মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও অন্যান্য

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও অন্যান্য

আবার সেই বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজামের অসাধারণ লেখা ‘যত দোষ নন্দ ঘোষ বাকি সবাই সাধু’ হতে পারে গল্প। কিন্তু মানুষ ধরে নেবে বাস্তব। লেখাটি সুন্দর, অতি সুন্দর। এমনই হয়। এটি পড়লে পাঠক অনেক কিছু ভাবতে পারবে, অনেক চিন্তার খোরাক জুটবে। আমার যেমন জুটেছে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নামে একজন লোক ছিলেন এপারে। মাত্র কদিন হয় তিনি এপার থেকে ওপারে চলে গেছেন। বলব কপাল ভালো তার। বাবার বাড়ি কুচবিহারে। জন্মেছিলেন নানাবাড়ি রংপুরে। সেখানেই মাটি পেলেন। এটা কম সার্থকতা নয়। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। জীবন দিতে পারিনি; কিন্তু রক্ত দিয়েছি। যে পরিমাণ রক্ত ঝরলে জীবন যায় তার চেয়ে খুব কম রক্ত ঝরেনি। তবু জীবন যায়নি, বেঁচে আছি। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিলেন পাকিস্তানে, ছিলেন পাকিস্তানি। তার পরও সেনাপ্রধান হয়েছেন, রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। এটা এক অসাধারণ সত্য, কোনো স্বৈরশাসক ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভালোভাবে জীবন কাটাতে পারেনি। টানাপড়েন যতই থাকুক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ একটা লম্বা জীবন কাটিয়েছেন। কোনো স্বৈরশাসক ক্ষমতাচ্যুত হয়ে নির্বাচনে অংশ নেননি। বিজয়ী হওয়া তো দূরের কথা। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তা পেরেছেন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে একসময় প্রধান দুই বিরোধী দলের নেতা-নেত্রী শেখ হাসিনা ও দেশনেত্রী খালেদা জিয়া দুজনের দেড় শ দেড় শ তিন শ সিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ছিল। যেটা শুনে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদই তড়িঘড়ি আইন করেছিলেন কেউ পাঁচটির বেশি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না। যেটা এখন তিনটিতে নেমেছে। কেউ একই সঙ্গে তিনটি আসনের বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না। তাই এরশাদ দুবার পাঁচটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সবকটিতেই দুবার জয়ী হয়েছিলেন। তারপর তিনটিতে সীমা নির্ধারণ করা হলে সে তিনটিতেও জয়ী হয়েছিলেন। মোট কথা, যেভাবেই হোক ক্ষমতাচ্যুত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে একবারও পরাজিত হননি। যেমনটা ভারতের মালদার মুকুটহীন সম্রাট এ বি এ গণি খান চৌধুরী কখনো নির্বাচনে পরাজিত হননি। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে রংপুরের মানুষ অনেক দিয়েছে। যা দেওয়া সম্ভব তার চেয়েও বেশি দিয়েছে। জনগণ থেকে দূরে রাখতে সিদ্ধান্ত হয়েছিল ঢাকার সেনানিবাসে কবর দেওয়ার। কিন্তু রংপুরের মানুষ তাদের প্রিয় মানুষকে রংপুর থেকে আনতে দেয়নি। তাদের মাটিতেই রেখেছে- এটাই হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পরম পাওয়া। এখন আল্লাহ তাকে দয়া করলে তার চেয়ে সৌভাগ্যবান আর কেউ হবে না। তবে এখন জাতীয় পার্টিতে মারাত্মক দ্বন্দ্ব চলবে। যদি বিরোধী দলের নেতা হন রওশন এরশাদ, চেয়ারম্যান জি এম কাদের, সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান রাঙ্গা তাহলে সবাই রংপুরের দল বলবে, পারিবারিক দল বলবে। এ নিয়ে পথ চলতে জাতীয় পার্টির বিজ্ঞ নেতৃবৃন্দ কী করেন তাই দেখার বিষয়। নিশ্চয়ই ভবিষ্যতে আমরা জাতীয় পার্টির সফলতা-ব্যর্থতা দেখতে পাব। আমার আজকের আলোচনা জাতীয় পার্টি নিয়ে নয়, আমার আলোচনা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে নিয়ে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কথা ভাবলেই কবি আবুবকর সিদ্দিকের মেয়ে বিদিশার কথা মনে পড়ে। বিদিশা আমার ছোট বোন শাহানার থেকেও ১০ বছরের ছোট। ছোট থাকতেই বিয়ে হয়েছিল এক ব্রিটিশ নাগরিকের সঙ্গে। সেভাবেই সে বড় হয়েছিল। তার বাচ্চাও আছে। তাদের বিদিশা অসম্ভব ভালোবাসে। কী করে যে এরশাদের সঙ্গে তার পরিচয়, তারপর বিয়ে এবং এরিকের জন্ম এসবের কিছুই জানতাম না। এরশাদের ভাবনা প্রাদেশিক সরকার। ভাবনাটা জাসদেরও। অনেক দিন আগে থেকেই তারা প্রদেশের আন্দোলন করছিল। সেই দাবি নিয়ে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ হোটেল শেরাটনে এক অসাধারণ বৈঠক ডেকেছিলেন। পাঁচ-সাত শর ওপরে নামিদামি মানুষ ছিলেন। আমন্ত্রণ পেয়ে আমিও গিয়েছিলাম। সত্যিকার অর্থেই একটি ভালো আলোচনা হয়েছিল। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও জাতীয় পার্টির মূল নেতারা যেখানে বসেছিলেন আমি সরাসরি তার উল্টো দিকে বসেছিলাম। আমাদের ডানে বাঁয়ে পেছনে অসংখ্য চেয়ার ছিল। বিরতির সময় বিদিশা এসে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করেন। কিছুটা বিব্রত কিছুটা শিহরিত হয়েছিলাম। খাওয়া-দাওয়া শেষে আবার যখন সভা শুরু হয় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, ‘জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দ এবং আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ! আপনারা দেখেছেন আমার স্ত্রী বিদিশা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করেছেন। আমার মত নিয়েই তা করেছেন। বাঙালি জাতির জীবনে মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে শ্রেষ্ঠ সম্পদ। আর বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম মুক্তিযুদ্ধের শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাকে আমার স্ত্রী পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে পারায় আমি গর্ববোধ করছি। আমার জীবনে সব থেকে বড় ব্যর্থতা মুক্তিযোদ্ধা হতে পারিনি, মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে পারিনি। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানের মধ্য দিয়ে আমি আমার মুক্তিযুদ্ধে পিছিয়ে পড়ার বা অংশ নিতে না পারার ব্যর্থতাকে কাটিয়ে উঠতে চাই। সে ক্ষেত্রে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম আমাদের দুজনের কাছে শ্রেষ্ঠ সম্মানের।’ এমনিই আমি ভালোবাসার মানুষ, সত্যের সাধক। তাই হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সেদিনের কথাগুলো আমাকে সত্যিই অভাবনীয় নাড়া দিয়েছিল। এরপর এরশাদ-বিদিশা বেশ কয়েকবার এরিককে নিয়ে আমার বাবর রোডের ভাঙা বাড়িতে আসেন। কতজনের বসার ঘরে এরশাদের ছবি। কিন্তু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বসার ঘরে আমার কোলে এরিকের ছবি শোভা পেতে দেখেছি। ব্যক্তিজীবনে দারুণ মিশুক মানুষ ছিলেন। অসম্ভব বিনয়ী ছিলেন তিনি। মনে পড়ে একদিন নিজে থেকেই আমার বাড়িতে দাওয়াত নিয়েছিলেন। খাবার খেতে খুব পছন্দ করতেন। আমাকে আট-দশবার তার বাড়িতে খাইয়েছেন। আমার বাড়িতে চার-পাঁচবার আমার স্ত্রী নাসরীনের হাতের রান্না খেয়েছেন। একবারের কথা তিনি কখনো ভুলতেন না। অন্যকে খাওয়াতে এমনিতেই আমার স্ত্রীর খুব আনন্দ। আমার মা যেমন শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান- তারপর যত নেতা আছেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী, মিজানুর রহমান চৌধুরী; কার কথা বলব যুবনেতা কে এম ওবায়দুর রহমান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, শেখ ফজলুল হক মণি, জননেতা আবদুর রাজ্জাক, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, আবদুল জলিল, নূরে আলম সিদ্দিকী, আবদুল কুদ্দুস মাখন, আ স ম আবদুর রব তারও পরে শেখ শহীদ, মনিরুল ইসলাম, নীলফামারীর আবদুর রউফ, নোয়াখালীর খালেদ মোহাম্মদ আলী, শাজাহান সিরাজ, আল মুজাহিদী, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু- মনে পড়ার মতো কেউ নেই যারা আমার মায়ের হাতের রান্না খাননি। বঙ্গবন্ধু টাঙ্গাইলের এদিক-ওদিক গেলে আগেই জানিয়ে দিতেন, মায়ের হাতের খাবার খাবেন। আমার স্ত্রী অত ভালো রাঁধতে পারেন না। কিন্তু কখনো-সখনো মায়ের মতোই রান্না করেন। সেবারও তাই করেছিলেন। মাছ-মাংস, ভাজা-ভাজি অনেক কিছু ছিল। কিন্তু কে যেন ভৈরব থেকে ১৫-২০ কেজির রুই মাছ পাঠিয়েছিল। যেমন মাঝেসাঝেই নারায়ণগঞ্জের নাসিম ওসমান রুই মাছ পাঠাতেন। বিদিশার সঙ্গে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ খেতে বসে সেই রুই মাছ মুখে দিয়ে এত খুশি হয়েছিলেন এরপর এই এক যুগ যখন যেখানেই দেখা হয়েছে সেই রুই মাছের কথা বলতে কখনো ভোলেননি। যেমনটা ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির স্ত্রী শুভ্রা মুখার্জি বাবর রোডের বাড়িতে আমার স্ত্রীর ইলিশ ভাজার কথা কখনো ভুলতেন না। বিদিশার কারণে আমার সঙ্গে একটা আস্থা এবং পারিবারিক বন্ধন সৃষ্টি হয়েছিল। এরশাদের চাইতেও বিদিশা আমাকে বেশি ভালোবাসতেন, বিশ্বাস করতেন। তাই তাদের যে কোনো সুবিধা-অসুবিধায় আমাকে জড়াতে চেষ্টা করতেন। এরশাদ-বিদিশার বিচ্ছেদ আমাকে ভীষণ নাড়া দিয়েছিল। আমরা সারা জীবন সোজা পথে হেঁটেছি। কারও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে সরকার এমন হাত ঘোরাতে পারে কল্পনায়ও ছিল না। সরকার থেকে বলা হয়েছিল, বিদিশা হয় বিদেশে চলে যাক, না হলে একজন আরেকজনকে তালাক দিক। ’৮২ সালে আমার বিয়ে নিয়েও তখনকার প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান অমন পাওয়ার দেখিয়েছিলেন। কনেসহ সবার পাসপোর্ট নিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু এরশাদ-বিদিশার ব্যাপার ছিল তার চেয়েও চরম দুর্ভাগ্যের। শুনেছি, তারেক ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এই পরিকল্পনার প্রধান উদ্যোক্তা। তারা দুজনই শিকদার মেডিকেলে গিয়ে হুমকি দিয়েছিলেন। তা কার্যকর হয়েছিল। শেষ পর্যায়ে বিদিশাকে এরশাদের টেলিফোন ও কলম-পেনসিল চুরির দায়ে গ্রেফতার করা