শনিবার, ১১ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা
বায়তুল মোকাররমের খুতবা

ইবাদতের মাস মহিমান্বিত রমজান

মুহাম্মদ মহিববুল্লাহিল বাকী, পেশ ইমাম, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ।

আল্লাহপাকের অশেষ মেহেরবাণীতে আমরা রোজা রেখে সুস্থ শরীরে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পবিত্র জুমার নামাজ আদায়ের জন্য উপস্থিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। এ জন্য শুকরিয়া হিসেবে আমরা সবাই বলি আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহপাক বলেছেন, যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর তাহলে তোমাদের ওপর আমার নেয়ামত, রহমত ও বরকত আরও বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেব। এ মুহূর্তে যদি আমরা কোনো হাসপাতালে যাই তাহলে দেখতে পাব অনেক লোক বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে। এমনকি অপারেশনের জন্য অনেককে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়েছে। অথচ আল্লাহতায়ালা আমাদের সুস্থ অবস্থায় রোজা রাখার তৌফিক দিয়েছেন এবং জুমার নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে আসার সুযোগ দিয়েছেন। এ ছাড়া পবিত্র মাহে রমজানের অফুরন্ত নেয়ামত, রহমত ও বরকত লাভে ধন্য করেছেন। এ জন্য শুকরিয়া হিসেবে আবার বলি আলহামদুলিল্লাহ। মুসলিম উম্মাহর ওপর রোজা ফরজ করার উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন, হে আমার ইমানদার বান্দারা তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করতে পার। খোদাভীরু হতে পার। (সূরা বাকারা : ১৮৩)। অপর এক আয়াতে আল্লাহপাক বলেছেন, রমজান এমন একটি মাস যাতে নাজিল করা হয়েছে পবিত্র কোরআন। যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্য পথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ। আর ন্যায়-অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্যকারী। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাসটি পাবে সে অবশ্যই এ মাসে রোজা রাখবে আর যে লোক অসুস্থ কিংবা সফরে থাকবে সে অন্য সময় তা সম্পন্ন করবে। (সূরা বাকারা : ১৮৫)। প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে, রোজা শুধু তোমাদের ওপরই নয় বরং তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মত তথা হজরত আদম (আ.) থেকে সব নবীর ওপর ফরজ করা হয়েছিল। এ কষ্টকর ইবাদতের উদ্দেশ্য হলো সিয়াম সাধনা বা রোজা পালনের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে তাকওয়া ও আল্লাহভীতি সৃষ্টি হয়। যার ফলে প্রবৃত্তির তাড়না নিয়ন্ত্রণ করে সিয়াম পালনকারী যাবতীয় অন্যায় অপরাধ থেকে বিরত থাকতে সক্ষম হয় এবং আল্লাহতায়ালার নৈকট্য লাভে ধন্য হয়।

অপর আয়াতে মাহে রমজানের গুরুত্বের কথা এভাবে বলা হয়েছে যে, এ মাসেই মানবজাতির হেদায়েত, সত্য ও ন্যায় পথের যাত্রীদের জন্য পথের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সুতরাং যারা এ মাস পাবে তাদের অবশ্যই রোজা পালন করতে হবে। তবে আল্লাহতায়ালা যেহেতু দয়াবান ও পরম করুণাময় তাই বান্দার যাতে কষ্ট না হয় এ জন্য বলেছেন, যদি তোমরা অসুস্থ হও এবং রোজা রাখতে অক্ষম হও এমনকি জরুরি কাজে সফরে থাক তাহলে রোজা ভঙ্গ বৈধ; তবে পরবর্তীতে ওই রোজা আদায় করবে।

এ ছাড়া পবিত্র রমজান মাসে আল্লাহতায়ালা মুসলিম উম্মাহকে এমন একটি পুণ্যময় রাত দান করেছেন যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। এ প্রসঙ্গে আল্লাহপাক বলেছেন— নিশ্চয়ই আমি কোরআন অবতীর্ণ করেছি লাইলাতুল কদর যা মহিমান্বিত রজনীতে, আপনি কি জানেন মহিমান্বিত রজনী কি? মহিমান্বিত রজনী হলো হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম।

এ ছাড়া সিয়াম সাধনার মাধ্যমে স্বাস্থ্যগত বিরাট উপকার সাধিত হয়। পেটের পীড়া, বহুমূত্রসহ অনেক রোগের উপশম হয় যা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে, রোজা পালনের দ্বারা সামাজিকভাবে অনেক উপকার পাওয়া যায়। যেমন ক্ষুধার যে কী কষ্ট এটা রোজাদাররা পূর্ণাঙ্গভাবে উপলব্ধি করতে পারে। ফলে মাহে রমজানে ধনী ব্যক্তিরা দরিদ্রের প্রতি অধিক পরিমাণে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। ফলে দরিদ্ররা পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন।

হাদিসে বর্ণিত আছে নবী করিম (সা.) বলেছেন, রোজা হলো ঢালস্বরূপ। ঢাল দ্বারা মানুষ আত্মরক্ষা করে তেমনি রোজাদার ব্যক্তিও কারও সঙ্গে ঝগড়া ফ্যাসাদে লিপ্ত হয় না। মুখে কটুবাক্য খারাপ কথা উচ্চারণ করে না। যদি কেউ গালি দেয় বা ঝগড়া ফ্যাসাদ করতে উদ্যত হয় তখন রোজাদার বলবে আমি রোজাদার আমি তোমাদের সঙ্গে ঝগড়ায় লিপ্ত হব না। এতে প্রতিপক্ষ অবশ্যই ঝগড়া থেকে বিরত থাকবে।

সিয়াম সাধনার মাধ্যমেই রোজাদার রিপু তথা প্রবৃত্তির তাড়না থেকে মুক্ত হয়ে নিজেকে বিভিন্ন অপরাধ ও অন্যায় থেকে বিরত রাখতে পারে। যেমন অন্যায়ভাবে খুন-খারাবি করা, চুরি ডাকাতি ও ছিনতাই করা, খাদ্যে ভেজাল মিশ্রিত করা, ফলমূলসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিন ও বিষাক্ত কেমিক্যাল মিশিয়ে বিক্রি করা, ঘুষ গ্রহণ করা, অধিক লাভের আশায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা ইত্যাদি— এগুলো অবশ্যই অন্যায় ও গর্হিত কাজ। এগুলো থেকে বিরত থাকাই রোজার তাত্পর্য ও শিক্ষা। পবিত্র মাহে রমজানে ইবাদতের মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনসহ আমাদের যাবতীয় অন্যায় অপরাধ থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুন। আমিন।

সর্বশেষ খবর