শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

পারস্পরিক সহমর্মিতা

মুফতি মুতীউর রাহমান

ইসলাম অন্যের প্রতি সহমর্মিতার শিক্ষা দিয়েছে। সমাজবদ্ধ জীবনে এই সহমর্মিতার অনেক প্রয়োজন। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে একজন মানুষ অন্যের সহমর্মিতা না পেলে তার জীবন বিষিয়ে ওঠে। বিভিন্ন সমস্যা ও বিপদগ্রস্ত মানুষ অন্যদের সহমর্মিতায় সান্ত্বনা খুঁজে পায়। মানবতার ধর্ম ইসলামে তাই সহমর্মিতার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন, মুসলিম মুসলিমের ভাই। সে তার খিয়ানত করবে না। তার বিষয়ে মিথ্যা বলবে না। তাকে অপমানিত হতে দেবে না। প্রত্যেক মুসলিমের জন্য অন্য মুসলিমের সম্মান, সম্পদ ও রক্ত হারাম। তাকওয়া (আল্লাহভীতি) হলো এখানে (অন্তরে) কোনো ব্যক্তির মন্দতার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে হেয় দৃষ্টিতে দেখবে। (তিরমিজি)।

অন্য এক হাদিসে এসেছে : হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন, এক মুমিন আরেক মুমিনের জন্য ইমারতের মতো। একটি ইট আরেকটিকে শক্তি জুগিয়ে থাকে। (তিরমিজি)। সামাজিক জীবনে এ শিক্ষার চর্চা এখন খুবই জরুরি। পারস্পরিক সহানুভূতি ও সহমর্মিতা ছাড়া কোনো সমাজের মানুষ সুখী-সমৃদ্ধ হতে পারে না। ইসলামের প্রথম যুগে মুসলমানদের মাঝে যে পারস্পরিক  সহানুভূতি ও সহমর্মিতা ছিল বর্তমান মুসলিম সমাজে তা অনেকাংশেই অনুপস্থিত। সাহাবায়ে কিরামের পারস্পরিক সহানুভূতি ও সহমর্মিতা সম্পর্কে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তারা তাদের নিজেদের ওপর অগ্রাধিকার দেয়। নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও। যাদের অন্তর কার্পণ্য থেকে মুক্ত রাখা হয়েছে তারাই সফলকাম। (সুরা হাশর, আয়াত ৯)। সাহাবা যুগের সোনালি ইতিহাসে অন্যের প্রতি সহমর্মিতা ও সহানুভূতির যে দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় তা বিশ্বদরবারে মুসলমানদের প্রকৃত পরিচয় তুলে ধরে। দুঃখজনক সত্য যে, এখন আমরা দিন দিন খুবই আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছি। পাড়া-পড়শি, আত্মীয়স্বজন বা পরিচিতজনদের শোক-দুঃখে এগিয়ে যাওয়ার মানসিকতা আমাদের মধ্যে লোপ পাচ্ছে। ফলে সমাজের দুঃখ-দুর্দশাগ্রস্ত লোকেরা নিতান্তই অসহায় হয়ে পড়ছে। কোনো মুসলিম সমাজের চিত্র আদৌ এমন হওয়া উচিত নয়। নবী ও সাহাবা যুগের চিত্রটা এমন ছিল না। এ অবস্থার অবসান হওয়া অতি জরুরি।  পবিত্র কোরআন-হাদিসের সহমর্মিতার শিক্ষায় আবার আমাদের দীক্ষিত হতে হবে। তবেই আমরা পূর্ণাঙ্গ মুমিন হতে পারব।

লেখক : খতিব, মুহাম্মদিয়া দারুল উলুম জামে মসজিদ, পশ্চিম রামপুরা, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর