বর্তমানে আমরা যে কোরবানি করছি তা মুসলিম মিল্লাতের আদি পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.) এবং তদীয় পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-এর স্মৃতিজড়িত। আল্লাহ স্বপ্নে ইবরাহিম (আ.)-কে নির্দেশ দেন তিনি যেন তার প্রিয় পুত্রকে কোরবানি দেন। হজরত ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর নির্দেশে পুত্রকে কোরবানি করতে গেলে আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতা দুম্বা নিয়ে হাজির হন ও বলেন, আল্লাহ হজরত ইবরাহিমের (আ.) ত্যাগের ইচ্ছা কবুল করেছেন এবং প্রিয় পুত্রের বদলে দুম্বা কোরবানির নির্দেশ দিয়েছেন।
ইবরাহিম (আ.)-কে গোটা জীবনে অসংখ্য কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়েছে। তার মধ্যে এটা ছিল আরও কঠিন পরীক্ষা। জীবন সায়াহ্নের এ পরীক্ষায় তিনি দুর্বলতার পরিচয় দিতে পারতেন। কিন্তু এখানেও তিনি ধৈর্যের সঙ্গে আল্লাহর আদেশ পালনে অটল ছিলেন। ফেরেশতা এসে কোরবানির জন্য দুম্বা দেওয়া থেকে বোঝা যায়, পৃথিবীতে কোনো সময়েই মানুষকে কোরবানি দেওয়া যাবে না। আল্লাহ রক্তপাতে আনন্দ পান না বরং মানুষের সততা, খোদাভীতি প্রশ্নাতিত আনুগত্যেই সন্তুষ্ট হন। এ জন্যই হজে ইবরাহিম (আ.)-এর স্মরণে হাজীরা কোরবানি করেন। হজের সময় সাফা-মারওয়ার ছোটাছুটি করে নির্বাসিতা হাজেরা (রা.)-এর কষ্টের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করা হয়। শিশু ইসমাইল (আ.)-এর জন্য পানির সন্ধানে হাজেরা (রা.) সাফা মারওয়ার মাঝে সাতবার ছোটাছুটি করে ব্যর্থ হন। অতঃপর সন্তানের অবস্থা দেখতে এসে দেখেন যে, তার পায়ের গোড়ালির আঘাতে মাটি ফেটে পানি বের হচ্ছে। সাফা মারওয়ায় ছোটাছুটির মাধ্যমে মুসলমানরা আরও কয়েকটি বিষয় মনে করে থাকেন। যথা ১. যখন হাজেরা (রা.) জনমানবশূন্য নির্বাসনে গেলেন তখন তিনি হতাশভাবে নিশ্চেষ্ট বসে থাকেননি। ইসলাম কোনো অবস্থাতেই হতাশ হতে বারণ করে। ২. হাজেরা (রা.)-এর আচরণে অনেক কিছু শেখার আছে। তিনি পাহাড় থেকে পাহাড়ে ছুটলেন। তার মনে দৃঢ় আশা ছিল যে, আল্লাহর রহমতে পানি জুটবে। তার কষ্ট দূর হবে। ৩. রসুল (সা.)-এর পর দেড় হাজার বছর ধরে কোটি মানুষ ওই পথে দৌড়াদৌড়ি করে আল্লাহর একাত্মতা ঘোষণা করছে এ থেকে ইসলামের মহত্ব ও ঐতিহাসিক ভ্রাতৃত্ব ফুটে উঠেছে। এখানে সাদা-কালো, জাতি-গোত্র, ধনী-দরিদ্র, নারী-পুরুষ প্রভেদ নেই। সবাইকে হাজেরা (রা.) এর পদাঙ্ক অনুসরণ করতে হচ্ছে।
লেখক : বিশিষ্ট মুফাসিসরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব
www.selimazadi.com