জাহান্নাম মানেই অভাবনীয়, অবর্ণনীয় ও অচিন্তনীয় শাস্তি। বিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চিন্তা-চেতনার মান উন্নয়ন হয়েছে বটে কিন্তু অনেক মানুষেরই পরকালীন জীবন তথা জাহান্নামের ভয়াবহ আজাবের সম্যক ধারণা নেই। পরকালীন জীবনের অবস্থার সঙ্গে দুনিয়ার কোনো বিষয়ের যেমনি তুলনা হয় না তেমনি জাহান্নামের কঠিন শাস্তি দুনিয়ার শাস্তির সঙ্গে তুলনা করে বুঝানো সম্ভব নয়। জাহান্নাম হচ্ছে কেয়ামত-পরবর্তী অপরাধী বান্দাদের জন্য জ্বলন্ত এক অগ্নিকুণ্ডের নাম। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, তোমরা সেই জাহান্নামকে ভয় কর, যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর, যা কাফেরদের জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। সূরা বাকারা, আয়াত-২৪। জাহান্নামের গভীরতা সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন, যদি তার ওপর থেকে একটি পাথর ছেড়ে দেওয়া হয় তবে তা তলদেশে পৌঁছতে ৭০ বছর সময় লেগে যাবে (তারগিব)। অপর রেওয়াতে বলা হয়েছে, জাহান্নামকে চারটি দেয়াল বেষ্টন করে রেখেছে। প্রতিটি দেয়ালের প্রশস্ততা ৪০ বছরের পথ (তিরমিজি)। জাহান্নামের স্তর বা দরজা সম্পর্কে কোরআনে এরশাদ হয়েছে, তার সাতটি দরজা রয়েছে। প্রত্যেক দরজার জন্য রয়েছে পৃথক পৃথক দল। (সূরা হিজর : আয়াত-৪৪) মুনাফিকদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, নিশ্চয় মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে। (সূরা নিসা :আয়াত ১৪৫) তিরমিজি শরিফের এক বর্ণনায় আছে যে, জাহান্নামকে এক হাজার বছর করে তিনবার প্রজ্বলিত করার পর তার অগ্নিশিখা অত্যধিক কালো ও অন্ধকার রূপ ধারণ করেছে, যা দুনিয়ার আগুনের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি দহন শক্তিসম্পন্ন। রসুল (সা.) বলেছেন, তোমাদের এ আগুন জাহান্নামের আগুনের ৭০ ভাগের একভাগ মাত্র। (বুখারি ও মুসলিম) জাহান্নামের সবচেয়ে ছোট ছোট শাস্তি প্রসঙ্গে রসুলের এরশাদ হচ্ছে, দুটি জুতা হবে আগুনের। ফলে মস্তিষ্ক ফুটন্ত হাঁড়ির ন্যায় টকবক করতে থাকবে। (বুখারি ও মুসলিম) জাহান্নামের এক স্তর সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, হুতামা আল্লাহর অগ্নি যা প্রজ্বলিত করা হয়েছে তা শরীরে লাগার সঙ্গে সঙ্গে হৃৎপিণ্ডে পৌঁছে যাবে। জাহান্নামিদের অগ্নির উচ্চ খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হবে। (সূরা, হুমাযা : আয়াত ৫-৭) জাহান্নাম দূর থেকে জাহান্নামিদের চিনে নেবে আর গ্রাস করার জন্য ক্রোধে ফেটে পড়বে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, যখন দূর থেকে দোজখ তাদের দেখবে তখন তারা তার গর্জন শুনতে পাবে আর যখন শিকলে বেঁধে জাহান্নামের কোনো সংকীর্ণ অন্ধকূপে নিক্ষেপ করা হবে, তখন তারা নিজেদের মৃত্যু কামনা করবে। তাদের বলা হবে, আজ তোমাদের এক মৃত্যু ডেকো না অনেক মৃত্যু ডাকো। (সূরা ফুরকান, আয়াত : ১২-১৪) আরও এরশাদ হয়েছে, ধরো ওকে, অতঃপর তার গলদেশে বেড়ি পরিয়ে দাও। অতঃপর তাকে প্রবেশ করাও জাহান্নামে। আবার ৭০ হাত দীর্ঘ এক শিকল দিয়ে বেঁধে ফেল। সূরা হাক্কা : আয়াত ৩০-৩২ জাহান্নামিদের শুধু শারীরিক শাস্তিই নয় বরং প্রচণ্ড লাঞ্ছনাসহ মানসিক শাস্তিও দেওয়া হবে। তাদের তিরস্কার ছলে বলা হবে তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের কারণে স্থায়ী শাস্তি আস্বাদন কর (সূরা সাজদা : আয়াত ১৪।)
লেখক : প্রাবন্ধিক।