আগামী ৩১ জানুয়ারি ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলায় ৬ষ্ঠ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে। ইতোমধ্যেই প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ তৃণমূল নেতাদের সহযোগিতায় উপজেলার ১০ ইউনিয়নেই চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দিয়েছে। তবে ১০ ইউনিয়নের ৯টিতেই রয়েছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। অর্থাৎ ইউপি নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও রয়েছে তাদের সমর্থিত প্রার্থী। এছাড়াও নৌকা ডুবাতে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা!
১নং ছনধরা ইউনিয়ন নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম আজাদ। ওই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে মোট চারজন প্রার্থী হলেও দু'জন তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। তবে মাঠে রয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. আব্দুস সালাম (আনারস)।
২নং রামভদ্রপুর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রোকেয়া পারভীন লাকির বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. দুদু মিয়া। এতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. ছাইফুল ইসলাম (ঘোড়া)। এছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন দুইবারের নির্বাচিত ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান মো. রোকনুজ্জামান (আনারস), মো. ইব্রাহীম রব্বানী (চশমা) ও মো. এস কে পলাশ সরকার (মোটর সাইকেল)।
৩নং ভাইটকান্দি ইউনিয়নে মোট ৬ জন মনোনয়ন দাখিল করলেও দু'জন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ওই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হলেন বর্তমান চেয়ারম্যান শহীদ পরিবারের সন্তান আলাউদ্দিন আহমদ। তার বিরুদ্ধে মাঠেআছেন আওয়ামী লীগ সমর্থক শাহ জাহান কবির (মোটরসাইকেল) এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. নাজমুল ইসলাম রিপন (ঘোড়া)। এছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন মো. মন্নাছ আলী (আনারস)।
৪নং সিংহেশ্বর ইউনিয়নে নৌকা পেয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা মো. শাহা আলী। ওই ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ডা. মো. আব্দুল মোতালিব (ঘোড়া), খান মোহাম্মদ জান্নাতিন তাসলিম (মোটরসাইকেল), মো. আজহারুল ইসলাম (আনারস) ও সাবেক চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম তালুকদার (চশমা)।
৫নং ফুলপুর ইউনিয়নে নৌকা পেয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল কাশেম। তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে মো. রেজাউল হক ফকির রাসেল (আনারস) ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সাইফুল ইসলাম (ঘোড়া)। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম (চশমা), মো. মাদিউর রহমান (মোটরসাইকেল) ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী মো. আলতাব হোসেন (হাতপাখা)।
৬নং পয়ারী ইউনিয়নে নৌকা পেয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল কবির। তার বিরুদ্ধে মাঠে আওয়ামী লীগ নেতা মো. আব্দুল হাকিম সরকার (টেলিফোন)। এছাড়া ওই ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান মো. মফিজুল ইসলাম (আনারস), সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন (চশমা), সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর হোছাইন (ঘোড়া), মো. শাহিনুর ইসলাম শাহিন (মোটরসাইকেল) ও হাবিবুর রহমান (অটোরিক্সা)।
৭নং রহিমগঞ্জ ইউনিয়নে নৌকা পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আবু ছাইদ সরকার। তার বিরুদ্ধে লড়ছেন আওয়ামী লীগ নেতা মো. একরাম হোসেন চৌধুরী (ঘোড়া)। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল আজিজ ফকির (আনারস) ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান মো. শামছুল আলম খান (হাতপাখা) নিয়ে মাঠে রয়েছেন।
৮নং রূপসী ইউনিয়নে নৌকা পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত শাহ কুতুব চৌধুরীর বড়ভাই এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাবেক চেয়ারম্যান শাহ সুলতান চৌধুরী। তার বিরুদ্ধে মাঠে আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. আমির উদ্দিন তালুকদার (টেবিল ফ্যান)। এছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন মো. আবুল কালাম আজাদ (ঘোড়া), মো. ফজলুল করিম (চশমা), মো. মোস্তাফিজুর রহমান ফকির (মোটরসাইকেল), সাইফুল ইসলাম শাজাহান (অটোরিক্সা) ও সাবেক চেয়ারম্যান শাকিল আহাম্মেদ (আনারস)।
৯নং বালিয়া ইউনিয়নে নৌকা পেয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা দেলোআর মোজাহীদ। নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমান তালুকদার (চশমা)। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মো. শরীফুল ইসলাম (হাতপাখা) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মোহাম্মদ নুরুউল্লাহ পাঠান (আনারস) ও সোহেল আকন্দ (ঘোড়া)।
আর ১০ নং বওলা ইউনিয়নে নৌকা পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. হারুন অর রশীদ। তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের ৪ বিদ্রোহী মাঠে নেমেছেন। তারা হলেন এসএম খলিলুর রহমান (টেলিফোন), খান মো. হামিদুল্লাহ বিন মিনহাজ (মোটরসাইকেল), মো. গোলাম মাওলা তালুকদার (ঘোড়া) ও মো. ফরিদ মিঞা (চশমা)।
এছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জহুরে আজম (অটোরিক্সা) ও মোহাম্মদ মাহবুবে আলম (আনারস) প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে জানতে চাইলে ফুলপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে যারা নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন তাদেরকে দল থেকে ইতোমধ্যে বহিষ্কার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, উপজেলার ১০ ইউনিয়নে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৮৬৩ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ৩১ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ইভিএমে ভোটগ্রহণ চলবে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন