বৃহস্পতিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

অন্যের প্রতি ঘৃণা ইসলামে নিষিদ্ধ

মুহম্মাদ ওমর ফারুক

অন্যের প্রতি ঘৃণা ইসলামে নিষিদ্ধ

এক মানুষ আরেক মানুষের স্বজন। পৃথিবীর সব মানুষের পারিবারিক পরিচিতি তুলে ধরতে গিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘হে মানুষ! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক নর ও নারী থেকে।’ সুরা হুজুরাত, আয়াত ১৩। মুসলমানের পরিচয় তুলে ধরতে গিয়ে রসুল (সা.) বলেছেন, ‘প্রকৃত মুসলমান সেই ব্যক্তি, যার হাত ও মুখ থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ।’ বুখারি। তিনি আরও বলেছেন, ‘মুসলমান মুসলমানের ভাই। সে তার ওপর না জুলুম করতে পারে, না তাকে অসহায় অবস্থায় পরিত্যাগ করতে পারে আর না তাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে পারে। কেউ নিকৃষ্ট হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে সে তার মুসলিম ভাইকে তুচ্ছজ্ঞান করবে। প্রত্যেক মুসলমানের জীবন, ধনসম্পদ ও মানসম্মান প্রত্যেকের সম্মানের বস্তু। এর ওপর হস্তক্ষেপ করা হারাম।’ মুসলিম। পারস্পরিক সম্প্রীতি, ভালোবাসাকে ইমানের মাপকাঠি হিসেবে সাব্যস্ত করে রসুল (সা.) বলেছেন, ‘ইমান ছাড়া তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, পরস্পরকে ভালোবাসা ছাড়া মোমেন হতে পারবে না। আমি কি তোমাদের এমন বিষয়ের কথা বলে দেব না, যাতে তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে। তোমরা পরস্পরকে সালাম দেবে।’ মুসলিম। অন্যের প্রতি ঘৃণা বা অবজ্ঞা প্রদর্শন ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। প্রতিটি মানুষ সে মুসলিম হোক বা অমুসলিম, নারী হোক কিংবা পুরুষ মানুষ হিসেবে আল্লাহ তাকে বিশেষ সম্মান ও মর্যাদা দান করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আমি মানবজাতিকে সম্মানিত করেছি, আমি তাদের স্থলে ও জলে চলাচলের বাহন দান করেছি; তাদের উত্তম জীবনোপকরণ প্রদান করেছি এবং তাদের শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি আমার সৃষ্টিজগতের অনেকের ওপর।’ সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত ৭০। বিদায় হজের এ ঐতিহাসিক ভাষণে রসুল (সা.) মানুষের মর্যাদা সমুন্নত করে ঘোষণা দিয়েছেন, ‘তোমাদের পরস্পরের জীবন, ধনমাল ও সম্মান পরস্পরের জন্য সম্মানার্হ যেমন তোমাদের এ দিনটি সম্মানার্হ, এ মাসটি সম্মানার্হ এবং এ শহর সম্মানার্হ।’ বুখারী। মানুষের মর্যাদাহানি, কুৎসা রটনা, ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করাকেও ইসলাম স¤পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে, ‘তোমাদের কোনো সম্প্রদায় অন্য সম্প্রদায়কে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে যেন বিদ্রƒপ না করে।’ সুরা হুজুরাত, আয়াত ১১। আর কোনো মানুষের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা ইসলামে অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ।  আল্লাহর ইরশাদ, ‘ধ্বংস এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যে পশ্চাতে ও সম্মুখে পরনিন্দা করে।’ সুরা হুমাজা, আয়াত ১। এ ব্যাপারে আল্লাহ আরও বলেন, ‘হে ইমানদাররা! কোনো সম্প্রদায় যেন অন্য সম্প্রদায়কে বিদ্রƒপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রƒপকারীদের চেয়ে উত্তম। আর কোনো নারীও যেন অন্য নারীকে বিদ্রƒপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রƒপকারীদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আর তোমরা একে অন্যের নিন্দা কোরো না এবং তোমরা একে অন্যকে মন্দ নামে ডেকো না।’ সুরা হুজুরাত, আয়াত ১১। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা একে অন্যের দোষ অনুসন্ধান কোরো না। পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ কোরো না ও পরস্পর শত্রুতা কোরো না। বরং হে আল্লাহর বান্দারা! তোমরা পরস্পর ভাই ভাই হয়ে যাও।’ বুখারি।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

 

 

 

সর্বশেষ খবর