কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পদ্মা নদীর বিস্তীর্ণ চরে নানা জাতের ফসল আবাদ হচ্ছে। যত দূর চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। দেখে মনে হবে এ যেন সবুজ ফসলের হাতছানি। এতে চর অঞ্চলের কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ঘটছে। এই চিত্র এখন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারি ইউনিয়নের।
এই ইউনিয়নের মানুষের স্বপ্ন এখন রবি ফসলকে ঘিরে। এ বছর চরের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে আবাদ হচ্ছে নানা জাতের রবি ফসল। বিস্তীর্ণ অঞ্চলে আবাদ করা এসব রবি ফসলকে ঘরে স্বপ্ন বুনছে এখানকার মানুষ। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ায় ফসল ঘরে তোলা ও বাজারজাত করনে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় চরাঞ্চলের কৃষকদের।
উপজেলার দুটি ইউনিয়ন রামকৃষ্ণপুর আর চিলমারি। ভারত সীমান্ত ঘেঁষা দুটি ইউনিয়ন মূলত পদ্ম নদী দ্বারা বেষ্টিত। বর্ষা ও আর নদী ভাঙ্গনের সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হয় এখানকার মানুষজনকে। এখানে জীবন মানেই এক অন্য রকম সংগ্রাম। তবে শীত মৌসুম চরবাসীর জন্য এক অন্য রকম আনন্দের। বর্ষার পানি সরে গিয়ে জেগে ওঠা পলি মাটির বিস্তীর্ণ চরে যে ফসলই আবাদ করা হয়, তাই তরতর করে বেড়ে ওঠে।
এ যেন চরে এক আশার আলো। দুটি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ চরজুড়ে এখন সবুজের সমারোহ। গম, পেঁয়াজ, রসুন, সরিষা, কালো জিরা, লাউ, সিম, ধনিয়াসহ নানা ফসল আবাদ করে রঙিন স্বপ্ন বুনছে চরের শত শত মানুষ। অন্যান্য বারের তুলনায় এবার ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। তাই এসব ফসলকে ঘিরে চরবাসীর এখন নানা স্বপ্ন।
চরবাসীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি এখানে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাওয়ায় জীবনযাত্রা অনেকটায় বদলে গেছে। নদী ভাঙন রোধ, সড়ক আর কয়েকটি ব্রিজ হলেই বদলে যাবে অবহেলিত এই দুটি ইউনিয়নের চিত্র। কথা হয় রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজ মন্ডলের সাথে। তিনি জানান, চরে সম্প্রতি বিদ্যুতের ব্যবস্থা হলেও সড়ক ব্যবস্থার বেহাল দশা, অনেক স্থানে কোনো সেতু নেই। বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হয়। সড়ক আর ব্রিজ হলে চরের জীবন-যাত্রার মান বাড়ার পাশাপাশি বিস্তীর্ণ চর এলাকায় উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ রবি ফসল বাজারজাত করা সহজতর হবে। যা এই এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এক বিশেষ অবদান রাখবে।
কুষ্টিয়া খামারবাড়ির অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (ফসল) বিষ্ণু পদ সাহা জানান, এবার দৌলতপুর উপজেলার দুটি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ পদ্মা নদীর চরে ব্যাপক রবি ফসলের আবাদ হয়েছে। এবার রবি মৌসুম ঘিরে এই দুই ইউনিয়নে কয়েক’শ কোটি টাকার ফসল উৎপাদন হচ্ছে। সরকারিভাবে চরের রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া গেলে এক রবি ফসল উৎপাদন করেই এখানকার মানুষ জেলার অর্থনৈতিক চাকাকে আরও অনেক দূরে নিয়ে যেতে পারে।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর