চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৫ নং গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের ভোটাল গ্রামের হাফেজ আ. খালেকের জীবন এখন শিকলে বন্দি। ২০০০ সালে আ. খালেকের হাফেজি পড়া শেষ হলেও, শুনানি বাকি ছিল। জমি বিক্রি করে ছেলের চিকিৎসা করালেও, বাবা আ. কুদ্দুস ২০১১ সালে মৃত্যুবরণ করেন। মানসিক ভারসাম্যহীন সন্তানের সুস্থতা দেখার আশা নিয়ে মা শামছুন্নাহার বেঁচে আছেন।
মেঝ ভাই আবু ছিদ্দিক জানান, নিজ প্রচেষ্টায় আ. খালেক পবিত্র কোরআনের ৩০ পারা মুখস্থ করলেও, ৩/৪ মাস পর শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর মধ্যেই সে ঢাকায় গিয়ে শুনানি করবে বলে, দু’দফায় পরিবারের কাছ থেকে ১,৪০০ টাকা ও ট্রাঙ্কে কাপড়-চোপড় এবং আরেক দফায় ১ হাজার টাকা নিয়ে ঢাকায় যায়। তার ১০ দিন পর বাড়ীতে ফিরেই আবল/তাবোল বলতে শুরু করে। যেখানে যা দেখে, সবই তার বলে দাবি করে। তার কয়েকদিন পর থেকে ঘরের আসবাবপত্র ভাংচুর শুরু করে এবং বাড়ি থেকে বের হয়ে এদিক-সেদিক চলে গেলে, বিভিন্ন স্থানে তাকে খুজে আনতে হতো।
সে কখনও ভালো করে খাবার খেতো, আবার কয়েকদিন না খেয়েই থাকতো। ২০০৫ সাল পর্যন্ত তার চিকিৎসা করাতে পারলেও, পরে অর্থাভাবে আর সম্ভব হয়ে উঠে নাই। নিজেদের ঘর ভিটি ছাড়া কোন জমি নাই। অন্যের জমিতে কাজ করে আমরা সংসার চালাই। আ. খালেকের হাফেজি পড়া শেষ হলেও স্বপ্নপূরণ হয়নি আমার বাবা-মার। হাফেজি শেষে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে প্রায় ১৫ বছর শিকলে বন্দি জীবনযাপন করছে। অর্থের অভাবে আমার ভাইয়ের চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গিয়ে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে মা শামসুন্নাহার ছেলের চিকিৎসা করাতে বিত্তবানদের সহযোগিতা চান।
মাদ্রাসার মুহ্তামিম হাফেজ মহসিন মিয়া জানান, আ. খালেক খুব মেধাবী ছাত্র ছিল। বর্তমানে সে শিকলে বন্দি অবস্থায় আছে, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।
ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল গনি বাবুল পাটওয়ারী বলেন, বিষয়টি আমি অবগত ছিলাম না। আপনার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। আমার পক্ষ থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন আ. খালেকের চিকিৎসা-সহায়তার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, খবর পেয়েই বৃষ্টির মধ্যে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে সেই বাড়ীতে যাই। তার প্রতিবন্ধী ভাতার কাজ খুব দ্রুত করা হবে। এমনকি তার বড় ভাইয়ের স্ত্রী সাহিদা বেগম (৩৫) ও ভাতিজা বায়েজিদও (৫) প্রতিবন্ধী। তাদের ভাতা কার্ডও করে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/এএ