শুক্রবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

কোরআন-সুন্নাহর আলোকে পারিবারিক বন্ধন

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

কোরআন-সুন্নাহর আলোকে পারিবারিক বন্ধন

আল কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘আমি প্রতিটি বস্তু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি যাতে তোমরা মনোযোগ দাও।’ সূরা জারিয়াত, আয়াত ৪৯। তিরমিজির একটি হাদিসে উল্লেখ আছে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সে যে তার পরিবারবর্গের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং আমি আমার পরিবারের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।’ আলোচ্য আয়াত ও হাদিস থেকে পরিবার ও পারিবারিক বন্ধন সম্পর্কে আমরা সংক্ষিপ্তভাবে বুঝতে পেরেছি। মৌলিকভাবে একটি সুন্দর-সুশৃঙ্খল পরিবারই পারে একটি সুন্দর ও সুশৃঙ্খল ‘সামাজ’ দেশ ও জাতিকে উপহার দিতে। কয়েকজন মানুষকে নিয়ে একটি পরিবার গঠিত হয়। আমরা সাধারণত পরিবার বলতে মা-বাবা, ভাই-বোন, স্বজন-পরিজনসহ গঠিত একটি কাঠামোকে বুঝি। এখন আমাদের বুঝতে হবে পারিবারিক এই কাঠামোর সূচনা কখন থেকে হয়? হজরত আদম ও হাওয়া (আ.)-এর মাধ্যমেই দুনিয়ায় পারিবারিক প্রথার সূচনা হয়। তারা দুজন মহান রব্বুল আলামিনের হুকুমে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে পরিবারের সূচনা করেন। তাই তো ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক বৈবাহিক বন্ধনের মাধ্যমে একজন নারী ও একজন পুরুষ একটি পরিবার গঠন করে। বৈবাহিক বন্ধন যেমন নারী-পুরুষের মাঝে পরিবার সৃষ্টিতে অবদান রাখে, তেমন দাম্পত্য জীবনে পারস্পরিক প্রেম-ভালোবাসা তৈরি করে এবং পারস্পরিক শান্তি ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ করার ক্ষেত্রেও অনেক বড় ভূমিকা রাখে। পারিবারিক জীবনে স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের সম্পূরক। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘তারা (স্ত্রীরা) তোমাদের পোশাক এবং তোমরা তাদের পোশাক।’ সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৭। একটি সুন্দর ও সুশৃঙ্খল পরিবার গঠনে স্বামী-স্ত্রীর অনেক বড় অবদান রয়েছে। পরিবারগুলোতে যারা পরিবারের দায়িত্বশীল আছেন, তারা যদি আপন পরিবারের ব্যাপারে একটু যতœবান হন, আদর্শ পরিবার গঠনে জোরালো ভূমিকা রাখেন, সব সময় পরিবারে দীন (ইসলাম), ইমান নিয়ে ফিকির করেন ও ঘরে তালিমের পরিবেশ করেন, তাহলে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল একটি পরিবার তৈরি হবে। আদর্শ পরিবার গঠনে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন উম্মতের জন্য সর্বোত্তম নমুনা। তিনি ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ পারিবারিক অভিভাবক। তিনি সব সময় উম্মতকে কঠোরভাবে উপদেশ দিয়েছেন পারিবারিক বন্ধন অটুট রাখার জন্য। পারিবারির বন্ধন অটুট রাখার বিষয়ে পরিবারের দায়িত্বশীলের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। এর জন্য প্রথমে পরিবারের দায়িত্বশীলকে দীনদার, আমানত-দার, আদর্শবান ও পরিবারের সবার কাছে একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি হতে হবে। কারণ পরিবারের অন্য সদস্যরা তাকেই সবচেয়ে বেশি অনুকরণ-অনুসরণ করে। আমাদের মনে রাখতে হবে, একটি পরিবার একজন শিশুর জন্য প্রাথমিক শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান। এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষক হলেন বাবা-মা। সন্তানরা বাবা-মায়ের কাছ থেকে পারিবারিক ও সামাজিক রীতিনীতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভের পাশাপাশি ভবিষ্যতে সুন্দর জীবন-যাপনের প্রশিক্ষণও নিয়ে থাকে। শিশু-কিশোররা পরিবার থেকেই দীন (ইসলাম), মায়া-মহব্বত, পরোপকারিতা, শ্রদ্ধাবোধ ও সাহসিকতার মতো মহৎ গুণগুলো আত্মস্থ করে; যা তার পরবর্তী জীবনের জন্য মাইলফলক হয়ে থাকে। এ কারণে সন্তানদের প্রকৃত দীনদার, এবং তাদের আদর্শবান সন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে চাইলে এবং তাদের থেকে শ্রদ্ধা ও সম্মান পেতে হলে নিজেদের প্রথমে প্রকৃত দীনদার হতে হবে এবং নিজেদের পক্ষ থেকে অন্যকে সম্মান করা তাদের শেখাতে হবে। যে পরিবারের সন্তানরা তার বাবা-মাকে শ্রদ্ধা করে না, সম্মানের আসনে সমাসীন করে না, সেই পরিবারে কখনো প্রকৃত সুখ-শান্তি আসে না। পক্ষান্তরে ওই সন্তানের বাবা-মা যদি মুরব্বিদের সম্মান করেন, তাহলে পরিবারের শিশুরাও তা দেখে শেখে এবং ভবিষ্যতে তারাও বাবা-মায়ের প্রতি যতœবান ও মুরব্বিদের সম্মান করে। আর এভাবেই একটি পরিবারে সুখ ও শান্তির সুবাতাস প্রবহমান হতে থাকে। কোনো পরিবারে সুখ-শান্তি বিরাজ করলে সন্তানরা কখনো পরিবারবিমুখ হয় না এবং তাদের বিপথে যাওয়ার আশঙ্কাও অনেকাংশে কমে যায়। তাই তো শরিয়তে বৈবাহিক সম্পর্কের ব্যাপারে দীনদারিতার বিষয়ের প্রতি অতীব গুরুত্ব দেওয়া হেেয়ছে।

প্রিয় পাঠক! আমরা সবাই মনেপ্রাণে একটি সুখী পরিবার চাই। সুখী পরিবার পেতে হলে আমাদের ইসলামী রীতিনীতিগুলো পুরোপুরি জানতে হবে। জানতে হবে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিবারনীতি। সে অনুযায়ী পরিবারে চলতে হবে ও চালাতে হবে। আমাদের মাঝে পারস্পরিক ছাড় দেওয়া ও সমঝোতার মনোভাব থাকতে হবে। বিশেষ করে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের মাঝে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। কারণ এ ব্যাপারে বিজ্ঞ মনীষীরা একমত যে, সুস্থ ও সুন্দর পরিবার পাওয়ার জন্য দীনদারিতা, আমানত-দারিতা ধৈর্য, পরোপকারিতার মানসিকতা ও প্রেম-ভালোবাসার মতো সুন্দর সুন্দর গুণের সমন্বয় থাকা খুবই জরুরি। রব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া করি- তিনি যেন আমাদের সবাইকে পারিবারিক বন্ধন অটুট রাখার তাওফিক দান করেন।

লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির খতিব ও টিভি উপস্থাপক।

সর্বশেষ খবর