মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

কোরআন-সুন্নাহর আলোকে হিজরতের বিধান

মাওলানা শেখ তারেক হাসান মাহদী

কোরআন-সুন্নাহর আলোকে হিজরতের বিধান

হিজরত সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা অত্যাচারিত হয়ে আল্লাহর পথে হিজরত করে, আমি তাদের দুনিয়ায় উত্তম ঠিকানা দান করব। আর আখেরাতের পুরস্কারই শ্রেষ্ঠ। হায়! যদি তারা বুঝত।’ সূরা নাহল, আয়াত ৪১। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা পরে ইমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং তোমাদের সঙ্গে সম্মিলিত হয়ে যুদ্ধ করেছে, তারাও তোমাদেরই অন্তর্ভুক্ত।’ সূরা আনফাল, আয়াত ৭৪।

হিজরত শব্দের আভিধানিক অর্থ ছেড়ে দেওয়া, বর্জন করা, রেখে দেওয়া, ত্যাগ করা ইত্যাদি। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায়, ‘কাফিরদের অত্যাচার-নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে দারুল কুফর তথা কুফুরি ভূখ- ত্যাগ করে দারুল ইসলাম তথা ইসলামী ভূখন্ডে স্থানান্তরিত হওয়াকে হিজরত বলে।’ তাফসিরে রুহুল মাআনি। মোল্লা আলী কারি (রহ.) মিশকাতের ব্যাখ্যাগ্রন্থ মিরকাতে লেখেন, ইসলামের প্রচার-প্রসারের কারণে জন্মভূমি ত্যাগ করাকেও হিজরত বলা হয়। এ ধরনের হিজরতকে মুস্তাহাব হিজরত বলে। ইসলামী আইনবিদরা বলেন, ইসলামের প্রাথমিক যুগে কুফুরি ভূখ- থেকে হিজরত করা মুস্তাহাব ছিল। সে নির্দেশ মোতাবেক একদল সাহাবি আবিসিনিয়ায় হিজরত করেন। পরে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনা মুনাওয়ারায় হিজরত করলে মুসলমানদের জন্য সেখানে হিজরত করা ফরজ হয়ে যায়। কিন্তু অষ্টম হিজরিতে সে বিধান রহিত হয়ে যায়। এর পর থেকে হিজরত আবার মুস্তাহাবের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।

এ প্রসঙ্গে সুনানে আবু দাউদের ‘কিতাবুল জিহাদ’-এর বাবুল হিজরাতি হাল ইনকাতিয়াত’ অধ্যায়ে হজরত মুয়াবিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘হিজরতের হুকুম ততক্ষণ পর্যন্ত রহিত হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তওবার দরজা বন্ধ না হয়। আর তওবার দরজা ততক্ষণ পর্যন্ত বন্ধ হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সূর্য পশ্চিম দিকে উদিত হবে না।’ এ অধ্যায়ে ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মক্কা বিজয়ের পর আর হিজরতের প্রয়োজন নেই। তবে জিহাদ এবং ভালো নিয়তের প্রয়োজন হতে পারে। তোমাদের ওপর আক্রমণ করলে তোমরা আক্রমণ প্রতিহত করবে।’ মুহাদ্দিসরা এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন, মক্কা বিজয়ের পর ফরজ হিজরত রহিত হয়েছে ঠিক তবে মুস্তাহাব হিজরত বলবৎ রয়েছে, কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে।

অমুসলিম দেশ থেকে মুসলিম দেশে হিজরত করা জায়েজ। কোনো মুসলমান যদি এমন কোনো অমুসলিম দেশে বসবাস করে, যেখানে ইসলামের কথা প্রকাশ করা সম্ভব নয়, তাহলে সামর্থ্য থাকলে নারী-পুরুষ সবার জন্য ওই দেশ থেকে হিজরত করা আবশ্যক হয়ে যায়। আর এ ধরনের রাষ্ট্রে কোনো মুসলমান নিজ দেশ ত্যাগ করে বসবাস কিংবা চাকরির উদ্দেশ্যে যাওয়া উচিত নয়। শুধু ইসলামের প্রচার-প্রসারের জন্য জন্য যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন ওলামায়ে কিরাম।

লেখক : মিডিয়া ব্যক্তিত্ব।

সর্বশেষ খবর