উহুদের যুদ্ধে কুরাইশদের সৈন্যসংখ্যা মুসলমানদের তিনগুণ ছিল। কিন্তু বিধর্মীদের সংখ্যাধিক্য যে মুসলমানদের পরাজয়ের কারণ হতে পারে না, তা ইতোমধ্যে বদর যুদ্ধেই প্রমাণিত হয়েছে। তাই উহুদের যুদ্ধে মুসলমানদের পরাজয়ের কারণ অন্যবিধ ছিল। উহুদের যুদ্ধে মুসলমান সৈন্যরা তাদের নেতার আদেশ যথাযথভাবে পালন করেনি। রাসূলুল্লাহর নির্দেশ ছিল, জয় অথবা পরাজয় কোনো অবস্থাতেই মুসলিম তীরন্দাজ বাহিনী যেন গিরিপথ অতিক্রম না করে। কিন্তু বিজয় নিজেদের করায়ত্ত মনে করে মুসলিম বাহিনী উপরিউক্ত আদেশ লঙ্ঘন করায় তাদের মধ্যে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। সে সুযোগে বিপক্ষ দল তাদের আক্রমণ ও নাজেহাল করে। নেতার আদেশ লঙ্ঘন ও শৃঙ্খলার অভাবই ছিল উহুদ যুদ্ধে মুসলমানদের পরাজয়ের প্রধান কারণ। বিজয় অবশ্যম্ভাবী মনে করে মুসলিম বাহিনী বিপুল উৎসাহে সামরিক আদেশ রক্ষার পরিবর্তে শত্রুদের ধন-সম্পদ লুণ্ঠনে লিপ্ত হয়ে পড়ে। কর্তব্যজ্ঞান অপেক্ষা তাদের লুণ্ঠনপ্রীতি প্রবল হয়ে দেখা দেয়। তারা যদি তাদের নিজ নিজ স্থানে দৃঢ় থাকত, তাহলে খালিদ-বিন-ওয়ালিদ পশ্চাৎভাগ হতে মুসলমানদের আক্রমণ করার সুযোগ পেতেন না এবং যুদ্ধের গতি পরিবর্তিত হতো। রণক্ষেত্রে অসময়ের প্রবল বায়ুপ্রবাহ মুসলিম সেনাবাহিনীকে যথেষ্ট বিপর্যস্ত করেছিল। এ বায়ুপ্রবাহের ফলে বিচ্ছিন্ন মুসলিম বাহিনী শত্রু মিত্র শনাক্ত করে সংঘবদ্ধ হতে পারেনি।
মহাবীর খালিদের রণদক্ষতা ও চাতুর্য শত্রুপক্ষের বিজয়কে সম্ভব করেছিল। মুসলিম সেনাদল যখন যুদ্ধক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ স্থান ত্যাগ করে লুটতরাজে ব্যস্ত, ঠিক সেই মুহূর্তে বীরশ্রেষ্ঠ খালিদ-বিন ওয়ালিদ তাদের ওপর মরণপণ আক্রমণ চালান। ফলে মুসলিম সেনাদল ছত্রভঙ্গ হয়ে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন করে।