হয়েছিল। থানায় রেখে তাকে শোবার জন্য কোনো বিছানাপত্রও দেওয়া হয়নি। মাটিতে খবরের কাগজ বিছিয়ে বসে ছিলেন তিনি। আমি থানায় ফোন করেছিলাম। ওসি ‘স্যার স্যার’ বলে পাগল হয়ে গিয়েছিলেন। পরে শুনেছি আমার ফোন নিয়ে দু-চারজন কটূক্তিও করেছেন। করতেই পারেন। অসৎ লোকেরা কাউকেই সৎ ভাবে না। তাই তাদের কটূক্তির শেষ নেই। ওর পরে বেশ কয়েকবার বাবরের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। কারণ, বাবরকে আমি খুব স্নেহের চোখে দেখতাম, ভালোবাসতাম। তাই বলেছিলাম, এরশাদ-বিদিশার বিচ্ছেদ ঘটিয়ে কোনো ভালো কাজ করনি। শুনেছি, নামাজ না পড়লে তোমার স্ত্রী সেই ড্রাইভারের গাড়িতে ওঠে না, বাসায় কাজ করা লোকদের সঙ্গে কথা বলে না। আর তুমি একটি সংসার ভেঙে দিলে? কারও সংসার ভাঙলে আল্লাহর আরশ কেঁপে ওঠে। তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারেক রহমানের সঙ্গে এ নিয়ে কোনো কথা হয়নি। কিন্তু কাজটি যে ভালো হয়নি তা সবাই মানে এবং সবাই জানে। আল্লাহ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ক্ষমা করুন, তাকে বেহেশতবাসী করুন। দেশ কেমন যেন একটা অনাচারের চারণভূমিতে পরিণত হচ্ছে। এত গুজব পাকিস্তান আমলেও শুনিনি। পদ্মা সেতুতে মানুষ লাগবে, শিশুর মাথা লাগবে- এ যে কী আজব ব্যাপার কাউকে বলে বোঝাতে পারব না। ১৯৭২-’৭৫ আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের নির্মাণ প্রতিষ্ঠান সোনার বাংলা প্রকৌশলিক সংস্থা (প্রা.) লি. এক শ-সোয়া শ ব্রিজ-কালভার্ট করেছিল। কিন্তু কোথাও একটা হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল বা কাকপক্ষীও লাগেনি। ১৯৭৫-’৯০ সংস্থাটি বন্ধ ছিল। আবার ’৯০-এর এপ্রিল-মে থেকে শুরু করে ২০০৭ সাল পর্যন্ত সোনার বাংলা প্রকৌশলিক সংস্থা (প্রা.) লি. ছোট-বড় মিলিয়ে আরও ২৫-৩০টি সেতু নির্মাণ করেছে। কোনোখানে একটি টিকটিকি বা তেলাচোরারও প্রয়োজন হয়নি। এ আমার জীবনের কড়কড়ে অভিজ্ঞতা। গণপিটুনিতে মানুষ হত্যা- একটা দেশ বা জাতি সভ্যতা থেকে কতটা পিছিয়ে গেলে এমন হয়, প্রশাসনের কেউ ভেবে দেখেনি। রাস্তাঘাটে মাইকিং হচ্ছে- গুজবে কান দেবেন না। কেউ শোনে না। কারণ সরকারের ওপর, পুলিশ প্রশাসনের ওপর কোনো আস্থা নেই। বরগুনার রিফাত হত্যার প্রধান সাক্ষী মিন্নিকে আসামি করা- এটা পেনাল কোডের কোনো আইনে পড়ে না। প্রধান আসামি নয়ন বন্ডকে গ্রেফতার করে হত্যা- লোকজন বলছে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে প্রভাবশালীদের ক্ষতি হতে পারে তাই নয়ন বন্ডের মুখ চিরতরে বন্ধ করা হয়েছে। মামলার গতি-প্রকৃতি ভিন্ন খাতে চালাতে মিন্নিকে আসামি করা- এতে পুলিশ প্রশাসনের দুর্নাম ছাড়া সুনামের কোনো সম্ভাবনা নেই। আমি একজন আইনবিদের ছেলে। বাবার কোলে বসে আইনের ‘অ, আ, ক, খ’ যা শিখেছি তাতে মিন্নিকে আসামি করা পুলিশের কোনো সুযোগ নেই। বিচারক বিচার করবেন খুনের, কাশিমবাজার কুটির ষড়যন্ত্রের নয়। কারা কীভাবে নীলনকশা করেছে, ষড়যন্ত্র করেছে সেই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যদি মিন্নি জড়িয়েও থাকে; ষড়যন্ত্রে জড়ানো কেন, হত্যাকারীদের খবর দিয়ে এনে ওইভাবে মারিয়ে থাকে তাও সে আসামি হবে না। বিচারক তার বিচারও করতে পারবে না। কারণ, হত্যাকা-টা ঘটেছে প্রকাশ্য দিবালোকে তাও আবার ছবি তুলে। ছবিতে মিন্নি রিফাতকে মারছে এ রকম কোনো প্রমাণ নেই। বরং একজন নারী হয়ে নির্বিবাদে একজন মানুষকে হত্যার যতটা সম্ভব বাধা দিয়েছে। তাই প্রত্যক্ষ হত্যায় মিন্নি জড়িত নয় এটা সূর্যের আলোর মতো পরিষ্কার। ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু আমার সময় এমপি ছিলেন। বরগুনা আমার ভাগ্নির শ্বশুরবাড়ি। ’৭৫ সালে বরগুনার নিজাম কেন্দ্রীয় যুবলীগের সব থেকে ছোট সদস্য ছিল। তখন ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর নাম শুনিনি। তার ছেলে সুনাম দেবনাথ শম্ভু কবে জন্মেছে জানি না। তবে পত্রপত্রিকায় যা দেখছি এর কোনো কিছুই ভালো নয়। কতখানি চাপ থাকলে একটা জেলা সদর কোর্টে একজন উকিলও এ রকম একটি ছোট্ট মেয়ের পক্ষে দাঁড়ায় না। দ্বিতীয়বার যারা দাঁড়িয়েছেন তারা শম্ভুর বাড়ি গিয়ে তার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তার ছেলে সুনাম দেবনাথ শম্ভুর আশীর্বাদ নিয়ে কোর্টে দাঁড়িয়েছে। কোর্ট আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন নামঞ্জুর করেছে। এমন সাজানো নাটকের যা হওয়ার তাই হয়েছে। ক্ষতি হচ্ছে দেশের, ক্ষতি হচ্ছে দেশের নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। আমার বহুদিনের সহকর্মী প্রবীণ আইনজীবী হাসান আলী রেজা এক সপ্তাহ নিখোঁজ থেকে তার লাশ লৌহজং নদীতে ভেসে উঠেছে। যার লিখিত পড়িত বয়স ৭৬। আরও তিন বছর আগে তিনি জন্মেছেন। নিখোঁজের পরে পুলিশ প্রশাসন আইবি-ডিআইবি-সিআইডি বলেছিল এটা নারীঘটিত ব্যাপার। বলা হচ্ছিল বাসা থেকে বেরোলে এক মোটরসাইকেল আরোহী তাকে গাড়ির পিছে তুলে নিয়ে যায়। সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ায় সে লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে। গুম হওয়ার আগে একই নম্বর থেকে তিন-চার বার ফোন এসেছে হাসান আলী রেজার ফোনে। সে লোককেও গ্রেফতার করা হয়েছে। সেই ফোনের জায়গা খুঁজে এক মহিলাকে পাওয়া গেছে। তিনি বলেছেন, রেজা সাহেব তার বাড়িতে এলে হঠাৎ করেই মারা যান। ভয় পেয়ে কাউকে কিছু না বলে লাশ লুকিয়ে রাখেন। সুবিধামতো রাতের কোনো একসময় বাড়ির পাশে লৌহজং নদীতে লাশ ফেলে দেন। কিন্তু পুলিশই আবার বলছে লাশ অত দিন পানিতে ডোবা ছিল না। কী বলি প-িতদের। কোনো মানুষ কারও বাড়িতে গিয়ে অসুস্থ হলে বা মরেও গেলে চিৎকার-চেঁচামেচি করে প্রতিবেশীদের জড়ো করেন, হসপিটাল অথবা নার্সিং হোমে নিয়ে যান। ডাক্তাররা মৃত ঘোষণা করেন, কোনো ব্যক্তি বা কোনো মহিলা নন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তেমনটাই হয়েছে। বলা হচ্ছে, নারীঘটিত ব্যাপার। হাসান আলী রেজা বেশ কয়েক বছর একেবারে ভেঙে পড়ে ছিলেন। কেউ না ধরলে সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠতে পারতেন না। সেই মানুষকে নিয়ে পুলিশের নারীঘটিত ব্যাপার বলায় সুনাম নয়, ব্যর্থতাই ফুটে ওঠে। এসব নিয়ে কাকে বলব। প্রধানমন্ত্রীকেই বলছি, আপনি দেশের সর্বোদয় নেতা। যা হচ্ছে সুনাম-দুর্নাম আপনারই হচ্ছে। আশপাশে আপনার ছায়ারা আপনাকে উজ্জ্বল নয়, ডোবাবার চেষ্টা করছে। এ রকম আইনশৃঙ্খলা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী লোকজন নিয়ে আর যাই হোক সুন্দর সমাজ চলতে পারে না।

 

লেখক : রাজনীতিক।

www.ksjleague.com

 

সর্বশেষ খবর