‘আত্তি (হাতি) আওনের পর থাইকা রাইত জাইগা খেত পাহারা দেই। আমন ধানও পাইছি না, সব ধান খাইয়া ফালাইছে, অহনা বোর ধানও যদি না পাই তাইলে মইরা যাওয়াই ভালো।’ কষ্ট নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন, শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের পানিহাটা গ্রামের বাসিন্দা বিজার কুবি।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার পর হাতির দল নেমে আসে পাহাড় থেকে, তাণ্ডব চালায় ফসলি জমিতে। ফসল খেয়ে ও পা দিয়ে পিষে নষ্ট করে ফেলছে। এতে উঠতি ফসল হারিয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন ওই এলাকার কৃষকরা। এ অবস্থায় ঢাকঢোল বাজিয়ে ও আগুন জ্বালিয়ে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন এলাকাবাসী।
আজ শুক্রবার ওই এলাকায় গিয়ে জানা যায়, গত দুই সপ্তাহ ধরে বন্য হাতির একটি দল অবস্থান করছে ভারতীয় মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তঘেষা দলদামা-জমটিলার পাহাড়ি অঞ্চলে। হাতির ওই দলটি প্রায় প্রতিদিন উপজেলার পানিহাটা এলাকার মারং গোঁফ ও তালতলা দিয়ে নেমে আসছে ফসলের জমিতে। পানিহাটা মৌজার বোরো আবাদ নষ্ট করছে এই হাতির পাল। কয়েক দিনের অব্যাহত হাতির আক্রমণে ৬ জন কৃষকের প্রায় ৫ একর জমির বোরো ধানক্ষেত নষ্ট হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, প্রতি মৌসুমে বন্য হাতির এ দলটি আমনের বীজতলা, ধান ক্ষেত, বোরো আবাদ এমনকি গাছের কাঁঠাল পর্যন্ত খেয়ে সাবাড় করে ফেলে। খাদ্যের সন্ধানে অভুক্ত হাতিগুলো লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। হাতির তাণ্ডবে অনেক সময় নির্ঘুম রাতও কাটাতে হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক হিলসন ডিও, জয়নাল আবদীন, মোতালেব হোসেন ও হযরত আলী জানান, প্রতিবছর বন্যহাতিগুলো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করছে। তারা বন্যহাতির আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে সরকারের সহযোগিতা চান।
পানিহাটা এলাকার এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের সদস্য বিজার কুবি জানান, রাত জেগে পাহারা দিয়েও রক্ষা হচ্ছে না। বছরের পর বছর ধরে বন্য হাতির তাণ্ডবে পাহাড়ি মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। ফেকামারি এলাকায় ৬৫ টি পরিবার বসবাস করে অথচ এখানে মাত্র একটি জগ লাইট । তিনি বলেন, ‘আমরাই আত্তির লগে বেশি সংগ্রাম করছি। তাই এখানে আরা লাইট দিলে ভালো হয়।’
ময়মনসিংহ বন বিভাগের মধুটিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল করিম বলেন, ‘কয়েকদিন থেকে ৪০-৪৫টি বন্য হাতির দল সন্ধ্যার পর পর কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে ক্ষেতে নেমে পড়ে ফসলি জমি পা দিয়ে নষ্ট করে ফেলেছে। আমি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের নিয়ম মেনে ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করতে বলেছি।’
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল