মঙ্গলবার, ১১ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

বন্ধ হোক মানব পাচার

প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে

মানব পাচারের উর্বর ভূমি হিসেবে যেসব দেশকে ভাবা হয় বাংলাদেশের স্থান তার ওপরের দিকে। মানব পাচারের লজ্জা থেকে বাঁচতে ২০১২ সালে মানব পাচার দমন ও প্রতিরোধ আইন প্রণয়ন করা হলেও তা বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরোয় পরিণত হয়েছে। এ আইনের অধীনে ট্রাইব্যুনাল গঠনের কথা থাকলেও গত সাত বছরে তা হয়নি। ট্রাইব্যুনাল গঠিত না হওয়ায় আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুসারে প্রতিটি জেলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মানব পাচারের মামলার বিচার চলছে। এর ফলে মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি নিশ্চিত হচ্ছে না। তৈরি হচ্ছে দীর্ঘসূত্রতা। অভিযোগ রয়েছে, অনেক সময়ই পিপিরা মানব পাচার মামলার শুনানিতে আগ্রহ কম দেখান। সাক্ষী হাজির করতেও তারা গাফিলতি করেন। এ কারণে একদিকে যেমন মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতা হয়, তেমনি আসল অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। বর্তমানে দেশের ৬৪ জেলায় ৪ হাজার ১৭৭টি মামলার মধ্যে ৩০৪টি পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বিচারাধীন। এর মধ্যে ঢাকায় পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বিচারাধীন মামলা রয়েছে ৪৮, মানিকগঞ্জে ৬, নরসিংদীতে ১৯৮, জয়পুরহাটে ১, খুলনায় ৫, যশোরে ২৭, সাতক্ষীরায় ৫, চুয়াডাঙ্গায় ১, নড়াইলে ৫, মেহেরপুরে ১, বরগুনায় ৪ ও সিলেটে ৩টি মামলা পাঁচ বছর ধরে বিচারাধীন রয়েছে। পাচারের ক্ষেত্র হিসেবে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপাল সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এ ছাড়া আছে মিয়ানমার। দক্ষিণ এশিয়ায় বছরে দেড় লাখ মানুষ পাচারের শিকার হয়। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার তথ্যানুযায়ী গত আট বছরে প্রায় দেড় লাখ মানুষ বঙ্গোপসাগর দিয়ে মানব পাচারের শিকার হয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে অন্তত দেড় হাজার মানুষ মারা গেছে। মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত অপরাধী চক্র পাচারের শিকার ব্যক্তিদের বিদেশে আটক করে তাদের পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণও আদায় করে অনেক সময়। মানব পাচার দেশের ভাবমূর্তি এবং হাজার হাজার মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করলেও অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে। গত সাত বছরে এ-সংক্রান্ত মামলার মাত্র ৫ শতাংশের নিষ্পত্তি হয়েছে। সাজাপ্রাপ্তের সংখ্যাও নগণ্য। পাচার বন্ধে এ-সংক্রান্ত বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন যেমন জরুরি তেমন পাচারকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কড়া মনোভাব থাকতে হবে; যা এখন সময়েরই দাবি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর