খোবায়েব বিন আদি (রা.) : চতুর্থ হিজরির সফর মাসে প্রেরিত ১০ জনের প্রচারক দলের তিনি ছিলেন অন্যতম সদস্য। দাওয়াতকারীরা বিশ্বাসঘাতকতার মাধ্যমে তাদের সবাইকে হত্যা করে। খোবায়েব ও জায়েদ বিন দাসেনাকে সঙ্গে সঙ্গে হত্যা না করে মক্কায় কাফিরদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। সেখানে তাদের শূলে চড়িয়ে হত্যা করা হয়। শূলে চড়ার আগে খোবায়েব দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করেন এবং বলেন, ‘আমি ভীত হয়েছি’ এই অপবাদ তোমরা না দিলে আমি দীর্ঘক্ষণ নামাজ আদায় করতাম। তিনিই প্রথম এই সুন্নাতের সূচনা করেন। অতঃপর তিনি কাফিরদের প্রতি বদ দোয়া করেন এবং মর্মন্তুদ কবিতা পাঠ করেন। তার পঠিত ১০ লাইন কবিতার বিশেষ দুটি লাইন ছিল এরূপ— ‘আর আমি যখন মুসলিম হিসেবে নিহত হই তখন আমি কোনো পরোয়া করি না, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমাকে কোন পাশে শোয়ানো হচ্ছে।’ ‘আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই আমার মৃত্যু হচ্ছে। তিনি ইচ্ছা করলে আমার খণ্ডিত টুকরাসমূহে বরকত দান করতে পারেন।’ বুখারি। মৃত্যুর আগে খোবায়েবের শেষ বাক্য ছিল— ‘হে আল্লাহ! আমরা তোমার রসুলের রিসালাত পৌঁছে দিয়েছি। এক্ষনে তুমি তাঁকে আমাদের সঙ্গে যা করা হচ্ছে, সে খবরটি কাল সকালে পৌঁছে দাও।’ ওমর (রা.)-এর গভর্নর সাইদ বিন আমের যিনি খোবায়েবের হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন, ‘তিনি সেই মর্মান্তিক ঘটনা স্মরণ করে মাঝেমধ্যে বেহুঁশ হয়ে পড়তেন। তিনি বলতেন, খোবায়েবের নিহত হওয়ার দৃশ্য স্মরণ হলে আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারি না। আল্লাহর পথে কত বড় অটল ও ধৈর্যশীল তিনি ছিলেন যে, একবার উহ্ পর্যন্ত উচ্চারণ করেননি। বন্দী অবস্থায় তাকে থোকা থোকা আঙুর ফল খেতে দেখা গেছে। অথচ ওই সময় মক্কায় কোনো আঙুর ছিল না।’
জায়েদ বিন দাসেনাহ : তাকে হত্যার আগে আবু সুফিয়ান তাকে বললেন, তুমি কি এতে খুশি হবে যে, তোমার স্থলে আমরা মুহাম্মদকে হত্যা করি এবং তুমি তোমার পরিবারসহ বেঁচে থাকো? তিনি বললেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি চাই না আমার স্থলে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আসুক এবং তাকে একটি কাঁটারও আঘাত লাগুক।’ হারাম এলাকা থেকে বের করে ছয় কিলোমিটার উত্তরে ‘তানইম’ নামক স্থানে তাঁকে শূলে চড়িয়ে হত্যা করা হয়। সিরাতে রসুল।
খাববাব ইবনুল আরাত : বনু খোজায়া গোত্রের জনৈকা মহিলা উম্মে আনমারের গোলাম ছিলেন। তিনি কর্মকারের কাজ করতেন। প্রথম দিকের ইসলাম প্রকাশকারী এবং ষষ্ঠ মুসলমান ছিলেন। মুসলমান হওয়ার অপরাধে মুশরিক নেতারা তার ওপর রোমহর্ষক নির্যাতন চালায়। নানাবিধ অত্যাচারের মধ্যে সবচেয়ে মর্মান্তিক ছিল এই যে, তাকে জ্বলন্ত লোহার ওপর চিত করে শুইয়ে বুকের ওপর পাথর চাপা দেওয়া হয়েছিল। ফলে পিঠের চামড়া ও মাংস গলে অঙ্গার নিবে গিয়েছিল। নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে তিনি একদিন রসুল (সা.)-এর কাছে গেলেন। তখন তিনি কাবা চত্বরে চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে ছিলেন। তিনি রসুল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কাফিরদের বিরুদ্ধে বদ দোয়া করার জন্য আকুলভাবে দাবি করেন। তখন উঠে রাগতস্বরে রসুল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দীনের জন্য বিগত উম্মতদের কঠিন নির্যাতন ভোগের কথা স্মরণ করিয়ে দেন এবং বলেন, ‘তোমাদের আগের জাতিসমূহের লোকদের মাথার মাঝখানে করাত রেখে দেহকে দ্বিখণ্ডিত করা হয়েছে। কিন্তু তা তাদেরকে দীন থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। তাদের দেহ থেকে লোহার চিরুনি দিয়ে গোশত ও শিরাসমূহ হাড্ডি থেকে পৃথক করে ফেলা হয়েছে। তথাপি এগুলো তাদেরকে তাদের দীন থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। মনে রেখো, আল্লাহর কসম! অবশ্যই তিনি এই ইসলামী শাসনকে এমনভাবে পূর্ণতা দান করবেন, একজন আরোহী সানা (ইয়েমেনের রাজধানী) থেকে হাজরামাউত পর্যন্ত একাকী ভ্রমণ করবে, অথচ সে আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করবে না। অথবা তার ছাগপালের ওপর নেকড়ের ভয় করবে। কিন্তু তোমরা বড়ই ব্যস্ততা দেখাচ্ছো।’ বুখারি, মিশকাত।হজরত বিলাল (রা.) : তার মনিব তাকে এত কষ্ট দিল যে, মরুভূমির উত্তপ্ত বালুর মধ্যে শুইয়ে তাতে পাথর চাপা দিত, নাকে রশি লাগিয়ে টানাহেঁচড়া করত, তিনি শুধু দীনের ওপর অটল থেকে ‘আহাদ’ ‘আহাদ’ শব্দ উচ্চারণ করতেন। মুসনাদে আহমাদ।
শাকিলা জাহান