দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় দিশাহারা হয়ে পড়েছে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা। চতুর্থ দফা পানি বাড়ায় এখনো শত শত পরিবার ঘরে ফিরতে পারেনি। অনেকে আবার নতুন করে বাঁধে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। আয় রোজগার না থাকায় বন্যার ক্ষতিগ্রস্ত বসতবাড়ী মেরামত নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে বন্যাকবলিতরা।
ক্ষতিগ্রস্তরা বলছে, বন্যা আমাদের সর্বনাশের মূল। বন্যার কারণেই তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারেনা। দেখা যায়, এক বছর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বসতবাড়ীর মেরামত করতে সুদ করে টাকা ধার নিতে হয়। বন্যার পর শ্রম বিক্রি করে সেই টাকা শোধ হতে না হতেই পরের বছর বন্যায় আবারো ক্ষতির শিকার হতে হয়।
এ কারণে বন্যা কবলিত নিম্ন আয়ের মানুষ কখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারে না। এ অবস্থায় যদি সরকার থেকে বসতভিটা মেরামতে সহায়তা করতে হবে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো বন্যা পরবর্তীতে খেয়েপড়ে বেঁচে থাকতে পারতো। চলতি বছরের বন্যায় প্রায় শত শত বসতবাড়ী দুইমাস যাবত পানির নীচে তলিয়ে রয়েছে।
এতে বসতভিটার বেড়া, খাম, আসবাবপত্র সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে থাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ছে। ফসল হারিয়ে কৃষকরা দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছে। কর্দমাক্ত বসতবাড়ীতে চলাফেরা করায় হাত-পায়ে ঘা ও চর্মরোগসহ পানিবাহিত রোগ নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার অরক্ষিত অঞ্চলে ভাঙ্গন শুরু হওয়ায় শতশত বসতভিটা ও আবাদি জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
এসব মানুষের ঘর তোলার জায়গা না থাকায় বাঁধে ঝুড়ি তুলে মানবেতর জীবনযাপন করছে। আর তাঁতশিল্পগুলো পানিতে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মেরামতের অর্থ না থাকায় তাঁতীরা ও শ্রমিকরা বেকার জীবনযান শুরু করেছে। সব বন্যা কবলিতদের আয় রোজগার না থাকায় মানবেতরভাবে জীবনযাপন করছে এসব মানুষ।
চরমালসাপাড়া এলাকার রোজিয়া খাতুন জানান, বাড়ীতে নেমে যাবার পর আবার পানি এসেছে। উঠানো বাইরে, স্যাঁতস্যাতে কাদা। বাড়ীর চারপাশে দুষিত ময়লা আবর্জনা দিয়ে ভরে গেছে। এ অবস্থায় চলাফেরা, থাকা ও খাওয়া চরম কষ্ট হয়ে পড়েছে।
প্রতিবন্ধী শুকুর মাহমুদ জানান, কাজকর্ম করতে পারিনা। বন্যায় ঘর নষ্ট হয়ে গেছে। মেরামত করার অর্থ নেই। তাই দুশ্চিন্তায় জীবনযাপন করছি। সরকারিভাবে যে সহায়তা দেয়া হয়েছিল তাও শেষ হয়ে গেছে। কি করবো কিছুই ভেবে পাচ্ছি না।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী এ কে এম শফিকুল ইসলাম জানান, বন্যার পানি কমে বিপদসীমার ৬৪ সে.মি. নীচ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর তিনযাবত আবার ৪৯ সে.মি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১৫ সে.মি নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে বিপদসীমা অতিক্রম করবে কিনা তা এখনো বলা সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে বাংলাদেশ প্রতিদিনে চর মালসাপাড়া এলাকার সাত পরিবার ত্রাণ না পাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছে মর্মে সংবাদটি প্রকাশের পর সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরকার অসীম কুমার ওই সাত পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ত্রাণ সামগ্রী তুলে দিয়েছেন। এতে ওই পরিবার প্রধানমন্ত্রী ও প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন।
বিডি প্রতিদিন/আল আমীন