১৫ জানুয়ারি, ২০২৪ ১৮:১৭

আগৈলঝাড়ায় ঐতিহ্যবাহী মার্বেল মেলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

আগৈলঝাড়ায় ঐতিহ্যবাহী মার্বেল মেলা

বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার প্রত্যন্ত রামানন্দের আঁক গ্রামে ঐতিহ্যবাহী মার্বেল মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিশু থেকে বয়স্ক সব বয়সের মানুষ আজ সোমবার মেতে উঠেছিলেন মার্বেল খেলায়। এছাড়া পার্শ্ববর্তী কোটালীপাড়া, ডাসার, মাদারীপুর, কালকিনি, গৌরনদী, উজিরপুর, বানারীপাড়া, বাকেরগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন বয়সের হাজারো নারী পুরুষ এই মার্বেল মেলায় অংশগ্রহণ করেন। প্রতিবছর পৌষ সংক্রান্তিতে এই গ্রামে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে মার্বেল মেলা। 

মেলা কমিটির সভাপতি রাম কৃষ্ণ হালদার জানান, রামানন্দের আঁক গ্রামে ২৪৩ বছর আগে আউলিয়া মা সোনাই চাঁদের ৬ বছর বয়সে বিয়ে হয়। ৭ বছর বয়সে স্বামী মারা গেলে নিঃসন্তান সোনাই চাঁদ শ্বশুর বাড়িতে একটি নিমগাছের তলায় শিবের আরাধনা ও পূজা-অর্চনা শুরু করেন। ক্রমশ তার অলৌকিত্ব ছড়িয়ে পড়লে ওই এলাকায় বার্ষিক পূজার আয়োজন করা হয়। মা সোনাই চাঁদ আউলিয়ার জীবদ্দশায় ১৭৮০ সাল থেকে শুরু হয়ে প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তির দিনে নবান্নের অয়োজনের মাধ্যমে মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। পৌষ সংক্রান্তিতে বাস্তপূজা উপলক্ষে ২৪৩ বছর ধরে এই গ্রামে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে মার্বেল মেলা। এ বছর ২৪৪ তম মার্বেল মেলা অনুষ্ঠিত হয়। 

দিনটি ঘিরে রামানন্দের আঁক গ্রামে বিরাজ করে উৎসবের আমেজ। স্থানীয় বাসিন্দারা দূরদূরান্তে তাদের আত্মীয় স্বজনকেও দাওয়াত দিয়েছেন এ উপলক্ষে। মার্বেল মেলায় অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ওই গ্রামের মানুষ বাড়ি ফিরেছে। আশপাশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার মানুষও গতকাল ওই গ্রামে ভিড় করেন মার্বেল খেলতে কিংবা দেখতে। 

প্রতিবছর এই দিনে বৈষ্ণব সেবা, নাম সংকীর্ত্তন, কবিগান শেষে সোয়া মন চালের গুড়ার সঙ্গে সোয়া মন আখের গুড়, ৫০ জোড়া নারকেল ও কলাসহ অন্যান্য উপাদান মিশিয়ে নবান্ন তৈরি করে মেলায় আগত দর্শনার্থীদের প্রসাদ বিতরণ করা হয়। 

মার্বেল খেলার বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা আজাদ রহমান জানান, ওই গ্রামের পূর্ব পুরুষরা মার্বেল খেলার মাধ্যমে মেলার প্রচলন করেছিল। যা এখন ঐতিহ্য হিসেবে অব্যাহত আছে। তাদের উত্তরসূরি হিসেবে নতুন প্রজন্ম প্রাচীন ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। 

বাশাইল গ্রামের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র দিনেশ রায় ও ১০ম শ্রেণির শুভ সমদ্দার জানায়, এই দিনে মার্বেল খেলার জন্য সারা বছর টাকা জমিয়েছেন তারা। 

যশোর থেকে আগত এসএসসি পরীক্ষার্থী সৌমিতা ঘোষ মৌ ও স্থানীয় পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সুমন দাস জানায়, আমরা মার্বেল খেলার জন্য এই দিনটির অপেক্ষায় থাকি। সারা বছর টাকা জমিয়েছি মার্বেল খেলার অপেক্ষায় ছিলেন। অবশেষে আজ  শীতের মধ্যে মার্বেল খেলে খুবই আনন্দ পেয়েছেন। 

তাদের মতো হাজার হাজার নারী, পুরুষ শিশু রামানন্দের আঁক মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মার্বেল খেলায় মেতে ওঠে। রাস্তার ওপর, বাড়ির আঙিনা, অনাবাদী জমি, বাগানসহ যে যেখানে পেরেছেন মার্বেল খেলেছেন। 

মার্বেল মেলা উপলক্ষ্যে রামানন্দের আঁক মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে বাঁশ-বেত শিল্প সামগ্রী, মনিহারী, খেলনা, মিষ্টি, ফলসহ বিভিন্ন ধরনের মালামালের পসরা সাঁজিয়ে বসেন দোকানিরা। 

আগৈলঝাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জহিরুল ইসলাম জানান, মার্বেল খেলাকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত মেলায় আগত খেলা প্রেমীদের নিরাপত্তার জন্য সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুরো এলাকা জুড়ে টহল দিয়েছে পুলিশ। 

এদিকে মার্বেল মেলার কারণে গতকাল রামানন্দের আঁক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছিলো অঘোষিত ছুটি।
 
এ ব্যাপারে রামানন্দের আঁক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক শঙ্কর লাল বিশ্বাস বলেন, মাঠের জায়গা আমাদের স্কুলের না। আমাদের বিদ্যালয়ে ১৬০ জন শিক্ষার্থী ও ৬ জন শিক্ষক। আমরা স্কুল খোলা রেখেছি এবং সকল শিক্ষক উপস্থিত রয়েছি। কিন্তু মেলার কারণে সোমবার কোন ছাত্র-ছাত্রী স্কুলে আসে নাই। 

 

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর