৬ মে, ২০২১ ২০:৪০

সোনাতলার কর্মকারদের তৈরি হাতুড়-বাটাল এখন ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

সোনাতলার কর্মকারদের তৈরি হাতুড়-বাটাল এখন ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’

কাকডাকা ভোরে টুং টাং আর ধপাধপ শব্দ দিয়ে শুরু হয়। তারপর চলতেই থাকে মধ্যরাত অবধি। শত বছর ধরে এভাবেই চলছে কর্মকারদের কর্মের শব্দ। তাদের শব্দ যত দ্রুত আর বেশি চলে বুঝে নিতে হয় তাদের আয়ের পথ ততটায় প্রসারিত হয়েছে।

বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার গড়চৈতন্যপুর গ্রামের কামারবাড়ির কর্মকারদের মেধা আর শ্রমে তৈরি হাতুড়, বাটাল, আকর, কর্ণি, বাইশলার নামডাক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সোনাতলার নিভৃত পল্লীতে তৈরি পণ্যগুলো ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ নামে বাজারে দেদারছে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রিত আয় দিয়ে চলছে শত শত পরিবার।

বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার গড়চৈতন্যপুর গ্রামের কামারবাড়ির এলাকা ঘুরে জানা যায়, কবে কখন এই এলাকায় কামারবাড়ি গড়ে ওঠে তার সঠিক ইতিহাস কেউ জানে না। কর্মকাররা বলছেন, তারা বংশগতভাবে এই ব্যবসা পেয়েছেন। যুবক কর্মকাররা বলছেন, এই কামারশালায় তাদের দাদুর কাছ থেকে কাজ শিখেছেন তারা।

বর্তমানে কামারপাড়ায় ঢুকলেই দেখা যাবে হাপড়ের ধপাধপ ওঠানামা শব্দ। আগুনের শব্দ। আরও এগিয়ে গেলে চোখে পড়ে গনগনে আগুন থেকে তোলা লোহায় অবিরাম পিটিয়ে আকৃতি দেওয়ার দৃশ্য। আবার কোথাও আকৃতি দেওয়ার পর বাঁকাকে সোজা করতে চলছে হাতুড়ি দিয়ে লোহা পেটানোর কাজ। সারাক্ষণ সেখানে চলছে টুং টাং শব্দ। যুগ যুগ ধরে এই এলাকায় কাজ করছে কর্মকার সম্প্রদায়। এ গ্রামের কামারশালার ইতিহাস প্রায় শত বছরের। কামাররা আগুনে লোহা পুড়ে লোহার যাবতীয় তৈজসপত্র তৈরি করে থাকনে।

আর সাম্প্রতিক সময়ে এখানে তৈরি মানসম্পন্ন হাতুড়, বাটাল, আকর, কর্ণি, বাইশলা দেশের মধ্যে সুনাম কুড়িয়েছে। শতবছর ধরে এই ব্যবসা এখন দেশে পরিচিতি পেয়েছে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ নামে। সারা বাংলাদেশের মানুষ সোনাতলার লৌহজাত এ পণ্যগুলোকে একনামে চেনেন। সোনাতলায় তৈরি লোহার এ পণ্যগুলোই গোটা দেশের চাহিদা মেটাচ্ছে। গড়চৈতন্যপুরের কামারবাড়ি ছাড়াও সোনাতলা উপজেলার কাবিলপুর ও পৌর সদরেও এখন উৎপাদিত হচ্ছে অত্যন্ত চাহিদাসম্পন্ন এ পণ্যগুলো। সোনাতলায় প্রায় ৬৫/৭০ জন কর্মকার সরাসরি এ কাজে যুক্ত। তাদের সাথে শ্রমিক হিসেবে যুক্ত রয়েছেন আরও ৩ শতাধিক শ্রমিক। পরোক্ষভাবে আছেন আরো শতাধিক শ্রমিক। এছাড়াও অনেক মালিক কর্মকার না হয়েও শ্রমিক দিয়ে পরিচালনা করছেন এ ব্যবসা। 

মেইড ইন বাংলাদেশ পণ্যের কারিগর রমানাথ কর্মকার জানান, ‘সোনাতলার হাতুড়, বাটাল, আকর, কর্ণি, বাইশলা গুণগত মানে দেশ সেরা। দেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এখানকার পণ্যগুলোর। কর্মকারদের সরকারি সহায়তা দিলে আরও উৎপাদন করে বিদেশে রফতানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব।’

বগুড়ার সোনাতলা উপজেলা সদরের বাসিন্দা প্রভাষক ইকবাল কবির লেমন জানান, উপজেলার গড়চৈতন্যপুর গ্রামের কামারবাড়িতে তৈরি ‘মেড ইন বাংলাদেশ নামে পণ্য বাজারে চাহিদা সৃষ্টি করেছে। ব্যবহারকারীরা মনে করেন বাংলাদেশের এই পণ্য ঢাকা বা চট্টগ্রামে তৈরি হয়। অথচ এই পণ্য সোনাতলায় তৈরি করার পর তা সুন্দর মোড়ক করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া ও রাজশাহীসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি হয়।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর