাজগঞ্জ

''দুই পরিবারের সম্মতিতেই সেই উল্লাপাড়া মেয়রের বিয়ে''

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী গুলশান আরা পারভীন পান্নার হানিমুনের ছবি ভাইরাল হওয়ার পর উল্লাপাড়ায় মুখরোচক আলোচনা শুরু হয়। অনেককে বলতে শোনা গেছে, অন্যের স্ত্রীকে ভাগিয়ে নিয়ে মেয়র বিয়ে করেছেন। প্রকৃতপক্ষে দুই পরিবারের সম্মতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে হয়েছে বলে দুই পরিবারের সদস্যসহ বিয়েতে উপস্থিত সুধীজনরা বলছেন।

প্রমাণ হিসেবে বিয়ের দিনে পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী গুলশান আরা, দুই পরিবারের সদস্যসহ বিয়ের দিনে উপস্থিত রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ছবি প্রকাশ করছেন। মেয়র ও তার স্ত্রী বলছেন, দুই পরিবারের সম্মতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে দুজনের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। তাদের ভাবমুর্তি ক্ষুন্নসহ সামনে পৌরসভা নির্বাচনে মেয়রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের হিসেবে জন্য একটি কুচক্রীমহল এ সংবাদ প্রকাশ করেছেন।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, পৌর মেয়র নজরুল ইসলামের প্রথম স্ত্রী জেসমিন জয়ার সঙ্গে ২০১৭ সালের ১০ নভেম্বর তারিখে তালাকের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। সাবেক স্ত্রী জেসমিন জয়া পরকীয়ায় প্রেমে জড়িয়ে উল্লাপাড়া মোমেনা আলী বিজ্ঞান স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদকে বিয়ে করেন। জেসমিন জয়া সেই শিক্ষকের সাথেই সংসার করছেন। এরপর মেয়র বিপত্নীক হিসেবে ছিলেন।

অন্যদিকে, মেয়রের বর্তমান স্ত্রী গুলশান আরা পান্না শিক্ষিকার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিল। কিন্তু তার স্বামী ব্যবসায়ী রুমান সাইদ রাজন হজ করে আসার পর স্ত্রীকে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে বলেন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করতে থাকে। একপর্যায়ে  ২০১৬ সালের ২৭ জুলাই শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতনের অভিযোগ এনে স্বামী রুমান সাইদ রাজনকে লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করেন শিক্ষক গুলশান আরা পান্না। ২০১৮ সালের ২ এপ্রিল উল্লাপাড়ার বিএনপি নেতা এ্যাডভোকেট শামছুল আলমের উপস্থিতিতে তার বাড়িতে উভয়ের সম্মতিতে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।

এরই মধ্যে বিপত্মীক মেয়রের সাথে গুলশান আরার সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে দুই পরিবারের সিদ্ধান্তে ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট অনাড়ম্ভর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দশ লাখ টাকা দেনমোহরে গুলশান আরা পারভীন পান্নাকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন মেয়র নজরুল ইসলাম। উল্লাপাড়া পৌর শহরের সাবেক সোনালী ব্যাংক ভবনে তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। অনাড়ম্বরও সেই বিয়ের অনুষ্ঠানে উল্লাপাড়ার রাজনৈতিক, সাংবাদিক, প্রশাসন, শিক্ষক, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ইতোমধ্যে মেয়র নজরুলের বিয়ের ছবিগুলো পুনরায় সংবাদকর্মীদের হাতে এসেছে পৌঁছেছে। ছবিতে বিয়ের আসনে মেয়র নজরুল ইসলামের সঙ্গে পান্না ও তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা গোলাপ হোসেন এবং মা জাকিয়া ইয়াসমিনকে দেখা গছে।

মেয়রের স্ত্রী পান্নার মা জাকিয়া ইয়াসমিন জানান, মেয়র আমার মেয়েকে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করার প্রশ্নই ওঠে না। আগের স্বামীর সাথে বিচ্ছেদের পর আনুষ্ঠানিকভাবে উভয় পরিবারের সম্মতি ও উপস্থিতিতে বিয়ে হয়। একটি মহল এমন ডাহা মিথ্যা কথা প্রচার করে আমাদের সম্মান নষ্ট করছে।

মেয়রের স্ত্রী গুলশান আরা পান্না জানান, ভাগিয়ে নিয়ে নয়, দুই পরিবারের সম্মতিতে আমাদের বিয়ে হয়েছে।

উল্লাপাড়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদন জয় জানান, আমি নিজে মেয়রের বিয়েতে উপস্থিত ছিলাম। আমার সাথে উল্লাপাড়ার অনেক গণমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। ফুল দিয়ে তাদেরকে অভিনন্দনও জানিয়েছি।

গুলশান আরা পান্নার সাবেক স্বামী রুমান সাইদ মোবাইলে জানান, তার স্ত্রীকে মেয়র ভাগিয়ে নেয়নি। দুই পরিবারের সম্মতিতেই তাদের বিয়ে হয়েছে। আর পারিবারিক সমস্যার কারণেই গুলশান আরার সাথে আমার বিয়ে বিচ্ছেদ হয়েছে। তিনি দাবি বলেন, আমি হজ করে এসেছি। ইবাদত বন্দিগী নিয়ে থাকি। পান্না সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে থাকায় আমাদের মাঝে চরম সমস্যা দেখা দেয়। পরে উভয় পরিবারের উপস্থিতে এ্যাডভোকে সামছুল আলমের বাসায় বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।

এদিকে মেয়র নজরুল ইসলাম বিষয়টি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন গণমাধ্যমে মনগড়া সংবাদ প্রকাশ করেছে, যা অসত্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তার রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থান নষ্ট করতে একটি মহলের ইন্ধনে এমন সংবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি তাদের দ্বিতীয় বিয়ে সংক্রান্ত সব কাগজপত্র সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন করেন তিনি।

মেয়র নজরুল ইসলাম বলেন, ইসলামিক শরিয়ত মোতাবেক আমার দ্বিতীয় বিয়েতে পান্নার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাপ হোসেন, মা জাকিয়া ইয়াসমিন ও ভাইসহ তার পরিবারের অনেক সদস্যসহ শহরের গণমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

তিনি দাবি করেন, সামনে পৌর নির্বাচন। এই নির্বাচনের আগে আমার নামে এমন অপপ্রচার চালিয়ে কতিপয় ব্যক্তিবর্গ নিজেদের একক অবস্থান নিশ্চিত করতে চায়। আমার স্ত্রী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা। আমরা সুখে-শান্তিতে সংসার করছি।

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর