সোমবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

উপাচার্য বিড়ম্বনা

দলীয় লেজুড়দের পরিহার করুন

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদটি সারা দুনিয়াতেই মর্যাদার পদ। এ পদের অধিকারী যারা তাদের দেখা হয় শ্রদ্ধার চোখে। দেশ ও জাতির বিবেক হিসেবেও ভাবা হয় তাদের। বাংলাদেশেও উপাচার্যদের মর্যাদা ভিন্ন হওয়ার কথা নয়। এক সময় যারা উপাচার্য পদে অধিষ্ঠিত হতেন তাদের ভাবা হতো আলোর দিশারী হিসেবে। আমাদের দেশে দুই যুগ আগেও যারা উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের প্রতি সাধারণ শিক্ষার্থী শুধু নয় দেশবাসীর সমীহ ছিল আকাশছোঁয়া। কিন্তু দলীয় রাজনীতির লেজুড়বৃত্তি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার যোগ্যতা হয়ে উঠেছে এমন সমালোচনা এখন সুধীজনদের মুখে। এর পরিণতিতে উপাচার্য পদটি তার মাহাত্ম্য হারিয়েছে। বর্তমান মুহূর্তে যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য পদে আছেন তাদের কেউ সরকারি দলের জেলা কমিটির সদস্য, আবার কেউ সরকারি দলের যুব সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য। কেউ কেউ অতি দলপ্রেমী হতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বনাশ করে ছাড়ছেন। এতে শুধু তাদের মর্যাদাই ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে না, সমস্যা তৈরি হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও। ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ। ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থ বিবেচনায় সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত হওয়ায় এগুলো তাদের মর্যাদা হারাচ্ছে। উপাচার্য এবং শিক্ষকদের একাংশের দলপ্রীতি সংশ্লিষ্ট দলের ভাবমূর্তিতে কালিমা লাগাচ্ছে। ড. এস এম ইমামুল হকের কারণেই সপ্তাহব্যাপী আন্দোলনে উত্তাল ছিল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। বন্ধ ছিল সব ধরনের ক্লাস পরীক্ষা। কারণ গত ২৬ মার্চ তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের রাজাকারের বাচ্চা বলার ধৃষ্টতাও দেখিয়েছিলেন। এ ধৃষ্টতাকে মেনে নেয়নি শিক্ষার্থীরা। স্বভাবতই উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নামে ছাত্রছাত্রীরা। বন্ধ হয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম। এক সপ্তাহ পর বিতর্কিত উপাচার্য আর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবেন না শিক্ষার্থীদের এমন শর্তে তাকে ছুটি দিয়ে গতকাল থেকে চালু হয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। উপাচার্য বা শিক্ষকরা রাজনীতি বিমুক্ত হবেন এমন দাবি কেউ করেন না। কিন্তু যারা নিজেদের শিক্ষকের বদলে দলীয় কর্মী ভাবেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের কল্যাণে নিজেদের নিয়োগের বদলে লেজুড়বৃত্তিতে সময় কাটান তারা শুধু সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় নয় দলের প্রতিও গণমানুষের আস্থায় চিড় ধরাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিবেশ দূষিত করে তুলছেন। বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থেই উপাচার্য পদে লেজুড় কাউকে নিয়োগের ভুল পথ থেকে সরে আসতে হবে। এ পদের সম্মান রক্ষায় সত্যিকারের শিক্ষকদের উপাচার্য পদে নিয়োগ দেওয়া হবে আমরা এমনটিই দেখতে চাই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর