সোমবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

মুজিববর্ষ এবং আগামী দিনের বাংলাদেশ

মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মাদ আলী শিকদার, পিএসসি (অব.)

মুজিববর্ষ এবং আগামী দিনের বাংলাদেশ

২০২০ ও ২০২১ বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুটি বছর। ২০২০ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী, আর ২০২১ হবে আমাদের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি, অর্থাৎ সুবর্ণজয়ন্তী। শেখ মুজিব আর বাংলাদেশ এক ও অভিন্ন। একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটি খন্ডিত হয়ে যায়, কোনোটিরই পরিপূর্ণ চিত্র পাওয়া যায় না। তাই দুটি বছরজুড়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, দর্শন, চিন্তা-চেতনা, কর্ম ও মহত্ত্ব নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনার সঙ্গে তার কতটুকু আমরা জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় জীবনে কার্যকর করতে পেরেছি তা যেমন তুলে ধরা প্রয়োজন, তেমন যা পরিনি, তা কেন পারিনি তার বিশ্লেষণসহ আগামীতে সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য নীতি-কৌশল যদি নির্ধারণ করতে পারি তাহলে দুটি বছর সার্থক বলে গণ্য হবে। একই সঙ্গে রাষ্ট্র হিসেবে ৫০ বছরে আমাদের অর্জন ও ব্যর্থতার মূল্যায়নসহ তা থেকে শিক্ষণীয় বের করে ভবিষ্যতের পথরেখা তৈরি করতে পারলে সেটাই হবে আসল কাজ। আনুষ্ঠানিকতার প্রয়োজন রয়েছে। তবে বিচার-বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণ ছাড়া শুধুই আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে এ দুটি বছরের মাহাত্ম্যের ডিভিডেন্ড বা ফল অর্জিত হবে না। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় কমিটি হয়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন কমিটিও হয়তো হবে অথবা একই কমিটি দুটি কাজই করতে পারে। তবে আমি মনে করি উদ্যাপন কমিটির পাশাপাশি যথাসম্ভব ছোট একটি এক্সপার্ট কমিটি হওয়া উচিত যাদের কাজ হবে এ দুই বছরের মধ্যে তারা জাতীয় এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে আমাদের সাফল্য-ব্যর্থতার মূল্যায়নসহ তার কারণ উল্লেখপূর্বক রাষ্ট্রের জন্য ভবিষ্যৎ পথরেখা তৈরি করবেন। একই সঙ্গে রাষ্ট্রের সক্ষমতা দুর্বলতার জায়গাগুলো চিহ্নিতকরণসহ সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জের দিকগুলো তুলে ধরে করণীয় সুপারিশ করবেন। গত পাক্ষিকের লেখায় মুজিববর্ষ কীভাবে পালিত হওয়া উচিত তার ওপর লিখেছিলাম। আজকের লেখায় রাষ্ট্রীয়ভাবে আমাদের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে একটু আলোকপাত করতে চাই।

১৯৪৭ সালে একবার স্বাধীন হয়েছিলাম বলে আমাদের ধারণা হয়েছিল। কিন্তু দেখা গেল সেই স্বাধীনতাপ্রাপ্তির পর যাত্রার শুরুতেই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আমাদের হাত-পা বেঁধে অন্ধকার গুহায় নিক্ষেপ এবং সেখানেই চিরদিন বন্দী করে রাখার সব ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। সেই অন্ধকার থেকে মুক্তির জন্য শুরু হলো বাঙালির সংগ্রাম। সেই সংগ্রামের নেতৃত্বে এলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যার পথ ধরে একাত্তরে বাংলাদেশ সৃষ্টি হওয়ার মাধ্যমে মুক্তির সোপান মাত্র রচিত হলো। যাত্রার শুরুতে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে সাবধান করলেন। বললেন, জনগণের মুক্তি না এলে স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে। তাই মুক্তির পথরেখা তৈরি করলেন বঙ্গবন্ধু।

তাতে আগামী অন্তত ১০০ বছর বিশ্বের চলমান আধুনিকতার সঙ্গে তাল মেলাতে বাংলাদেশের যেন সমস্যা না হয় তার সব ব্যবস্থাই তিনি করে দিলেন, যার স্বরূপ আমরা দেখতে পাই বাহাত্তরের সংবিধানের ভিতরে। কিন্তু মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় পঁচাত্তর সালের ১৫ আগস্ট সবকিছু শেষ হয়ে গেল। ছদ্মবেশে ও ছদ্মনামে হুবহু পাকিস্তানি শাসন আবার ফিরে এলো। সংবিধান তছনছ হলো। সে হুমকি থেকে এখনো আমরা মুক্ত নই। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে শুরু করে অশিক্ষা, কুশিক্ষা, ধর্মীয় অন্ধত্বসহ সব ধরনের বৈষম্য, পশ্চাৎপদতা, কুসংস্কার থেকে মুক্ত হয়ে যুক্তিবাদী ও জ্ঞানভিত্তিক একটা আধুনিক রাষ্ট্র তৈরি করতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। এটাই ছিল তাঁর আজীবনের স্বপ্ন। আজকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে সামনে রেখে আমরা যদি নিজেদের দিকে তাকাই তাহলে অবশ্যই বলতে হবে সেই আকাক্সিক্ষত মুক্তির চূড়ান্ত গন্তব্য থেকে এখনো আমরা অনেক দূরে অবস্থান করছি। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১১ বছর বাংলাদেশ সেই মুক্তির পথে দুর্গম গিরি অতিক্রান্তের চেষ্টা করছে। উল্লেখযোগ্য অর্জন আছে। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যাত্রার শুরুতেই পিলখানার ষড়যন্ত্র ছিল ভূমিকম্পসম ধাক্কা। তারপর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করার জন্য জামায়াত-বিএনপির সম্মিলিত নৈরাজ্য সৃষ্টি, হেফাজতের উত্থান ও নৈরাজ্য, ২০১৫ সালের শুরুতে বিএনপি কর্তৃক কথিত অবরোধের নামে একনাগাড়ে প্রায় তিন মাস যাবৎ জ্বালাও-পোড়াও এবং নিরীহ মানুষ হত্যার অপকর্ম ও জামায়াতের আন্ডারগ্রাউন্ড বাহিনীর লাগাতার জঙ্গি-সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিপরীতে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও অবকাঠামো খাতে যে উন্নয়ন বাংলাদেশে ঘটেছে তা আজ দেশের ভিতরে আওয়ামী লীগের শত্রুপক্ষকেও স্বীকার করতে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ বড় বড় সব গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নজর এখন বাংলাদেশের দিকে। বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হারে চীন-ভারতকেও ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। তা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুর নির্ধারিত মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে বহু পথ এখনো হাঁটতে হবে। সামনের সেই পথ অত্যন্ত কঠিন ও কণ্টকাকীর্ণ। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে প্রতি বছর যে বিশাল ওয়ার্ক ফোর্স তৈরি হচ্ছে তার কর্মসংস্থান। যার জন্য প্রয়োজন বেসরকারি খাতে দেশি-বিদেশি বিশাল পরিমাণ বিনিয়োগ। এই বিনিয়োগের জন্য দেশের ভিতরে যে পুঁজিপতি শ্রেণি তৈরি হয়েছে তাদের দুটি প্রধান সমস্যা রয়েছে। প্রথমত, এই পুঁজি অর্জনে তারা বৈধ পথের চাইতে অবৈধ, বেআইনি ও দুর্নীতির পথকে বেছে নিয়েছে। ফলে জানা-অজানা ভয়ে তারা এই পুঁজি বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে। যার আইনি নাম মানি লন্ডারিং। পত্রিকার প্রতিবেদন অনুসারে লাখো কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে। ব্যাংক লুট এখন একটা প্রচলিত কথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনো কোনো পরিবার পাঁচ-ছয়টি প্রাইভেট ব্যাংকের মালিকানা ও কর্তৃত্ব পেয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে। বিদেশেই বড় বড় সম্পদ ও ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে তুলেছে। বাংলাদেশের কী হলো না হলো এতে তাদের কিছু যায় আসে না। বেশির ভাগ সময় তারা এখন বিদেশে থাকে। শোনা যায়, ব্যাংকের বোর্ড মিটিং তারা নাকি সিঙ্গাপুর-দুবাইতে করে। দেশি এই শ্রেণির পুঁজিপতিদের আরেকটি সমস্যা হলো তারা হয়তো মনে করে বাংলাদেশের রাজনীতির যে সংস্কৃতি এবং পরিপূর্ণ বিপরীতমুখিতা তাতে এই সরকারের আমলে যেসব সুবিধা তারা পেয়েছে তার সবকিছুই বিপদগ্রস্ত হবে যদি সরকার পরিবর্তন হয়ে যায়। অবশ্যই সবাই নয়, যেসব পুঁজিপতি এ রকম মনোভাব পোষণ করে তাদের নীতি-আদর্শ বলতে কিছুই নেই। তারা শুধু টাকাই চেনে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার দুর্নীতি ও মানি লন্ডারিংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর হতে চাইছে। কিন্তু দলের ভিতরে ও বাইরে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও হুমকি প্রবলভাবে উপস্থিত থাকায় এ লক্ষ্যে আকাক্সিক্ষত অর্জন চোখে পড়ছে না। শুধু রাজনৈতিক হুমকি নয়, দেশে-বিদেশে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। একবার ভেবে দেখুন, যারা জাতির পিতাকে স্বীকার করে না, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র মানে না, বাহাত্তরের সংবিধানকে ছুড়ে ফেলে দেয়, মুক্তিসংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল সব ঘটনাকে পিছু ঠেলে দেয়, তারা যদি আবার রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে তাহলে কি প্রলয়কা- হবে। রাষ্ট্র কি আবার পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ের মতো অন্ধকারে চলে যাবে না? ধর্মান্ধতা, উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদের যে উত্থান ২০০১-২০০৬ মেয়াদে দেখা গেছে রাষ্ট্র যদি আবার সেই জায়গায় চলে যায়, তাহলে আজকে যতটুকু যা অর্জন হয়েছে তা কি মুখ থুবড়ে পড়বে না? তাই মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে প্রধান কাজ হওয়া উচিত বাংলাদেশের রাজনীতিকে ওই ধর্মান্ধতা, পশ্চাৎপদতা ও মু্িক্তযুদ্ধের আদর্শবিরুদ্ধতার কবল থেকে কীভাবে মুক্ত করা যায় তার পথরেখা বের করা। যত দিন পর্যন্ত বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী রাজনীতি থেকে মুক্ত করা যাবে না, তত দিন রাষ্ট্রকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনা যাবে না, দুর্নীতি থেকেও ম্ক্তু করা যাবে না। যতটুকু যা অর্জনই হোক তাকে শঙ্কামুক্ত টেকসই বলা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বহনকারী একমাত্র কান্ডারি আওয়ামী লীগের ভিতরে একশ্রেণির দুর্বৃত্তায়ন গোষ্ঠী মনে করছে তারা যা-ই করুক না কেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ তাদেরই সমর্থন দেবে। অন্য কোনো বিকল্প নেই। কথাটি শতভাগ সত্য হলেও এটা রাষ্ট্রের সুশাসনের জন্য কঠিন সমস্যা। নারীর ক্ষমতায়নে শেখ হাসিনার অবদান আজ বিশ্বস্বীকৃত। ১৯৯৬ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় এসে ইউনিয়ন পরিষদে নারী প্রতিনিধি নির্বাচনের বিধি প্রণয়ন করে তৃণমূল পর্যায়ে নারীর ক্ষমতায়নের পথকে খুলে দিলেন। তারপর সশস্ত্র বাহিনীর সব শাখায় নারী অফিসার নিয়োগের নীতিমালা করে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নারীর ক্ষমতায়নের পথকে প্রসারিত করে দিলেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতাসহ সচিব এবং মাঠপর্যায়ে এসপি, ডিসি ও সেনাবাহিনীর ফাইটিং ফোর্সের কমান্ডিং অফিসার পদে এখন নারীরা রয়েছেন। এত অগ্রগতির পরও একটা বিপরীত চিত্র আজ প্রকট আকার ধারণ করেছে। নির্যাতনসহ নারী ধর্ষণ অপ্রতিরোধ্য গতিতে বেড়ে যাচ্ছে। আইন, বিচার কোনো কিছুই দুবর্ৃৃত্তদের মনে ভীতির সৃষ্টি করছে না। মানুষের ভিতর থাকা পশুশক্তিকে দমন করতে হলে আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং স্বল্পতম সময়ে শাস্তি দৃশ্যমান করা ছাড়া বিকল্প নেই। বিচার প্রক্রিয়ার জটিলতা, দীর্ঘসূত্রতা এবং তার ভিতরে পদে পদে দুর্নীতি ও জবাবদিহিহীনতা আজ সব অর্জনকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। দু-একটি চাঞ্চল্যকর ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় দীর্ঘদিন আসামি ধৃত না হওয়ায় এবং বিচার আদালতে না ওঠায় মানুষের মনে ধারণা হতে পারে আইন নিজস্ব গতিতে চলছে না। অপরাধী যেই হোক না কেন, তাকে আইনের কাছে সোপর্দ না করে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যদি বিশেষ বিবেচনা প্রদর্শন করা হয় তাহলে সেটা একদিন মহাবিপর্যয় ডেকে আনবে। দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন বলে একটা কথা আছে। দুষ্টের দমনে রাষ্ট্রযন্ত্রকে কঠোর ও হৃদয়হীন হতে হবে। অন্যদিকে শিষ্টের পালনের জন্য উদার মানবিক ও মহানুভবতার পরিচয় দিতে হবে। আরেকটি লাগামহীন জায়গা হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনা। কয়েকদিন আগে প্রধান একটি ইংরেজি পত্রিকায় উল্লেখ করা হয়েছে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হচ্ছে সাড়ে ৭ হাজারের বেশি মানুষ। নতুন নতুন সড়ক, মহাসড়ক হচ্ছে, রাস্তা প্রশস্ত হচ্ছে, কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনা প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখানেও সেই একই অবস্থা। কোনো শৃঙ্খলা নেই। পথচারী, চালক, জনপরিবহনের মালিক, কেউ নিয়ম-কানুন আইন মানছে না। আইন অনুসরণের সামান্য মানসিকতাও নেই। রাস্তায় বাস-ট্রাকের চালকরা তো রাজা। তারা আইন-কানুন কিছুই মানবেন না। উ™£ান্তের মতো বেপরোয়া গাড়ি চালাবেন এবং তার জন্য দুর্ঘটনা ঘটলে তাদের যথোপযুক্ত শাস্তি দেওয়া যাবে না। তারা সবকিছু বন্ধ করে দেবেন। কোনো গোষ্ঠী ও পক্ষ রাষ্ট্রের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হলে তা একসময় ভয়ঙ্কর বিপজ্জনক হতে পারে। একটি রাষ্ট্রের মৌলিক শক্তি তার সার্বিক শৃঙ্খলা এবং আইনের কঠোর প্রয়োগ। কিন্তু ১৬ কোটি মানুষের দেশে শুধু আইন তৈরি এবং তার ভয় দেখিয়ে সার্বিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা বা ফিরিয়ে আনা যাবে না। এর জন্য প্রয়োজন একটা সুগভীর জাতীয় মানসকাঠামো। সে রকম একটা মানসকাঠামো তৈরি করতে হলে একটা রাষ্ট্রের কমপক্ষে ৫০ বছর সময় লাগে। তার জন্য আকাক্সিক্ষত মানসকাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটা জাতীয় শিক্ষাক্রমের দীর্ঘ সময় ধরে নিরবচ্ছিন্ন অনুসরণ প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধু যে শিক্ষানীতি ও শিক্ষাক্রম নিয়ে যাত্রা করেছিলেন তা অব্যাহত থাকলে আজ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমরা সে রকম একটা জাতীয় মানসকাঠামো পেয়ে যেতাম। শিক্ষা ক্ষেত্রে গত ১১ বছরের অগ্রগতি অত্যন্ত প্রশংসনীয়। কিন্তু আমরা কি বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজনীয় একটা একমুখী জাতীয় মানসকাঠামো তৈরির দিকে অগ্রসর হচ্ছি? আমরা যদি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শসংবলিত একটা জাতীয় মানসকাঠামো তৈরি করতে পারি, তাহলে দুর্নীতিমুক্ত, ন্যায়ভিত্তিক ও সুশৃঙ্খল এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষের বিভাজনমুক্ত একটা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে বড় কোনো বাধা আর থাকবে না।

এই মৌলিক সমস্যার সমাধান হলে দেশি-বিদেশি বিপুল বিনিয়োগ হবে এবং সব অনিশ্চয়তা ও শঙ্কা দূর হবে। সব ক্ষেত্রে একটা টেকসই আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি হবে। তাহলেই আমরা ২০৪০ সালের মধ্যে আকাক্সিক্ষত উন্নত ও সমৃদ্ধিশালী রাষ্ট্রের মর্যাদায় পৌঁছাতে পারব।

                লেখক : রাজনীতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

[email protected]

সর্বশেষ খবর