সোমবার, ১৩ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা
প্রসঙ্গক্রমে

লক্ষাধিক প্রশিক্ষিত শিবির কর্মী গেল কোথায়?

বখতিয়ার শেখ

সাদ্দাম যুগে ইরাকের সেনাবাহিনীতে রিপাবলিকান গার্ডের সংখ্যা ছিল প্রায় ১০ লাখ। ২০০৩ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনী কর্তৃক ইরাক দখলের পর কতজন সৈন্য অবসরে গিয়েছিল, কতজন সেনাবাহিনীতে রয়ে গিয়েছিল আর কতজন নিখোঁজ হয়েছিল তার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হয়, এর একটি বড় অংশ বিভিন্ন জঙ্গিবাদী দলে অন্তর্ভুক্ত হয়ে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি ক্যাডারভিত্তিক তথা রেজিমেন্টেড দল। বিপ্লবের মাধ্যমে ইসলামী রাজত্ব কায়েম করাই এ দলটির লক্ষ্য। দলটির প্রশিক্ষিত বাহিনী হলো ছাত্রশিবির। অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা মনে করেন, ছাত্রশিবিরের সাথীর সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। এদের ছত্রছায়ায় প্রতিটি এলাকায় রয়েছে কিলিং স্কোয়াড। ছাত্রশিবিরের সাংগঠনিক শক্তির কাছে অন্যান্য ছাত্র সংগঠন যে কত অসহায় তার প্রমাণ আমরা বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংঘর্ষের সময় দেখেছি। বর্তমান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তত্পরতার কারণে তারা ‘উধাও’ অবস্থায় রয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত জঙ্গিবাদীদের হাতে ৪৮ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে মুক্তমনা লেখক, শিক্ষকসহ ভিন্ন ধর্মের ব্যক্তিরাও রয়েছেন। সরকারি মহল থেকে বারবার বলা হচ্ছে, ‘যারা অতীতে পেট্রলবোমা মেরে সরকারকে হঠাতে পারেনি তারাই এখন গুপ্তহত্যার পথ বেছে নিয়েছে’। ৮ জুন প্রধানমন্ত্রী এক সংবাদ সম্মেলনেও অনুরূপ কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরদিন থেকে শুরু হয় দেশব্যাপী সাঁড়াশি অভিযান। কিন্তু সাঁড়াশি অভিযানের মধ্যেই ১০ জুন পাবনার শ্রীশ্রী অনুকূল চন্দ্রের সৎসঙ্গ আশ্রমের সেবায়েত নিত্যরঞ্জন পাণ্ডেকে একই কায়দায় কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এটাকে সরকারের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদীদের প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জই বলা যায়। এমতাবস্থায় সরকার যদি জঙ্গিবাদ দমনে সফল হতে চায় তাহলে বর্তমানে শিবিরের কর্মী সংখ্যা কত, তারা কোথায় কী করছে ইত্যাদি সম্পর্কে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না, যেসব জঙ্গিবাদী সদস্য ইতিমধ্যে ধরা পড়েছে, তাদের সম্পর্কে খোঁজ নিলে দেখা যাবে, তারা নিজ এলাকায় কোনো হত্যাকাণ্ড ঘটায়নি। তারা ঠাণ্ডা মাথায় পার্শ্ববর্তী কিংবা দূরবর্তী এলাকায় হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে নিজ এলাকায় স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে। তাদের সম্পর্কে পাড়া-প্রতিবেশীদের মূল্যায়ন হলো— ‘এরা শান্ত স্বভাবের। নামাজ-রোজার বাইরে কিছু করতে দেখা যায়নি।’ আর্থিক সক্ষমতার কারণে এদের পক্ষে প্রচার-প্রোপাগান্ডা অত্যন্ত শক্তিশালী। তাদের হাতে কোনো হত্যাকাণ্ড ঘটলে তাদের পক্ষের লোকজন ব্যক্তি পর্যায়ে বলে থাকে— ‘লোকটি নিশ্চয়ই ইসলামবিরোধী ছিল। ইসলামবিরোধী লোকদের এভাবেই হত্যা করা উচিত।’ দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আওয়ামী লীগসহ বাম ঘরানার বহু নেতা-কর্মীকেও তাদের এই প্রচারে বিভ্রান্ত হতে দেখা যায়। জঙ্গিবাদের পক্ষে মতামত তৈরিতে কারখানা হিসেবে ভূমিকা পালন করছে ধর্মীয় সভা ও উঠান বৈঠকগুলো। আমাদের দেশটি অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ, পালানোর মতো জঙ্গল ও পাহাড়-পর্বত নেই। জঙ্গিবাদীরা অপকর্ম করে মানুষের মধ্যে মিশে যাচ্ছে। সে জন্য সর্বাগ্রে জনগণকে সচেতন করতে হবে। প্রতিটি উপজেলায় জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ‘সেল’ গঠন করতে হবে।  জঙ্গিবাদীদের ছবি ধারণ ও তাদের কথাবার্তা রেকর্ড করে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কাছে প্রেরণের জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

লেখক :  গবেষক, নবাবপুর রোড, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর