মাঘ মাসের শেষের দিকে হঠাৎ বৃষ্টিতে বগুড়ায় আলুর আবাদে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে করে কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। বৃহস্পতিবার ভোররাত থেকে শুক্রবার রাত পর্যন্ত বৃষ্টিতে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। ফলে সকাল থেকেই কৃষকরা আলু ক্ষেতে বৃষ্টির জমে যাওয়া পানি নানা উপায়ে সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করছেন।
তবে কৃষি অধিদফতর বলছে, জমি থেকে দ্রুত পানি নিষ্কাশন করা হলে বড় ধরনের ক্ষতির কবল থেকে রক্ষা পাবেন চাষিরা। তবে বৃষ্টি যদি আরও ২-১ দিন অব্যাহত থাকে তবে ক্ষেতের আলুতে পচন ধরতে পারে বলে জানালেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক এনামুল হক।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বগুড়ায় এ বছর ৫৮ হাজার ৬শ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে উৎপাদন ধরা হয়েছে ১১ লাখ ৮৭ হাজার টন। কিন্তু হঠাৎ মধ্য মাঘে বৃষ্টিপাতে অধিকাংশ আলু ক্ষেতে পানি জমে যায়। জমে থাকা পানি অপসারণ করা না গেলে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন আলু চাষিরা। অসময়ে হঠাৎ বৃষ্টিপাতের কারণে কৃষকের আলু রক্ষায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।
জেলা আবহাওয়া অফিসের পরিসংখ্যান মতে বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার রাত পর্যন্ত বগুড়ায় ৩১ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ আলুর জমিতে বৃষ্টির পানি জমে আছে। আটকে থাকা পানি সরাতে জমির আল কেটে, বালতি বা বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে জমির পানি সেচের কাজ করছেন কৃষকরা।
শিবগঞ্জ উপজেলার মেদিনীপুর পন্নাতপুর এলাকার আলু চাষি লিয়াকত আলী জানান, তার ৫ বিঘা জমিতে চাষ করা আলু পানিতে তলিয়ে গেছে। জমি থেকে পানি নিষ্কাশনের কোনো উপায় নেই। পরিবার নিয়ে এবার হয়ত পথে বসতে হবে।
উপজেলার আলীগ্রামের আলু চাষি মাফিজুল বলেন, ‘আমি ৭৩ শতক জমিতে আলু চাষ করেছি, মাঘের বৃষ্টিতে আমার আলু ক্ষেত তলিয়ে গেছে। আলুর গাছ পঁচে গেছে। জানি না ভাগ্যে এবার কী জুটবে!’
শিবগঞ্জ দহিলা গ্রামের কৃষক সজিব জানান, সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি, ভালো ফলন হয়েছিল। এক সপ্তাহের মধ্যেই আলু তোলা হত। কিন্তু বৃষ্টির কারণে আগেই তুলতে হচ্ছে আলু। জমিতে খরচ হয়েছিল ৬৫ হাজার টাকা, ৩০ হাজার টাকার আলু বিক্রি করতে পারব কি না সন্দেহ আছে।
জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মুজাহিদ সরকার বলেন, এক দিনের বৃষ্টিতে এলাকার অনেক জমিতে পানি বেঁধেছে। জমির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করলে ক্ষতির আশঙ্কা কিছুটা কম হবে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কৃষকের আলুর জমির পানি নিষ্কাশন এবং আলু তোলার ব্যবস্থা করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত আলু চাষিদের তালিকা তৈরি করে সরকারি সহযোগিতার জন্য চেষ্টা করা হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচলক এনামুল হক জানান, এখন পর্যন্ত জেলায় ২৬ শতাংশ আলু উত্তোলন করা হয়েছে। আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে আলু হিমাগারে রাখার পরিপুষ্ট হয়ে উঠবে।
তিনি বলেন, আলুর জমি থেকে দ্রুত পানি বের করে দেওয়ার জন্য আলুচাষিদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জমে থাকা পানি দ্রুত অপসারণ করলে আলুর ক্ষতি হবে না। তবে জমিতে পানি জমে থাকলে আলুর ক্ষতি হবে। এ ছাড়া যাদের জমির বয়স হয়েছে তাদের আলু তোলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এখন রোদ উঠলে এই ফসল রক্ষা করতে পারবে কৃষক।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