৪ জুন, ২০২৩ ১৪:৫০

বগুড়ায় সড়কে ফলের ব্যবসা, যানজটে লাখো মানুষ

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ায় সড়কে ফলের ব্যবসা, যানজটে লাখো মানুষ

বগুড়ায় রেলস্টেশন সড়ক দখল করে চলছে মৌসুমী ফলের ব্যবসা

ব্যস্ততম শহর বগুড়ায় এমনিতেই যানজট থামছে না। তার উপর আবার চলাচলের সড়ক দখল করে প্রতিদিন চলে ফলের পাইকারি ব্যবসা। যার ফলে বগুড়া শহরের অন্যতম রেলস্টেশন সড়কে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। এই সড়কে মৌসুমী ফলের আড়ত এবং সিএনজি, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার স্ট্যান্ড গড়ে ওঠায় দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে লাখো মানুষের। একই সাথে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা পড়ছেন বিপাকে।

জানা যায়, বগুড়া শহরের রেলস্টশন সড়কে প্রতিনিয়ত যানজট লেগেই থাকে। এই সড়কে রয়েছে শতাধিকেরও বেশি পাইকারি ফলের আড়ত। প্রতিদিন সকালে এখানে ফল কেনা-বেচা হয়ে থাকে। চলাচলের রাস্তার অর্ধেক দখল করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। ফলে চলাচলকারী হাজার হাজার শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। মৌসুমী ফলের আড়ত শহরের তিনমাথা এলাকায় স্থানান্তর করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও নিরাপত্তার অভাবে সেখানে কেউ যাচ্ছে না।

ফল ব্যবসায়ীদের মধ্যে দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের কারণে স্টেশন সড়ক থেকে মৌসুমী ফলের আড়ত ব্যবসায়ীরা অন্যত্র যাচ্ছে না।

এটি বগুড়ার জনবহুল সড়ক। এই সড়কেই রয়েছে বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী সরকারি আজিজুল হক কলেজ, করতোয়া মাল্টিমিডিয়া স্কুল ও কলেজ, বগুড়া রেল স্টেশন, বগুড়া প্রেসক্লাবসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীসহ প্রতিদিন বিভিন্ন অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারী এবং সাধারণ মানুষ চলাচল করে থাকে।

গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর বগুড়া ফল ব্যবসায়ী সমিতি সভা করে শহরের তিনমাথা রেল গেটে এই আড়ত সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেয়। সে কথা অনুযায়ী চলতি বছরের ১১ মার্চ এই ফলের আড়ত সরিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু কয়েকদিন থাকার পরে এসব ব্যবসায়ী আগের জায়গায় চলে আসে। মৌসুমী ফলের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, শহরের তিনমাথায় ব্যক্তি মালিকানায় যে জায়গার ব্যবস্থা করা হয়েছে, তাতে তাদের স্থান সংকুলান হচ্ছে না। তাছাড়া নিরাপত্তার কারণে তারা চলে এসেছে।

ফল ব্যবসায়ী সমিতির মধ্যে দুটি পক্ষ রয়েছে। একটি পক্ষ চাচ্ছে ফলের আড়ত শহরের মধ্যেই থাকুক। আর অপর পক্ষ চাইছে আড়তটি তিনমাথা রেল গেটে চলে যাক।

এই সড়কে চলাচলকারী আমজাদ হোসেন জানান, বিশেষ করে শহরের সাতমাথা থেকে বগুড়া রেল স্টেশন পর্যন্ত শতাধিক সিএনজি সড়কের মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকে যাত্রী ওঠানামা করে। শতাধিকেরও বেশি মৌসুমী ফলের আড়ত রয়েছে। আড়তদারদের নিজস্ব দোকান থাকলেও মৌসুমী ফলের খামারিরা এসব ফল নিয়ে রাস্তায় বসে পড়েন। ভোর পাঁচটা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ফল ব্যবসায়ীদের কারণে এই সড়কে চলাচল কঠিন হয়ে পড়ে। তার সাথে সিএনজি অটোরিকশা আরও যানজট বাড়িয়ে দিচ্ছে। আমরা সাধারণ জনগণ প্রতিদিন দীর্ঘ যানজটে পড়তে হয়ে। এতে করে একদিকে যেমন সময় অধিক সময় অপচয় হচ্ছে। অন্যদিকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এই সব সমস্যা সমাধানে পৌরসভাহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। বগুড়ার সাধারণ জনগণ মৌসুমী ফলের আড়ত সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানান।

বগুড়া ফল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা জানান, মৌসুমী ফলের আড়তের কারণে যে যানজট হচ্ছে, এই সময়টা বেশিক্ষণ নয়। সবচেয়ে বেশি যানজটের সৃষ্টি করছে সিএনজি-অটোরিকশাগুলো। তাছাড়া সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই আড়ত বাইরে নেওয়ার কথা থাকলেও জায়গা কম ও নিরাপত্তার অভাবে সেখান থেকে চলে আসা হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে গত ৩১ মে প্রশাসনের সাথে বৈঠক হয়েছে। সেই বৈঠকে আমরা বলেছি রেলের জায়গায় তৈরি করা ঘরে তাদের আড়তের দোকান দেওয়ার জন্য।

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) হেলেনা আকতার জানান, বিষয়টি নিয়ে ফল ব্যবসায়ীদের সাথে কয়েকবার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু মানুষের দুর্ভোগের বিষয়টি তারা আমলে নিচ্ছে না। তারপরেও তাদেরও সময় দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কোনো ব্যবস্থা না নিলে পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বগুড়া পৌর মেয়র রেজাউল করিম বাদশা জানান, পৌর এলাকায় রাস্তার উপর ব্যবসা করতে দেয়া হবে না। তাদের বেশ কয়েকবার বলা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর