সোমবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভাষা সর্বশক্তিমান আল্লাহর কুদরত

মুহম্মাদ আবদুর রশিদ

ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের মাস। ১৯৫২ সালের এই মাসে ভাষা আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নেয়। মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার ন্যায্য সংগ্রামে প্রাণ হারায় সালাম, বরকত, রফিকসহ নাম জানা অজানা ছাত্র ও তরুণরা। ইসলামে প্রতিটি জাতির ভাষার মর্যাদাকে স্বীকার করা হয়েছে। ভাষা আল্লাহর একটি অসামান্য কুদরত। আল্লাহ মানব জাতিকে আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। তাদেরকে ভাষা দান করেছেন। আল্লাহতায়ালার দরবারে বান্দা ইহজগৎ ও আখিরাতের মঙ্গলের জন্য যে প্রার্থনা করবে তা হওয়া উচিত তার মাতৃভাষায়। কারণ মাতৃভাষায় মানুষ যে আবেগ অনুভব করে তা অন্য কোনো ভাষায় সম্ভব নয়। মানুষকে আল্লাহতায়ালা তার মনের ভাব প্রকাশের জন্য ভাষা শিক্ষা দিয়েছেন। মাতৃভাষা তার আবেগ প্রকাশের প্রধান মাধ্যম। পবিত্র কোরআনের সূরা রুমের ২২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তাঁর আরও একটি নিদর্শন হচ্ছে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। নিশ্চয়ই এতে জ্ঞানীদের জন্য রয়েছে নিদর্শন।’ সূরা আর-রাহমানের এক থেকে চার নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘দয়াময় আল্লাহতায়ালা মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন কোরআন। সৃষ্টি করেছেন মানুষ। শিক্ষা দিয়েছেন ভাষা বর্ণনার কলা-কৌশল।’ সূরা ইব্রাহিমের চার নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আমি প্রত্যেক রসুলকে তাঁর নিজ জাতির ভাষায় পাঠিয়েছি, যাতে তাদের আল্লাহতায়ালার বিধানসমূহ সুস্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিতে পারেন।’ প্রত্যেক নবী-রসুল তাঁর মায়ের ভাষায় তাঁর জাতির কাছে আল্লাহর বাণী পৌঁছে দিয়েছেন। মায়ের ভাষার মাধ্যমেই মানুষকে আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উদ্দেশ করে সূরা দুখানের ৫৮ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন, ‘আমি তো কোরআনকে আপনার ভাষায় সহজ করে নাজিল করেছি, যাতে তারা সহজে উপদেশ গ্রহণ করতে পারে।’ পবিত্র কোরআনের সূরা আশ-শুরার ৭ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করা হয়েছে— ‘এমনিভাবে আমি আপনার প্রতি আরবি ভাষায় কোরআন নাজিল করেছি। যাতে আপনি মক্কা ও তার আশপাশের লোকদের হাশরের দিন সম্পর্কে সতর্ক করেন।’ ভাষার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে আল্লাহপাক সূরা ইউসুফের ২ নম্বর আয়াতে ঘোষণা করেন, ‘আমি কোরআনকে আরবি ভাষায় নাজিল করেছি, যাতে তোমরা সহজে বুঝতে পার।’ সূরা মারইয়ামের ৯৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘আমি কোরআনকে আপনার ভাষায় সহজ করে দিয়েছি, যাতে আপনি অতি সহজে মুক্তাকীদের সুসংবাদ দেন আর কলহকারীদের সতর্ক করেন।’ মহাগ্রন্থ আল কোরআনের মাধ্যমেই আমরা জানতে পারি, ইসলামী আদর্শ যেমন সর্বজনীন, তেমনিভাবে ভাষা-বর্ণও সর্বজনীন। আল্লাহ আমাদের মাতৃভাষা বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : ইসলামী গবেষক

সর্বশেষ খবর