শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভালোবাসব তাঁকেই, যিনি ভালোবাসা সৃষ্টি করেছেন

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা

ভালোবাসব তাঁকেই, যিনি ভালোবাসা সৃষ্টি করেছেন

ভালোবাসা, যার ওপর ভর করে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে আকাশ, বাতাস, গ্রহ, নক্ষত্র সব। ভালোবাসা আছে বলেই রব্বুল আলামিন তাঁর প্রিয় হাবিব মুহাম্মদ (সা.)-কে সৃষ্টি করেছেন, সৃষ্টি করেছেন গোটা মানব জাতিকে। শুধু তাই নয়, তিনি আমাদের দিয়েছেন আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা।  এ সবকিছুই তিনি করেছেন তাঁর প্রিয় বান্দাদের ভালোবেসে। সেই মহান সত্তাই একমাত্র ভালোবাসার উপযুক্ত, যিনি ভালোবাসা সৃষ্টি করেছেন। ভালোবাসার মূল ভিত্তি হলো বিশ্বাস, যা আল্লাহর ক্ষেত্রে ‘ইমান’কে বলা হয়। হজরত আবু রাজিন উকাইলি (রা.) একদিন রসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, হে রসুল! ইমান কী? রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রসুল তোমার কাছে সবকিছু থেকে অধিকতর প্রিয় হওয়া।’ এটি আল্লাহকে ভালোবাসার পূর্বশর্ত এবং আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের মূল চাবিকাঠি।

আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের কিছু উপায় রয়েছে যার প্রতিটিই ইমানের শাখা; যার মধ্যে অন্যতম হলো, রসুল (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা ও তাঁর অনুসরণ ‘হে নবী বলে দিন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তবে আমার অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহও তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৩১)। আল্লাহ ধৈর্যশীল ব্যক্তিদের ভালোবাসেন। আল কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘আর যারা সবর করে আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৪৬)। তাওয়াক্কুলকারীদের ব্যাপারে কোরআনে কারিমে আল্লাহ রব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, ‘অতঃপর যখন (কোনো কাজ করার) ইচ্ছা করবে তখন আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওয়াক্কুলকারীদের ভালোবাসেন।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৫৯)। আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনে বিশ্বস্ততা ও তাকওয়া অর্জন করাও বিশেষ গুরুত্ব রাখে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই যে ব্যক্তি স্বীয় ওয়াদা পূর্ণ করে এবং তাকওয়া অবলম্বন করে, নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকিদের ভালোবাসেন।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৭৬)। এ ছাড়া অধিক তওবাকারী, পবিত্রতা অর্জনকারীকেও আল্লাহ ভালোবাসেন। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং ভালোবাসেন অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীদের।’ (সূরা বাকারা, আয়াত ২২২)। দান-সদকা বা পরোপকার, অনুগ্রহের মাধ্যমে আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন করা যায়। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা আল্লাহর পথে দান-সদকা কর এবং নিজ হাতে নিজেদের ধ্বংসের দিকে নিক্ষেপ কর না। আর মানুষের প্রতি অনুগ্রহ কর। নিশ্চয় আল্লাহ অনুগ্রহকারীদের ভালবাসেন।’ (সূরা বাকার, আয়াত ১৯৫)। রসুল (সা.)-এর তরিকা অনুসরণ করে কেউ যদি সঠিক অর্থের জিহাদে শরিক হয় তাতেও আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন করা যায়। ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন, যারা তাঁর পথে সারিবদ্ধ হয়ে এমনভাবে জিহাদ করে, যেন তারা সীসা ঢালা প্রাচীর।’ (সূরা সাফ, আয়াত ৪)। ভালোবাসা একটি পবিত্র জিনিস। এর যথাযথ মর্যাদা রক্ষা করা আমাদেরই দায়িত্ব। যদি ভালোবাসতে হয় তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রসুল (সা.)-কে ভালোবাসব। মা, বাবা, ভাই, বোন, স্ত্রী, সন্তান কিংবা অন্য কেউ, সবাইকেই আল্লাহর জন্য ভালোবাসব। এরই বাইরে নাজায়েজ কিছু সম্পর্ককে আমরা ভালোবাসা বলে দাবি করি, যা আসলে ভালোবাসা নয়। সেগুলোর শয়তানের সাজানো মরীচিকা মাত্র। যাতে কোনো শান্তি নেই।  আছে উভয় জাহানের ব্যর্থতা। তাই আমরা ব্যর্থতার পথকে পরিহার করে সফলতার পথকেই গ্রহণ করব। ভালোবাসব তাঁকেই, যিনি ভালোবাসা সৃষ্টি করেছেন।        

লেখক : প্রাবন্ধিক, গবেষক।

সর্বশেষ খবর