তরুণ উদ্যোক্তা ও কৃষকদের ঋণপ্রাপ্তির সহজীকরণে জেলা প্রশাসন উদ্যোগে নরসিংদী জেলার সকল সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক, বিসিক ও নাসিবের অংশগ্রহণে বুধবার সকাল ৯টা থেকে জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে দিনব্যাপী কৃষি ঋণ ও এসএমই মেলা ২০২২ এর আয়োজন করা হয়েছে। মেলার শুভ উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খান।
জানা যায়, নরসিংদী জেলা কৃষি ও শিল্প সমৃদ্ধ জেলা। এ জেলার ৮৫ হাজার ৭১৯ হেক্টর চাষাবাদযোগ্য জমিতে উৎপাদিত সবজি ও অন্যান্য কৃষি পণ্য দেশের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানী করা হয়। এ জেলার চরাঞ্চলের পলি মিশ্রিত উর্বর মাটি এ জেলার উৎপাদিত ফসলকে আরোও বৈচিত্রতা প্রদান করেছে। এছাড়াও নরসিংদী জেলার বাবুরহাট বাজার দেশের কাপড়ের চাহিদার প্রায় ৭০ ভাগ পূরণ করে।
এ জেলার ভৌগোলিক পরিবেশ, আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থা, শ্রমিকপ্রাপ্তির সহজলভ্যতা কৃষি ও অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও তরুণ উদ্যোক্তা সৃষ্টির পথকে আরো সুগম করছে। নরসিংদী জেলার কৃষক সম্প্রদায় ও তরুণ সমাজের একটি বৃহৎ অংশ আত্মনির্ভরশীল হওয়ার প্রত্যয়ে নিজস্ব উদ্যোগে কৃষিসহ ব্যবসা বা অন্যান্য উৎপাদনশীল খাতের সাথে সম্পৃক্ত হতে ইচ্ছুক। কিন্তু কৃষক ও তরুণ উদ্যোক্তাগণ শুরুতেই প্রয়োজনীয় অর্থের সংকটে উদ্যম হারিয়ে ফেলছেন যার ফলশ্রুতিতে মূলধন সংগ্রহের জন্য স্থানীয় দাদন ব্যবসায়ীদের নিকট হতে উচ্চ সুদে ঋণ গ্রহণ করে এতে করে তরুণ উদ্যোক্তা ও কৃষকগণ কোন কোন ক্ষেত্রে ঋণের দুষ্টু চক্রে আবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাই কৃষক ও উদ্যোক্তাদের কৃষি ঋণপ্রাপ্তি সহজীকরণ এবং সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদানের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন উদ্যোগে দিনব্যাপী কৃষি ঋণ ও এসএমই মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
পাচঁদোনা এলাকার কৃষক জমির মিয়া বলেন, এখানে কাগজ পত্রের কোন ঝামেলা নাই। খুবই সহজে ঋণ পাওয়া যায়। আমি চাষাবাদ করার জন্য ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি।
হাসান নামে এক উদ্যোক্তা বলেন, আমি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মাধ্যমে ৩ মাসের কৃষি কাজের কোর্স করেছি। এখন মেলায় এসেছি। বিভিন্ন ব্যাংকের প্রতিনিধির সাথে কথা বলতেছি। যাদের ঋণ সহজতর হবে তাদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে আমি কাজ শুরু করবো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক ফরিদুল ইসলাম খান বলেন, কৃষি ঋণ এলাকার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে দেয়া হয়। তারা যাতে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সহজে তাদের চাষাবাদ করতে পারে। কৃষি ঋণের সুদের পরিমাণ ও অন্যান্য ঋণের তুলনায় খুবই কম। আমরা কৃষি ঋণের প্রক্রিয়া কৃষকের জন্য সহজ ও বোধগম্য করার জন্য কাজ করছি।
কৃষক ও উদ্যোক্তাগণকে দেশের অর্থনীতির মূল কারিগর হিসেবে অভিহিত করে জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খান বলেন, কৃষকদের ঋণের প্রয়োজন হলেও তাদের ঋণ সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকার কারণে তারা মহাজনদের কাছ থেকে উচ্চ সুদে দাদন নিয়ে চাষাবাদ করে। এই মেলায় ঋণ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ ও ঋণ গ্রহীতাগণের মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে ঋণপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিদ্যমান প্রক্রিয়াগত সমস্যাসমূহের সমাধান এবং ঋণ প্রাপ্তি সহজতর হবে ।
মেলায় বিভিন্ন উপজেলা থেকে ৬০০ জন কৃষক ও ৫০ জন তরুণ উদ্যোক্তাসহ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের মালিক অংশগ্রহণ করেন। এসময় ১৫ জন ঋণগ্রহীতার মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে ২৮ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়।
বিডি প্রতিদিন/এএ