বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

কাবা জিয়ারত শেষে যাব মদিনায়

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

কাবা জিয়ারত শেষে যাব মদিনায়

প্রেমিক বান্দারা ছুটে যাচ্ছেন কাবাপ্রাঙ্গণে। লাব্বাইকার গান গেয়ে এক মাস মক্কার অলিগলিতে ঘুরে বেড়াবেন তারা। ঘুরবেন প্রিয় নবীর প্রিয় শহর মদিনা মুনাওয়ারায়। দাঁড়াবেন রওজাতুন্নবী (সা.)-এর মতো পৃথিবীর মধুরতম জায়গাটিতে। ভাবতেই হৃদয়মন কেমন শিউরে ওঠে। ভাবনার ডানায় ভেসে যেন আমিও উড়ে গেছি নবীজির শহরে। দাঁড়িয়েছি ঠিক নবীজির কদম বরাবর। হৃদয়ের জমানো বিন্দু বিন্দু ভালোবাসা ঢেলে কাঁপা গলায় বলছি, আসসালাতু আসসালামু আলাইকা ইয়া রসুলাল্লাহ। আসসালাতু আসসালামু আলাইকা ইয়া হাবিবাল্লাহ। এবার যারা হজে গিয়েছেন, বেশির ভাগ মানুষেরই তো প্রথম হজ এটি। আবার যারা যেতে পারেননি, প্রথম হজের ঘ্রাণ যাদের নাকে লাগেনি, তারাও তো হৃদয়ে যখন জোয়ার আসে ভাবনার ভেলায় ভেসে চলে যান নবীজির রওজায়। যারা গিয়েছেন বার বার, সন্দেহ নেই, তারাও মনে মনে নবীজির রওজার সামনে দাঁড়ান, সালাম বলেন। দরুদ পড়েন। নিজের অজান্তেই হু হু করে কেঁদে ওঠেন। এভাবে যারা নবীজিকে ভাবেন, নবীজির জন্য কাঁদেন, নবীজিকে অনুভব করেন হৃদয়ের গভীরে, তাদের জন্যই নবীজি সুপারিশ করবেন কিয়ামতের কঠিন দিনে।

হজের মূল আকর্ষণ যদিও কাবা, কিন্তু মোমিন হৃদয়ের টান মদিনার প্রতিই বেশি। কারণ, মদিনায় ঘুমিয়ে আছেন কাবার প্রভু যার প্রেমে দিওয়ানা সেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। উম্মতের মায়ায় যে নবী সারাটি জীবন কেঁদেছেন, এখনো রওজায় শুয়ে শুয়ে ইয়া উম্মতি ইয়া উম্মতি বলে কাঁদছেন, সেই নবীর কদমে সালাত-সালাম পেশ করার স্বপ্ন তো উম্মত দেখতেই পারে। আবার যে উম্মত নবীজির কদমে দাঁড়িয়ে সালাম বলবে, তার মর্যাদা অন্যসব উম্মতের চেয়ে একটু বেশি হওয়াটাই স্বাভাবিক। হাদিসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার কবর জিয়ারত করল, সে যেন আমার সঙ্গে জীবিত অবস্থাতেই সাক্ষাৎ করল।’ এ হাদিসের ব্যাখ্যায় শাহ আবদুল হক মোহাদ্দেস দেহলভি (রহ.) ‘মাদারেজুন নবুয়ত’ গ্রন্থে লিখেন, ‘যেহেতু নবীজি (সা.) হায়াতুন্নবী, সে ক্ষেত্রে কেউ তাঁর কবর জিয়ারত করাকে হজরতের জীবদ্দশায় সাক্ষাৎ করার মতোই গণ্য হবে।’ আরেক হাদিসে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার কবর জিয়ারত করবে, তার জন্য শাফায়াত করা আমার ওপর ওয়াজিব হয়ে যায়।’ এ হাদিসের ব্যাখ্যায় দেহলভি (রহ.) বলেন, ‘উম্মত যখন নবীপ্রেমে দিওয়ানা হয়ে নবীর রওজায় ছুটে আসে, তখন প্রতিদান হিসেবে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতের জন্য শাফায়াত করাকে নিজের জন্য ওয়াজিব করে নেন।’ এটাই হলো প্রেমের খেলা। প্রেমিক তো বিনা স্বার্থেই ভালোবাসবে, তবু প্রেমের অভাবনীয় প্রতিদান সে পাবে। যারা নবীজির রওজা জিয়ারত করবেন, তাদের উদ্দেশে আল্লামা কাজী আয়াজ তার বিখ্যাত ‘আশ-শেফা’ গ্রন্থে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। কাজী আয়াজ (রহ.) বলেন, ‘হে নবীপ্রেমিক! তুমি যখন নবীর রওজা জিয়ারতের  ইচ্ছা করবে, খুব পবিত্র পোশাক ও পবিত্র মন নিয়ে নবীর দরবারে হাজির হবে। জিয়ারতের সময়টুকু মন থেকে নবী ছাড়া সব চিন্তা ঝেড়ে ফেলবে। সম্ভব হলে সুগন্ধি মেখে নেবে। কাঁপা কাঁপা পায়ে রওজার দিকে এগোবে। মনে রাখবে, তুমি যার জিয়ারত করছ, তিনি মৃত নন, জীবিতই আছেন। তোমাকে দেখছেন। একটু পর তুমি যে সালাম বলবে, সে সালাম তিনি শুনবেন এবং সালাম গ্রহণ করবেন। পৃথিবীতে এমন ভাগ্যবান মানুষও জম্মেছে, যারা সালাম বলার সঙ্গে সঙ্গে রওজা থেকে সালামের উত্তর ভেসে আসতে শোনা গেছে। তুমিও যদি ভক্তিভরা কণ্ঠে সালাম বলতে পার, তোমার কানেও ভেসে আসতে পারে মধুর কণ্ঠের সালামের জবাব! এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।’

হে জিয়ারতকারী! খুব আদবের সঙ্গে নবীজির রওজার সামনে দাঁড়াবে। হৃদয়ের সব আবেগ উজাড় করে বলবে, আসসালাতু আসসালামু আলাইকা ইয়া রসুলুল্লাহ। আসসালাতু আসসালামু আলাইকা ইয়া হাবিবাল্লাহ।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি।

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর