শনিবার, ২৭ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

কোরআন-সুন্নাহর আলোকে শবেবরাত

মুফতি মুহাম্মদ এহছানুল হক মোজাদ্দেদী

কোরআন-সুন্নাহর আলোকে শবেবরাত

১৪ শাবানের দিবাগত রাতকে ‘শবেবরাত’ বলা হয়। শবেবরাত কথাটি ফারসি থেকে এসেছে। শব মানে রাত, বরাত মানে মুক্তি; শবেবরাত অর্থ মুক্তির রজনী। শবেবরাতের আরবি ‘লাইলাতুম মুবারাকা’। হাদিসে যাকে ‘নিসফ্ শাবান’ বা শাবানের মধ্যরজনী বলা হয়েছে। তবে বিশ্ব মুসলমানের কাছে এ রাত ‘শবেবরাত’ নামেই বেশি পরিচিত। শবেবরাত সম্পর্কে আল কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হা-মিম! শপথ উজ্জ্বল কিতাবের। নিশ্চয়ই আমি তা নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে। নিশ্চয় আমি ছিলাম সতর্ককারী।’ সুরা দুখান আয়াত ১-৩। এ আয়াতের তাফসির সম্পর্কে বরেণ্য মুফাসসির আল্লামা শেখ আহমদ ছাভি (রহ.) বলেন, ‘ওই বরকতময় রজনী হচ্ছে অর্ধ শাবানের রাত। বিশিষ্ট তাবেয়ি হজরত ইকরামা (রা.) এবং অন্য তাফসিরকারকদের মতও এটাই যে সেই বরকতময় রাত হলো মধ্য শাবান তথা শবেবরাত।’ (তাফসিরে ছাভি)। আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি (রহ.) এ আয়াতের তাফসিরে বলেন, ‘আর বরকতময় রাত হলো লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান বা শাবানের মধ্যরাত তথা শবেবরাত। কেননা এ রাতে উম্মুল কিতাব কোরআন সপ্তম আসমান থেকে দুনিয়ার আসমানে তথা প্রথম আসমানে নাজিল হয়েছে।’ তাফসিরে জালালাইন। ইমাম আবু জাফর আত-তাবারি (রহ.) বলেন, ‘তাবেয়ি হজরত ইকরামা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মধ্য শাবানের রাতে বছরের সব ব্যাপার চূড়ান্ত করা হয়, জীবিত ও মৃতদের তালিকা লেখা হয় এবং হাজীদের তালিকা তৈরি করা হয়। এ তালিকা থেকে পরবর্তীতে একজনও কমবেশি হয় না।’ তাফসিরে তাবারি। ইমাম কুরতুুবি (রা.) বলেন, ‘এ রাতের চারটি নাম আছে- লাইলাতুম মুবারাকা, লাইলাতুল বারাআত, লাইলাতুস সাক, লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান।’ তাফসিরে কুরতুবি। ইমাম বাগাভি (রহ.) লিখেন, ‘নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ শবেবরাতের রাতে সব বিষয়ের চূড়ান্ত ফয়সালা করেন এবং শবেকদরের রাতে তা সংশ্লিষ্ট দায়িত্ববান ফেরেশতাদের কাছে ন্যস্ত করেন।’ তাফসিরে বাগাভি। শবেবরাতের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে সহিহ হাদিসেও অনেক বর্ণনা এসেছে। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, ‘একবার রসুলুল্লাহ (সা.) নামাজে দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ সিজদা করলেন যে আমার ধারণা হলো তিনি ওফাত পেয়েছেন। আমি তাঁর পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম, তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল; তিনি সিজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করে আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা! তোমার কী আশঙ্কা হয়েছে? আমি উত্তরে বললাম, ইয়া রসুলুল্লাহ! আপনার দীর্ঘ সিজদা দেখে আমার আশঙ্কা হয়েছিল না জানি আপনি ওফাত পেয়েছেন। নবীজি (সা.) বললেন, তুমি কি জান এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও আল্লাহর রসুলই ভালো জানেন। তখন তিনি বললেন, এটা হলো অর্ধ শাবানের রাত; এ রাতে আল্লাহতায়ালা তাঁর বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন; ক্ষমাপ্রার্থীদের ক্ষমা করেন, অনুগ্রহ প্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের তাদের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন।’ শুআবুল ইমান। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে আরও বর্ণিত হয়েছে, ‘নবীজি (সা.) এ রাতে মদিনার কবরস্থান জান্নাতুল বাকিতে এসে মৃতদের জন্য দোয়া ও ইসতিগফার করতেন। প্রিয় নবী (সা.) তাঁকে বলেছেন, এ রাতে বনি কালবের ভেড়া বকরির পশমের সংখ্যার পরিমাণের চেয়েও বেশিসংখ্যক গুনাহগারকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন।’ তিরমিজি।

লেখক : মুফাসসিরে কোরআন এবং বেতার-টিভির ইসলামবিষয়ক উপস্থাপক।

 

সর্বশেষ খবর