মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

লতিফ সিদ্দিকীর মুক্তি ও নেত্রীর জাতীয় সংলাপ

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

লতিফ সিদ্দিকীর মুক্তি ও নেত্রীর জাতীয় সংলাপ

শুভ শুভ শুভদিন, শেখ হাসিনার ৭৩তম জন্মদিন। এই মহান দিনে তাঁর সুস্বাস্থ্য, কল্যাণময় জীবন কামনা করছি এবং সেই সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতীয় উপহাইকমিশনারের উপস্থিতিতে এক সেমিনারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানের সঙ্গে শুধু ভারতীয় উপহাইকমিশনারকে খুশি করার জন্য ‘জয় হিন্দ’ স্লোগান দেশদ্রোহিতার শামিল। ভিসির এ কার্যকলাপের আমি তীব্র নিন্দা ও তাকে ভিসির পদ থেকে বরখাস্তের দাবি জানাচ্ছি। ‘এই খোকা, এখনই পাঁচ টাকা বিকাশ কর?’ খোকা তো অবাক! খোকা মানে হাবিবুর রহমান তালুকদার বীরপ্রতীক, ইসমত কাদির গামার সঙ্গে একসময় ছাত্রলীগ করেছেন। সেই ইসমত কাদির গামারই ৩ সেপ্টেম্বর সকাল সকাল এই সংলাপ। ফোন করেছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার বীরপ্রতীককে পাঁচ টাকা চেয়ে। কারণ বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রতি মঙ্গলবার আমার লেখা ছাপা হয় আর তিনি তা নিয়মিত পড়েন। ৩ সেপ্টেম্বর হঠাৎ শরীর খারাপ হওয়ায় বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। যে কারণে লিখতে পারিনি। তাই ইসমত কাদির গামা বাংলাদেশ প্রতিদিন কিনে লেখা না পেয়েই ফোন করেছেন- ‘খোকা, লিডারের লেখা নেই। পত্রিকা দিয়ে আমি কী করব? বিকাশে টাকা পাঠাও।’ খোকা তো অবাক! কী করবেন। পরের সপ্তাহে ইসমত কাদির গামাকে ফোন করেন খোকা, ‘আজ তো লেখা পেয়েছেন। আমাকে আজ ১০ টাকা পাঠান।’ কথাটা শুনে বড় ভালো লেগেছে। লিখতে জানি না, ভালো করে নিজের ব্যথার কথা বলতে জানি না তার পরও যদি কারও ভালো লাগে সে তো তাঁরই কৃতিত্ব, তাঁরই দান। ইসমত কাদির গামা আমাদের অতিপ্রিয়জন। ১৯৬৭-৬৮ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আমরা একইভাবে কাছাকাছি আছি। এর মধ্যে কত উথাল-পাথার গেছে আমাদের জীবনের ওপর দিয়ে তার কিছু কিছু কেউ জানে, কেউ জানে না। বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর আমরা সবাই দারুণ কষ্ট করেছি। ঢাকা থেকে জামালপুর ফেরিঘাট, সেখান থেকে হেঁটে তন্তর সীমান্ত এক রাত এক দিন না খেয়ে যখন বিএসএফ ক্যাম্পে ভাতের নলা মুখে দিয়ে কী যন্ত্রণা পেয়েছিলাম বলে বোঝাতে পারব না। শুনেছি, মা যখন সন্তান প্রসব করেন তখন মারাত্মক যন্ত্রণা হয়, সন্তানের মুখ দেখে মা তা ভুলে যান। প্রথম নলা মুখে দিয়ে শুকনো গলায় মায়ের সন্তান প্রসবের ব্যথা অনুভব করেছিলাম। ইসমত কাদির গামাও একসময় না খেয়ে ছিলেন। যেখানেই দেখা হয় কথা উঠলেই তার সাত দিন না খেয়ে থাকার কথা বলতে ভোলেন না। তবে আমি তার সাত দিন না খেয়ে থাকার কথা আজ পর্যন্ত বিশ্বাস করতে পারি না। তবে দু-তিন দিন যে না খেয়ে ছিলেন তাতে কখনো সন্দেহ জাগে না। ইসমত কাদির গামা স্বাধীনতার পর ছাত্রলীগ ভাগ হলে সে যে কী দুর্দান্ত পরিশ্রম করেছেন কল্পনা করা যায় না। ফজলু-চুন্নু এদের কথা কী করে যেন সবাই ভুলে গেল। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর একদিন কলকাতায় নিজাম প্যালেসে ইসমত কাদির গামার সঙ্গে দেখা। সেখানে তার স্ত্রী অধ্যক্ষ মাহফুজা চৌধুরী পারভীন ছিলেন। নিজাম প্যালেসে জায়গা হয়েছে, কিন্তু পকেটে কানাকড়িও ছিল না। বাইরে বেরিয়ে টানা রিকশায় চড়ারও সংগতি ছিল না। এদের কথা যখন ভাবী তখন সত্যিই খারাপ লাগে, কী করে বউটা মারা গেলেন এখনো বিচার হলো না।

সেদিন গিয়েছিলাম আবদুল মোতালেব খান পাঠানের ছেলের বিয়েতে এমপি হোস্টেলের ক্লাবে। মোতালেব খান পাঠান একবার জাসদের এমপি হয়েছিলেন। খুব সাদাসিধা মানুষ। ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার যখন প্রতিবাদ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলাম তখন অনেকে অনেকভাবে সাহায্য করেছেন। তাই তার ছেলের বিয়েতে আমাকে নেওয়ার জন্য ভদ্রলোক মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। সস্ত্রীক গিয়েছিলাম তার ছেলের বউভাতে। নির্মলেন্দু গুণের সঙ্গে দেখা। শরীর অনেকটা ভেঙে পড়েছে। জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘কী বলি ভাই, বঙ্গবন্ধুর নামে কবিতা লিখে লতিফ সিদ্দিকীর হাতে দিয়েছিলাম ময়মনসিংহ জেলে। পাকিস্তান আমলে সেদিনও লতিফ সিদ্দিকী জেলে, আজ বাংলাদেশ আজো জেলে- এ কি সহ্য হয়?’ বলেছিলাম, কী করবেন? সবই নিয়তি। সত্যিই আজ কিছু দিন আমারও বড় বিরক্ত লাগছে। মানুষজনকে এভাবে নির্যাতন করা যায়, নাগরিক অধিকার ক্ষুণœ করা যায়- কখনো কল্পনাও করিনি। দুদকের যে ঠুনকো জামিনযোগ্য ধারার একটি অভিযোগে লতিফ সিদ্দিকীকে জেলখানায় রাখা হয়েছে, মামলা যখন খারিজ হয়ে যাবে তখন তাকে নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করার দায় কে নেবে? আজ যেখানে ধরলেই শত কোটি, হাজার কোটি পাওয়া যায়, সেখানে পাটমন্ত্রী হিসেবে তার দ্বারা ২৩ লাখ টাকা দেশের ক্ষতির অভিযোগ- এটা কি সত্যিই ধোপে টেকে? ছয়-সাত মাস আগে যখন তিনি বগুড়া কোর্টে হাজির হয়েছিলেন তখনই কোর্ট বলতে পারত মামলাটি আমলযোগ্য নয়। তা না বলে আদালত লতিফ সিদ্দিকীকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। আমরা মনে করেছিলাম, পরদিন জামিন প্রার্থনা করলে তাকে জামিনে মুক্তি দিয়ে দেওয়া হবে। যে কোনো দেওয়ানি বা ফৌজদারি মামলায় আসামি যদি ৬০ বছরের ওপরে, শিক্ষা-দীক্ষায় যদি ডিগ্রি পাস, সমাজে যদি সামান্য নামধাম থাকে, হারিয়ে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা না থাকে তাহলে তিনি বিচারের আগে জামিনে মুক্ত থাকেন। এমনকি খুনের মামলা, ডাকাতির মামলা ও অন্যান্য বহু চাঞ্চল্যকর মামলায়ও নিষ্পত্তির আগ পর্যন্ত আসামিরা জামিনে মুক্ত থাকেন। এটা তো কোনো মামলাই নয়, এবং আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি, মামলাটি শেষে অবশ্য অবশ্যই খারিজ হয়ে যাবে। কিন্তু বৃদ্ধ বয়সে অসুস্থ শরীরে একজন স্বাধীনতা সংগ্রামীকে বিনা বিচারে কারানির্যাতন ভোগ করতে হচ্ছে। গ্রেফতারের ১০-১২ দিনের মধ্যে জামিনের জন্য হাই কোর্টে আবেদন করা হয়। হাই কোর্ট সরাসরি কয়েক মাসের জামিন দিয়ে নিম্ন আদালতে পাঠিয়ে দিতে পারত। তা না করে নিয়মমতো চার সপ্তাহ সময় দিয়েছিল, কেন তাকে জামিন দেওয়া হবে না? নোটিস ফেরত এসেছে কিনা জানি না। কিন্তু প্রায় ১৬ সপ্তাহ মামলাটি আর কোর্টেই ওঠেনি। বয়সী মানুষ জেলে কাটাচ্ছেন, কোনো প্রতিকার নেই। তাই লতিফ সিদ্দিকীর নিঃশর্ত মুক্তি চাই। ৮০ বছরের ওপরে একজন বয়সী মানুষকে আর যা হোক এভাবে বন্দী রাখা যায় না। এটা মানবতাবিরোধী এক চরম অন্যায়। আজ কিছু দিন ক্যাসিনো এবং অন্যান্য ব্যাপারে যেখানেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হাত দিচ্ছে সেখানেই বেরিয়ে আসছে এক অভাবনীয় দুষ্কর্ম। জি কে শামীম এক মন্ত্রণালয় বা বিভাগে যদি ১০ হাজার কোটি টাকার কাজ পান, ২-৩ হাজার কোটি টাকা ঘুষ দেন তাহলে কোনো এক প্রবীণ নেতার সরকারি দায়িত্ব পালনে ২৩ লাখ টাকা রাষ্ট্রীয় ক্ষতির অভিযোগে বিনা বিচারে জেলে রাখা কতটা যুক্তিযুক্ত? তাই প্রধানমন্ত্রীকে এ ব্যাপারটি নিবিড়ভাবে দেখার সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি।

কেন যেন ছেলেবেলা থেকে কোনো কিছু মুখ বুজে সহ্য করতে পারতাম না, এখনো পারি না। ১০-১২ দিন হলো ছাত্রলীগ-যুবলীগ-আওয়ামী লীগের ওপর দুর্বার শুদ্ধি অভিযান চলছে। দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি-সন্ত্রাসীর সঙ্গে যারা জড়িত তারা কেউ রেহাই পাবে না- কথাটা বলা যত সহজ বাস্তবায়ন করা অত সহজ নয়। প্রথমে ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে তাদের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তারপর যুবলীগের পান্ডাদের একের পর এক গ্রেফতার করা হচ্ছে। ক্যাসিনোর বড় বড় রথী-মহারথীকে ধরে এনে খোঁয়াড়ে পোরা হচ্ছে। এ যদি আওয়ামী গোত্র সোজা করার অভিযান হয় তাহলে আমাদের কিছু বলার নেই। আর যদি দেশকে কলুষমুক্ত করার চেষ্টা হয় তাহলে আরও যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তাদের কী হবে? বিএনপি-জামায়াত-জাতীয় পার্টি দাঁত কেলিয়ে হাসছে, বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর যেমন কিছু লোক দাঁত কেলিয়ে হেসেছিল। আজ আওয়ামী ঘরানার দুর্দশা দেখে অনেকেই তেমন দাঁত কেলিয়ে হাসছে। তবে কি তাদের মধ্যে দুর্নীতিপরায়ণ কেউ নেই? কেমন যেন ব্যাপারটা একতরফা মনে হচ্ছে। মনে হয় আওয়ামী ঘরানার লোকদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও এমন দুর্দিন ছিল না। কেউ স্বস্তিতে নেই, সবার মধ্যে একটা ত্রাহি ত্রাহি ভাব। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলেও যৌথ অভিযান হয়েছিল। বিপ্লবী সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের ময়মনসিংহের কলেজ রোডের বাড়ির মাটি খুঁড়ে অস্ত্র খোঁজা হয়েছিল, বঙ্গবন্ধুর সমসাময়িক সিরাজগঞ্জ আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন তালুকদারের বাড়ি তছনছ করা হয়েছিল। আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাড়ি তল্লাশি করা হয়েছিল আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর জন্য। এখনো আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ জীবিত, তিনিই সেসব বলতে পারবেন। তাই কেমন যেন মনে হচ্ছে। শুধু আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ-যুবলীগ; ছাত্রদল-যুবদল-বিএনপির কোনো নামগন্ধ নেই। তাহলে যে সারা জীবন শুনে এলাম, সিক্সটি-ফোরটি তার কী হবে। ব্যাপারগুলো একটু তলিয়ে দেখা দরকার। ঠিক বুঝতে পারছি না, আমরা কোথায় চলেছি। মানুষের মধ্যে কেন যেন কোন স্বতঃস্ফূর্ততা নেই। একটা জাতির সব থেকে বড় চালিকাশক্তি স্বতঃস্ফূর্ততা, উৎফুল্লতা। তা একেবারে তলানিতে ঠেকেছে। বাঙালির যেখানে ১০০ বছর সামনে দেখার কথা সেখানে আমরা আগামীকালের কথা চিন্তা করতে পারছি না- এটা যে কত বড় ক্ষতি, কত অসহায়ত্ব তা অনেকেই ভেবে দেখছেন না। যখন ভাববেন তখন হয়তো সময় থাকবে না। তাই জ্বলনটা একটু বেশি। যে যাই বলুন, বড় বড় কথা বলে নেত্রীকে বাহ্বা দিয়ে অনেকেই মনে করছেন তাঁর কল্যাণ করছেন। আমার তেমন মনে হয় না। সব দায় বা কৃতিত্ব তাঁর ঘাড়ে চাপিয়ে কল্যাণ নয়, বরং বন্ধুবেশে তাঁর সর্বনাশের চেষ্টা করছেন। এই যে প্রতিদিন উন্নয়নের জোয়ারের কথা শুনছি, কার কেমন লাগছে বলতে পারব না। কিন্তু আদতে জিনিসটা অত ভালো হচ্ছে না। মাথাভারী প্রশাসনে কোনো গতি নেই, মেধা নেই। নিজে থেকে কেউ কিছু করে না। সবাই ওপরের দিকে তাকিয়ে থাকে। এখন তো সব ক্ষেত্রে- নেত্রী কী বলবেন। নেত্রী বললে হবে, না বললে হবে না। এটা তো কোনো শুভ উদ্যোগ হতে পারে না। প্রতিটি মানুষের নিজস্ব একটা কর্মক্ষমতা থাকার কথা। নিজস্ব কর্মক্ষমতাহীন কোনো মানুষই জাতির কল্যাণে কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না। শুধু আওয়ামী ঘরানা শুদ্ধ হবে অন্যসব পচা দুর্গন্ধ ছড়াবে- তাহলে তো দেশে সুবাতাস বইবে না। সেটা হয়তো আওয়ামী দুর্গন্ধ হবে না, অন্য গন্ধ তো হবে। দেশকে এই যে অরাজনৈতিক করার চেষ্টা হচ্ছে তা সবাই মিলে প্রতিহত করতে হবে। সবাই মিলে যথাযথ রাজনৈতিক, সামাজিক ও মানবিক কাঠামো গড়ে তুলতে পারলে আমরা যে পাঁকে পড়ে ঘুরপাক খাচ্ছি সেখান থেকে বেরিয়ে আসা খুব একটা কঠিন হওয়ার কথা নয়। তাই ব্যাপারগুলো গভীরভাবে ভেবে দেখা দরকার। কাউকে কোথাও থেকে ছো মেরে ধরে এনে তার ঘর-দুয়ার থেকে বস্তায় বস্তায় সোনাদানা, টাকা-পয়সা উদ্ধার করলেই সমাজ নিষ্কলুষ হয় না। অন্যায় বা দুর্নীতির মাধ্যমে বাক্সভর্তি সোনাদানা, টাকা-পয়সা সংগ্রহের রাস্তা বন্ধ করতে হবে। এটা কবে হবে কীভাবে হবে তা সবাই মিলে বিচার-বিশ্লেষণ করে ঠিক করতে হবে। সেজন্য কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ মনে করে অনতিবিলম্বে সরকারপ্রধান নেত্রী শেখ হাসিনা একটি জাতীয় সংলাপের আয়োজন করুন এবং দেশকে এই দুর্বিপাকের হাত থেকে রক্ষা করায় ভূমিকা রাখুন।

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সরকারপ্রধানের বর্তমান যুগোপযোগী অভিযানকে পূর্ণ সমর্থন জানায়। কিন্তু সেই সঙ্গে শুধু ছাত্রলীগ-যুবলীগ-আওয়ামী লীগ বা সরকারি দলকেই বিশুদ্ধ করলে চলবে না, অন্যান্য দলেও যে দূষণ আছে তা নির্মূল করতে হবে। শুধু রাজনীতিকে নিশ্চিহ্ন করে নয়, প্রশাসনের দুর্নীতি, সমাজের অন্যান্য শ্রেণির দুর্নীতি, ব্যাংক, শেয়ারবাজার লুট, সমাজের অন্য যেসব ধান্ধাবাজ ধুরন্ধর দুষ্কৃতিকারী আছে তাদের অবাধে ফ্রি লাইসেন্স দিলে চলবে না। বহু বছর ধরে লক্ষ্য করছি, সব ঘটনা রাজনৈতিকীকরণ করায় প্রকৃত অপরাধীরা অনেক সময়ই ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেক ঘটনা নিপুণভাবে লক্ষ্য করেছি, রাজনৈতিকীকরণ করায় প্রকৃত অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায়। কারণ যে কোনো ঘটনাতেই আমরা আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জামায়াতকে জড়িয়ে ফেলি। রাজনৈতিক রং দেওয়ার কারণে যারা চুরি-ডাকাতি-রাহাজানি ও অন্যান্য দুষ্কর্ম করে তারা পার পেয়ে যায়। তাদের কেউ কিছুই বলে না। চারদিকে যে বিপুল অর্থের ছড়াছড়ি তাতে তো আমরা দম ফেলতে পারছি না। জাতি একটা মারাত্মক অস্বস্তিতে আছে। তাদের এই অস্বস্তির হাত থেকে উদ্ধার করা সমাজপতি-নেতাদের কর্তব্য। আজকাল রাস্তাঘাটে লোকজন ২ কোটি টাকার জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখা মেনে নিতে পারছে না। রাস্তাঘাটে শুনছি, সম্রাট নেই। আগেই তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। কারণ তার মুখ থেকে যদি আরও বড় কারও নাম বেরিয়ে আসে যারা এখন সম্মানে আছে। রাস্তাঘাটের মানুষের কথা যদি সত্য হয় তাহলে সে তো খুবই ভয়াবহ। এমন হওয়া কোনোমতেই উচিত নয়। তাই সার্বিকভাবে দেশের কল্যাণে সবকিছু নিরাসক্তভাবে ভেবে দেখে অগ্রসর হওয়া উচিত। নেত্রী শেখ হাসিনা তেমনটাই করবেন- এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা।      

 

লেখক : রাজনীতিক।

www.ksjleague.com

সর্বশেষ খবর