পানি সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে রাঙামাটির কাপ্তাই কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের চারটি ইউনিট। সচল আছে মাত্র একটি ইউনিট, যেখান থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৪০ থেকে ৪৪ মেগাওয়াট। যা জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম জলাধার রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে পানি সংকটের কারণে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে।
সূত্র জানায়, ১৯৬২ সালে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে ও রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলায় নির্মিত হয় ৬৭০.৬ মিটার দীর্ঘ ও ৫৪.৭ মিটার উচ্চতার বাঁধ। এর পাশে ১৬টি জলকপাটসহ ৭৪৫ ফুট দীর্ঘ একটি পানি নির্গমন পথ বা স্পিলওয়ে রয়েছে, যা দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে ৫ লাখ ২৫ হাজার কিউসেক পানি নির্গত হতে পারে। এই বাঁধের মাধ্যমে কৃত্রিম হ্রদের পানিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তর করা হয়।
স্বাভাবিকভাবে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিট থেকে ২৩০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়, যা জাতীয় গ্রিডে যোগ করা হয়ে থাকে। তবে দীর্ঘদিন ধরে হ্রদের তলদেশে পলিমাটি জমে যাওয়ায় এবং ড্রেজিং না হওয়ায় হ্রদের পানির স্তর ক্রমশ কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে হ্রদ প্রায় শুকিয়ে যায়, ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটে। বর্তমানে পাঁচটির জায়গায় চালু আছে মাত্র একটি ইউনিট।
জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাইফুল রহমান বলেন, ‘বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদের পানির পরিমাণ ৮০ এমএসএল (মিন সি লেভেল)। অথচ রুলকার্ভ অনুযায়ী এই সময়ে পানির স্তর থাকা উচিত ছিল ৮২ ফুট। পানি কম থাকায় বাধ্য হয়ে চারটি ইউনিট বন্ধ রাখতে হয়েছে।’
অভিযোগ রয়েছে, কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টির পর থেকে একবারও ড্রেজিং করা হয়নি। ফলে পলিমাটি জমে তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে, সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য ডুবোচর। অপরিকল্পিত বৃক্ষ নিধন ও জুমচাষের ফলে হারিয়ে গেছে পানি শোষণকারী গাছপালা, শুকিয়ে গেছে পাহাড়ি ছড়া-ঝরনাও। ফলে হ্রদে পানির উৎস অনেকটা কমে গেছে এবং অতিরিক্ত পানি সংরক্ষণও সম্ভব হচ্ছে না।
উল্লেখ্য, ১৯৭০ সালে জাইকার এক সমীক্ষায় দেখা যায়, কাপ্তাই হ্রদের পানির সর্বোচ্চ স্তর ছিল ১১৮ ফুট এমএসএল। বর্তমানে তা অনেকটাই কমে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে পানির স্তর স্বাভাবিক রাখতে নিয়মিত ড্রেজিংয়ের কোনো বিকল্প নেই।
বিডি প্রতিদিন/আশিক