চলতি বছর বন্যায় কুড়িগ্রামের বেশ কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়।ফলে অনেক কৃষকের আমন ধানের মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হয়। কিন্তু এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে উঁচু জমিতে তারা আগাম আমন ধান রোপন করেন। চলতি মৌসুমে আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরা বেশ খুশি।তাই গত বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সোনালী ফসল ঘরে তুলতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক-কৃষাণীরা। ধান কাটতে বর্তমানে দেখা দিয়েছে পর্যাপ্ত শ্রমিকের অভাব। ফলে কৃষকের অধিকাংশ ধান জমিতেই পড়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। তাছাড়া বাজারে ধানের ন্যায্য দাম নিয়েও রয়েছে কৃষকদের শঙ্কা।
সরেজমিনে জানা যায়, জেলার অনেক নিম্নাঞ্চলে এ বছর আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। পরবর্তীতে আগাম লাগানো আমনের বাম্পার ফলন হলে কৃষকদের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। জেলার সদর উপজেলা, রাজারহাট, উলিপুর, রৌমারী, রাজিবপুর, নাগেশ্বরী ও ফুলবাড়ি উপজেলার অনেক জমিতে এবছর আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। অধিকাংশ জমির ধান ইতোমধ্যেই পাকতে শুরু করায় গত এক সপ্তাহ ধরে তা কাটতে ব্যস্ত সময় পার করছেন এসব অঞ্চলের কৃষক। তবে চলতি মৌসুমে ফলন ভালো হলেও বাজারে ধানের ন্যায্য দাম পাবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন অনেকেই।
সদর উপজেলার মোগলবাসা এলাকার কৃষক বকতার আলী জানান, এবার জমির আমন ধান খুব ভালো হইছে। গত কয়েকদিন ধরে কাটতাছি।কিন্তু খরচ করে যদি ধানের দাম না পাই তাইলে পোষাবেনা। অন্যদিকে, জমিতে কাজ করা শ্রমিক সংকট নিয়ে কৃষক মাহবুব মিয়া জানান, অনেক শ্রমিক কাজ করতে নারাজ। বেশি দাম দিলে তাদের কাজে আনা যায়। ফলে পাকা ধান জমিতেই রাখতে হচ্ছে। সদরের কাঁঠালবাড়ী এলাকার শ্রমিক মফিজল উদ্দিন জানায়, আমরা আগে কম মজুরিতে জমির ধান কাটতে পারতাম। কিন্তু এবার যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে তাতে কম রেটে কাজ করা পোষায়না। গিরস্তরাও মজুরি দিতে চাননা। তবে এ বছর বাজারে ধানের দাম বিগত বছরের চেয়ে ভালো বলে দাবি করে জেলা কৃষি বিভাগ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকরা বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে প্রত্যাশা কৃষি বিভাগের। জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, কুড়িগ্রামে চলতি বছর ১ লাখ ১৮ হাজার আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ১ লাখ ২০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে বলে জানা যায়। শ্রমিকদের অধিক মজুরির কারণে আমন ধান চাষ করতে জমি বর্গাও দিয়েছেন অনেক কৃষক বলে জানা যায়। কীটনাশক এবং শ্রমিকদের মজুরি দিয়ে বর্গা চাষীরা লাভের মুখ দেখবেন না বলে দাবি অনেকের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকা এবং কৃষকরা মাঠে ভালো পরিশ্রম করায় এবছর জেলার সবকটি উপজেলায় আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ধানের দাম যথেষ্ঠ ভালো এবং তারা লাভবান হবেন বলেও আমি মনে করি।
বিডি প্রতিদিন/এএ