নাসিরনগরে ন্যক্কার জনক হামলার অপরাধী কারা বিষয়টি নিয়ে বিশ্লেষণ চলছে। প্রবহমান বিশ্লেষণে সাম্প্রদায়িক এই দাঙ্গাকে নানাভাবে চিত্রায়ণ করা হচ্ছে। নিন্দনীয় এই অপরাধটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা বা অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টাও অব্যাহত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।
কথা হলো, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ বা নানা মতের কতটা সুযোগ আছে এই ঘটনায়? কারণ নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ভাঙচুর বা মন্দির প্রতিমায় হামলা হয়েছে প্রকাশ্য দিবালোকে। লোকে মিছিল করে এসেছে এবং সভা থেকে বের হয়ে মিছিল করে গিয়ে হামলা করেছে। সবই ঘটেছে প্রশাসনের নাকের ডগায় এবং স্থানীয় রাজনৈতিক সংগঠকদের চোখের সামনে। এখানে অপরাধীদের চিহ্নিত করা কোনো কঠিন কাজ নয়। তাহলে বিভ্রান্তিটা কোথায়?
পবিত্র কাবা শরিফের আপত্তিকর ছবি প্রকাশের অপরাধে অভিযুক্ত রসরাজকে গ্রেফতার করার পরও কারা সভা-সমাবেশের অনুমতি চাইল? কারা সভা-সমাবেশ আয়োজন করল? অভিযুক্ত রসরাজকে গ্রেফতার করার পরও প্রশাসন কেন দুটি বিপরীতমুখী সংগঠনকে (একটি আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত অপরটি খাঁটি আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত, তারাও পরস্পর ভিন্নচিন্তার এবং বিপরীত মেরুর) সভা করার অনুমতি দিল? মসজিদের মাইক ব্যবহার করে সভায় যোগদানের আহ্বান, মাইকিংয়ে নানা আপত্তিকর স্লোগান দিয়ে সবশেষে সমাবেশ করে পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করে তুলল? স্থানীয় প্রশাসন কি তা দেখেনি? এলাকার নেতা-কর্মীরা তখন কোথায় ছিল? বিশাল সমাবেশে মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। বক্তৃতা করেছে। সমাবেশ শেষ করেই মিছিলকারীরা হামলা করেছে। এতসব অপকর্ম যারা করল তারা কি হামলার জন্য দায়ী নয়? তাদের চিহ্নিত না করে তথাকথিত রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে সামনে নিয়ে আসাতে কী মূল অপরাধীরা পার পেয়ে যাবে না?এমন পার পাওয়ার সুযোগ পেলে আগামী দিনেও সাম্প্রদায়িক উসকানিদাতারা এ জাতীয় অপরাধে সক্রিয় হয়ে উঠবে। সমাবেশ হামলা চলাকালীন বিভিন্ন ছবি-ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। সেগুলোও অপরাধী চিহ্নিত করতে সহায়ক হবে।
আরও একটি বিষয় বলে রাখি, নাসিরনগরের ঘটনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধ মোটেও জড়িত নয়। এ ঘটনায় সঙ্গে দল ও সংগঠন হিসেবেও আওয়ামী লীগ জড়িত নয়। আওয়ামী লীগের কোনো কর্মী যদি জড়িত হয়ে থাকে তবে তা তার ব্যক্তিগত দায়। এর সঙ্গে দল বা সংগঠনকে জড়িত করার অর্থ হচ্ছে অপরাধীকে আড়াল করা। যা সজ্ঞানে বা অজ্ঞানে অনেকেই করে যাচ্ছেন। যেটি অত্যন্ত নিন্দনীয় অপরাধ।
কেউ কেউ অপরাধীদের আড়াল করতে জেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে মন্ত্রী ছায়েদুল হকের দ্বন্দ্বকে সামনে নিয়ে আসছে। জেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে মন্ত্রী ছায়েদুল হকের রাজনৈতিক মতপার্থক্য আর ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব তো এক বিষয় নয়। আমার সম্পর্কে ছায়েদুল হক যে আপত্তিকর মন্তব্য করেছে এর কোনো ভিত্তি নেই। এ ব্যাপারে মানহানি মামলার ব্যবস্থা হয়েছে। নাসিরনগরের সাম্প্রতিক দুঃখজনক ঘটনাবলির কারণে মামলা হতে বিলম্ব হচ্ছে। তাই ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার সুযোগ না দিয়ে প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশকারী, স্লোগানদাতা, মাইকিংকারী, বক্তৃতাকারীদের উসকানিদাতা হিসেবে চিহ্নিত করা উচিত। হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনা উচিত। চাই সে যেই হোক। যে দলেরই হোক না কেন।
নাসিরনগরের এই ন্যক্কারজনক হামলাটি ধূয়াশাচ্ছন্ন করতে অনেকেই ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে রং ছড়াতে গিয়ে আমার সঙ্গে আইনমন্ত্রী এবং মৎস্যমন্ত্রী ছায়েদুল হকের দ্বন্দ্বের কথা বলতে চাচ্ছেন, যা ডাহা মিথ্যাচার বৈ কিছু নয়। আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই যে, আমার সঙ্গে আইনমন্ত্রীর কোনো দ্বন্দ্ব বা সংঘাত নেই। আমাদের সম্পর্ক চমৎকার। ছায়েদুল হকের সঙ্গেও আমার কোনো ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব বা সংঘাত নেই। মতবিরোধ আছে সাংগঠনিক বিষয়াদিতে।
সারা জীবন সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ছিলাম, আছি এবং থাকব। আমাকে যারা সাম্প্রদায়িকতার দায়ে অভিযুক্ত করতে চায় তারা বর্ণচোরা সাম্প্রদায়িক ও নষ্ট ভাবনার লোক। তারা নাসিরনগরের সাম্প্রদায়িক হামলাকারীদের প্রকারান্তরে রক্ষা করতে চায়। অপরাধীদের আড়াল করতে চায় মাত্র।
আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, সত্যের জয় হবেই এবং সত্য অন্ধকারকে দূরীভূত করে ভোরের আলো হয়ে ফুটে উঠবে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
লেখক : সভাপতি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগ, সভাপতি পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।