বৃহস্পতিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
ইতিহাস

তুঘলক বংশের পতনের কারণ

তুঘলক বংশের নয়জন সুলতান দিল্লিতে চুরানব্বই বছর রাজত্ব করেন। এরপর এ বংশের পতন ঘটে। তুঘলক বংশের পতনের পশ্চাতে অনেক কারণ ছিল। প্রথমত, তুঘলক বংশের পতনের জন্য সুলতান মুহম্মদ বিন তুঘলক আংশিকভাবে দায়ী ছিলেন। দৌলতাবাদে দ্বিতীয় রাজধানী স্থাপন, প্রতীক মুদ্রার প্রচলন ও দোয়াবে কর বৃদ্ধি করার ফলে জনগণের যথেষ্ট অসুবিধার সৃষ্টি হয় এবং সুলতান জনসাধারণের কাছে অত্যন্ত অপ্রিয় হয়ে ওঠেন। এভাবে নিজের অজ্ঞাতেই তিনি সাম্রাজ্যের পতনের বীজ বপন করেন। তার নীতির ফলে সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশে বিদ্রোহ দেখা দেয় এবং পরিণামে অনেক স্বাধীন রাজ্যের পতন হয়। দ্বিতীয়ত, তুঘলক বংশের পতনের জন্য ফিরুজ শাহ্ তুঘলক যথেষ্ট দায়ী ছিলেন। যদিও তিনি তার পূর্বপুরুষের সৃষ্ট দুরবস্থার প্রতিকার করার চেষ্টা করেছিলেন, তথাপি তার জায়গির প্রথার পুনঃপ্রবর্তন, উত্তরাধিকার সূত্রে পদলাভ নীতি এবং ক্রীতদাস প্রথার প্রবর্তন শাসনব্যবস্থাকে দুর্বল করে ফেলেছিল। তার এসব ব্যবস্থা সাম্রাজ্যে বিপর্যয় সৃষ্টি করে এবং পতনকে ত্বরান্বিত করে তোলে। তৃতীয়ত, সাম্রাজ্যের পতনের জন্য ফিরুজ তুঘলকের দুর্বল উত্তরাধিকারীগণ বিশেষভাবে দায়ী ছিলেন। মুহম্মদ বিন তুঘলকের আমলে যেসব রাজ্য স্বাধীন হয়েছিল, সেগুলো তারা পুনরুদ্ধার করতে পারেননি। তারা সর্বদা ভোগবিলাসে মত্ত থাকতেন এবং পারস্পরিক কলহে সময় অতিবাহিত করতেন। চতুর্থত, হিন্দুরা মুসলিম শাসনকে মনেপ্রাণে গ্রহণ করতে পারেনি। তারা স্বাধীন হওয়ার জন্য সর্বদা সচেষ্ট ছিল। তারা সুযোগ পেলে বিদ্রোহ ঘোষণা করত। হিন্দুদের এ বিরোধিতা সাম্রাজ্যের পতনের অন্যতম কারণ ছিল। পঞ্চমত, মুহম্মদ বিন তুঘলকের শাসনামলে সাম্রাজ্য কেবল উত্তর ভারতেই বিস্তৃত হয়নি, দক্ষিণ ভারতেও প্রসারিত হয়েছিল এবং তেইশটির মতো প্রদেশ এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। সে অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার যুগে এত বড় সাম্রাজ্য শাসন ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব ছিল না। দূরবর্তী প্রদেশে কেউ বিদ্রোহ ঘোষণা করলে তা দমন করা সম্ভব হতো না। সর্বশেষে, সাম্রাজ্যের অবস্থা যখন এরূপ বিপর্যস্ত, তখন তৈমুরের আক্রমণ এর ওপর তীব্র আঘাত হানে। তার আক্রমণের ফলে দেশে অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এতে অনেক প্রদেশ স্বাধীন হয়ে পড়ে এবং তুঘলক বংশের অবসান ঘটে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর