শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
বায়তুল মোকাররমের খুতবা

বিয়ের মোহরানার অর্থ শুধু পাত্রীরই প্রাপ্য

মুফতি মিজানুর রহমান
সিনিয়র পেশ ইমাম, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ

সব প্রশংসা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার যিনি কুম কায়েনাতের খালিক। সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। যিনি একা এবং তার কোনো শরিক নেই। আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয় মুহাম্মদ (সা.) তার বান্দা ও রসুল। তার প্রতি অসংখ্য দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক। আরও বর্ষিত হোক তার আল ও আসহাব এবং তার অনুসারীদের প্রতি।

সর্বোপরি আল্লাহ তায়ালাকে জীবনের সব ক্ষেত্রে ভয় করে চলুন আরও সদা স্মরণ করুন সুখে ও দুঃখে, প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে। আর স্বীয় স্ত্রীদের বিষয় ধার্যকৃত মোহরানা আদায়ের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন যা নিজেরা ঐকমত্যের ভিত্তিতে ধার্য করেছেন। মোহর বলা হয় ওই মালকে যা বিয়ের প্রাক্কালে বরের পক্ষ থেকে কনেকে দেওয়ার ওয়াদা করা হয়। বিয়েতে মোহর ছাড়া অন্য কোনো শর্ত আরোপ করা ইসলামী শরিয়তে বৈধ নয়। আর মোহরের দাবিদার হচ্ছেন একমাত্র স্ত্রী বা কনে। নারীদের মোহরের ব্যাপারে মহানবী (সা.)-এর আবির্ভাবের আগে জাহেলিয়া যুগে মোহর আদায়ের ক্ষেত্রে নানা ধরনের অবিচার ও জুলুম বিদ্যমান ছিল। প্রথমত নারীর প্রাপ্য মোহর তার হাতে পৌঁছানো হতো না। মেয়ের অভিভাবকরাই তা আদায় করে আত্মসাৎ করতেন। যা ছিল নিতান্তই নির্যাতনমূলক রেওয়াজ। এ প্রথা উচ্ছেদের লক্ষ্যে আল্লাহ আল কোরআনে করেন, ‘আর নারীদের তাদের মোহরানা একান্ত খুশিমনে তাদের (মালিকানা) দিয়ে দাও। অতঃপর তারা যদি নিজেদের মনের খুশিতে এর কিছু অংশ তোমাদের ছেড়ে দেয়, তাহলে তোমরা তা খুশিমনে ভোগ করতে পারো।’

এ আয়াতে স্বামীর প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, নারীর মোহর তাকেই দিয়ে দাও, অন্যকে নয়। আর অভিভাবককেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, মোহর যার প্রাপ্য তাকেই দিতে হবে। অন্য কাউকে নয়।

দ্বিতীয়ত স্ত্রীর মোহর আদায়ের ক্ষেত্রে নানা রকম তিক্ততার সৃষ্টি হতো। মোহরকে মনে করা হতো জরিমানা। এ অনাচার নিরসনে সন্তুষ্টিচিত্তে তা আদায় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তৃতীয়ত অনেক স্বামী স্ত্রীর অসহায়ত্বের সুযোগ গ্রহণ করে নানাভাবে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে মোহর মাফ করিয়ে নিত। তবে স্ত্রী যদি স্বেচ্ছায় খুশিমনে মোহরের অংশবিশেষ মাফ করে দেয় কিংবা সম্পূর্ণ প্রাপ্য বুঝে নিয়ে কোনো অংশ তার স্বামীকে ফিরিয়ে দেয় তা জায়েজ।

আল্লাহ তায়ালা এ বিষয়ে আরও বলেন, ‘তাদের মোহর তাদের ফরজ হিসেবে প্রদান কর।’

মোহর আদায়ের বিষয়ে মহানবী (সা.)-এর বাণী রয়েছে। উকবা ইবনে আমের (রা.) বলেন, ‘রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, চুক্তিগুলোর মধ্যে সেই চুক্তিই পূর্ণ করা সবচেয়ে জরুরি যার দ্বারা তোমরা স্ত্রীলোকের গোপন অংশের মালিক হও।’ (বুখারি ও মুসলিম)।

উকবা ইবনে আমের (রা.) আরও বলেন, নবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মোহরের মধ্যে সেই পরিমাণ মোহরই উত্তম যা আদায় করা সহজসাধ্য।’ রসুলুল্লাহ (সা.) আরও  বলেন, ‘কোনো মুমিনের জন্য উচিত নয় সে নিজেকে লাঞ্ছিত করবে।’ আরজ করা হলো, ‘ইয়া রসুলুল্লাহ! কীভাবে নিজেকে লাঞ্ছিত করা হবে?’ রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘এমন মুসিবত সে মাথায় নেয়, যা বহন করার ক্ষমতা তার নেই।’

এ হাদিস দ্বারা জানা যায়, সাধ্যের বাইরে মোহর নির্ধারণ করা উচিত নয়, যা পরিশোধের সামর্থ্য নেই। ইসলাম মোহরানা আদায়ের নির্দেশ দিয়ে নারীকে সমৃদ্ধ ও মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে আর অন্যের মুখাপেক্ষিতা ও পরাধীনতার অভিশাপ থেকে মুক্তি দিয়েছে। বিয়ের সময় পরিবারের উভয় পক্ষ সম্মত হয়ে মোহরানা ধার্য করবে। এ মোহরানা বিয়ের সময় আদায় করা শ্রেয়। মোহরানা আদায়ের ইচ্ছা যদি না থাকে তাহলে স্বামীকে অবশ্যই বড় ধরনের গুনাগার হতে হবে এবং বিচারের দিন ব্যভিচারীদের কাতারে দাঁড়াতে হবে। মোহরানার অর্থ একান্তই পাত্রীর। এতে অন্য কারোর কোনো অংশ নেই। এ অর্থ হালাল পন্থায় স্বাধীনভাবে ব্যবহার করতে পাত্রীর কোনো বাধা নেই। স্ত্রীর মোহরানার অর্থসম্পদে স্বামীর কোনো অংশ নেই। হাদিসে আরও এসেছে, ‘উত্তম মোহর হলো যা সহজ ও স্বল্প হয়।’ আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘মোহরানা ধার্য সহজ কর।’ এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মোহরানা কম ধার্য করা উত্তম। আরও জানা গেছে, মোহরানা বেশি ধার্য করলে তা আদায় না হওয়ার কারণে স্ত্রীর মনে স্বামীর মহব্বত কমে যায়; যা কখনো কাম্য হতে পারে না।

সর্বশেষ খবর