১৫ নভেম্বর, ২০১৯ ২০:২৫

হাতের তালুতে গরম তেল ঢালা হতো সৌদি ফেরত সেই সুমির

অনলাইন ডেস্ক

হাতের তালুতে গরম তেল ঢালা হতো সৌদি ফেরত সেই সুমির

সংগৃহীত ছবি

সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার হয়ে ফেরা সুমি আক্তার অবশেষে মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। কাজের কথা বললেও পরে গৃহকর্মীর ভিসায় সৌদিতে পাঠানো হয় তাকে। 

শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সুমিকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ মাহমুদ  হাসান। এ সময় সৌদিতে থাকা প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস তার উপর চলা নির্যাতনের বর্ণনা দেন।

সুমি আক্তার বলেন, দুই বছর আগে ঢাকায় যায়। সেখানে আমার হ্যাজবেন্ড নুরুল ইসলামের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। এর তিন/চার মাস পরে আমি তার প্ররোচনায় পড়ে আসলে সৌদি আরবে যায়। এক এজেন্সির মাধ্যমে গৃহকর্মী ভিসায়। সেখানে যাওয়ার পর রিয়াদে প্রথম কর্মস্থলে মালিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন করতো, মারধর করতো, এমনকি হাতের তালুতে গরম তেল ঢেলে দিতো। চিৎকার করলে ঘরের ভেতর আটকে রাখা হতো। এক পর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে ওই মালিক তাকে না জানিয়েই সৌদি আরবের ইয়ামেন সীমান্ত এলাকা নাজরানের এক ব্যক্তির কাছে প্রায় ২২ হাজার রিয়ালে বিক্রি করে দেয়। 

তিনি জানান, ওই মালিকও একইভাবে তাকে শারীরিক ও মানুসিকভাবে নির্যাতন শুরু করে। উদ্ধার হওয়ার আগে ১৫ দিন ঘরের মধ্যে আটকে রাখা হয়েছিল। ঠিকমতো খাবার দেয়া হয়নি। নিজের ফোনটিও তারা নিয়ে যায়। এক সময় খুব কান্না করে স্বামীর সঙ্গে একটু কথা বলার জন্য ফোনটি চাই। বাড়ির মালিক তাকে ফোনটি দিলে বাথরুমে গিয়ে একটি ভিডিও ধারণ করে সুমি। সেই ভিডিওতে তিনি নিজের নির্যাতনের সব কথা জানান এবং প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেন। ভিডিওটি সঙ্গে সঙ্গে তার স্বামীর কাছে পাঠিয়ে দেন। পরে ওই ভিডিও তার স্বামী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন এবং গণমাধ্যমকর্মীদের অবহিত করেন। বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সুমিকে উদ্ধারের উদ্যোগ নেয়। পুলিশের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে বাংলাদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। সৌদির জেদ্দা কনসুলেটের কর্মকর্তা আব্দুল হক সহযোগিতা করছেন।

সুমি বলেন, আমি যেভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছি তা সবাই ভিডিওর মাধ্যমেই জেনেছেন। আর নতুন করে কিছু বলতে চাচ্ছি না। তবে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা না পেলে উদ্ধার হতে পারতাম না। আমি প্রধানমন্ত্রী ও আমাকে উদ্ধারের জন্য যারা সহযোগিতা করেছেন গণমাধ্যমকর্মীসহ সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

উল্লেখ্য, শুক্রবার সন্ধ্যায় ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মাধ্যমে তাকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে তার বাবা রফিকুল ইসলাম ও মা মল্লিকা বেগমের কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয়। এসময় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহকারী পরিচালক আবু হেনা মোস্তফা কামাল উপস্থিত ছিলেন।

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর