রবিবার, ৩১ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

মানুষের সম্মান

আদনান বিন আমজাদ

আরবিতে মানুষকে ইনসান বলা হয়। ইনসান শব্দটি উনাছি থেকে নির্গত। তার অর্থ হলো মানুষ, লোক, শ্রেষ্ঠ জাতি ইত্যাদি। আল্লাহ পৃথিবীতে অনেক মাখলুক সৃষ্টি করেছেন। যেমন মানুষ, জিন, ফেরেশতা, পশুপাখিসহ আরও অসংখ্য অগণিত মাখলুকাত। তার মধ্যে মানুষ ও জিন জাতিকে একমাত্র তাঁর ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। এ ব্যাপারে আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, আমি মানব ও জিন জাতিকে একমাত্র আমার ইবাদত করার জন্যই সৃষ্টি করেছি। (সূরা আয যারিয়াত-৫৬) আল্লাহ তাঁর সব মাখলুকাত থেকে মানুষকে সম্মানিত সৃষ্টিজীব হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। যেমনটি সূরা বনি ইসরাইলের ৭০ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে, নিশ্চয়ই আমি আদম সন্তানকে মর্যাদাদান করেছি। (সূরা বনি ইসরাইল-৭০) আর তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন সর্বোত্তম গঠন দিয়ে। এ ব্যাপারে আল্লাহপাক নিজেই তাঁর পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সুন্দরতম গঠন দিয়ে। (সূরা ত্বীন-৪) উক্ত আয়াতে কালিমাদ্বয় দ্বারা বোঝা গেল যে, মানুষ শ্রেষ্ঠ জাতি। যেমন তাঁর গঠন তেমন তাঁর আকার-আকৃতি। তাই তো মানবজাতিই সর্বোত্তম জাতি। যে জাতি সর্বোত্তম, সে জাতি অবশ্যই সম্মানিত। সুতরাং একজন মানুষের ইজ্জত, সম্মান অনেক বেশি। আল্লাহ পবিত্র কোরআনে মানবজাতির সম্মান সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন, এবং রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আজ থেকে প্রায় সাড়ে ১৫শ বছর আগে মানুষের সম্মান সম্পর্কে বিস্তারিত বয়ান দিয়েছেন। দেখুন! রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই যুগেও মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সবার সঙ্গে সম্মান দিয়ে কথা বলেছেন। এই কারণে মানুষকে সম্মান করতে হবে। মানুষের সঙ্গে মিষ্টি মধুর আচরণ করতে হবে। তা হলেই আল্লাহ আমার ইজ্জত-সম্মান বৃদ্ধি করে দিবেন। ইনশা আল্লাহ। প্রিয় পাঠক! মানুষ তো মানুষের উপকারের জন্যই, সুতরাং আমরা চেষ্টা করব আমাদের এই অস্থায়ী জীবনে মানুষের উপকার করতে পারি-আর-না পারি অন্তত কখনো কারও কোনো ক্ষতি করব না। কোনো মানুষের ক্ষতি করা ও অন্যের হক অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করা খুব জঘন্যতম অপরাধ। আল্লাহ  বান্দার সব গুনাহ ক্ষমা করে দেন, কিন্তু মানুষের হক অন্যায়ভাবে নষ্ট করার গুনাহ কখনই ক্ষমা করেন না। যতক্ষণ না বান্দা ক্ষমা না করেন। তাই আসুন! আজ থেকে আমরা একটা সংকল্প করি, জীবনে কখনো অন্যের হক নষ্ট করব না। কারও মনে কষ্ট দিব না। আর মানুষকে কষ্ট দেওয়া তো হারাম। ফারসিতে একটি প্রবাদ আছে, মুসলমানদের কষ্ট দেওয়া হারাম। সুতরাং আমরা চেষ্টা করব, আমাদের হাত-মুখ থেকে যেন অপর মুসলমান কষ্ট না পায়। হাদিস শরিফে আছে, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, খাটি মুসলমান ওই ব্যক্তি, যার হাত ও মুখ থেকে অপর মুসলমান নিরাপদ থাকে। (মেশকাত-১৫) সুতরাং আমরা যথাসম্ভব মানুষকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকব। সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করব। হাসি-খুশি কথা বলব। মানুষের সঙ্গে হাসি মুখে কথা বলাও একটি উত্তম কাজ। মানুষের প্রতি দয়াবান হব। হাদিসে পাকে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ ওই ব্যক্তির ওপর রহম করেন না, যে মানুষের ওপর রহম করে না। (মেশকাত-৪২১) কারও প্রতি জুলুম করব না। এ ব্যাপারেও রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জুলুম কেয়ামতের দিন ভীষণ অন্ধকার হয়ে দেখা দিবে। (মেশকাত-৪৩৪) মানুষের সঙ্গে নম্র আচরণ করব। নম্রতা এটাও রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি সুন্নত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবার সঙ্গে নম্র আচরণ করতেন। হাদিস শরিফে আছে, যে নম্রতা থেকে বঞ্চিত, সে কল্যাণ থেকে বঞ্চিত। (মেশকাত-৪৩১) পাঠক! আসুন! আজ থেকে আমরা সুন্দর একটি নিয়ত করি, আল্লাহর উপরে পূর্ণ আস্থা ও ইমান রাখব, শরিয়তের দিকনির্দেশনা পূর্ণরূপে মেনে চলব, মানুষকে সম্মান করব এবং মানুষকে মূল্যায়ন করব ইত্যাদি। তাহলেই আল্লাহ আমাদের সম্মানিত করবেন। ইনশা আল্লাহ। আল্লাহ আমাদের ভাইবোনদের আল্লাহর সম্মানিত ও সর্বোত্তম সৃষ্টি মানুষকে যথাযথ সম্মান করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : ইসলামী গবেষক, তরুণ লেখক ও প্রবন্ধকার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর