শনিবার, ৩ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

রাজনীতির নষ্ট মাঠে হেফাজতের আবর্জনা

সৈয়দ বোরহান কবীর

রাজনীতির নষ্ট মাঠে হেফাজতের আবর্জনা

একটি বাগানের যখন পরিচর্যা হয় না, যখন অনাদরে-অবহেলায় পড়ে থাকে তখন সেখানে আবর্জনা বাসা বাঁধে। একসময় আবর্জনাই বাগানের কর্তৃত্ব দখল করে। সেটি তখন আর বাগান থাকে না, আবর্জনার স্ত‚পে পরিণত হয়। বাংলাদেশে গত এক দশকে সবচেয়ে পরিচর্যাহীন বিষয় হলো রাজনীতি। উপেক্ষা আর কলুষিত করার নানামুখী চক্রান্তে রাজনীতির মাঠ এখন আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। আর সে আবর্জনার স্ত‚পে সবচেয়ে ক্ষতিকর আবর্জনার একটি হলো হেফাজত।

২০১৩ সালের মে থেকে এ আবর্জনা এখন এত বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে যে এর জন্য মানুষের মুক্তচিন্তা, স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়াই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত ২৬ ও ২৭ মার্চ হেফাজত দেখিয়েছে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা এবং স্বাভাবিক জীবনের জন্য তারা কত বড় হুমকি।

একটি দেশে যদি সুস্থ ও স্বাভাবিক রাজনৈতিক গতিপ্রবাহ না থাকে তাহলে অসুস্থ ধারা পল্লবিত হয়। গত দুই দশকে কিংবা তারও আগে থেকে দেশের স্বাভাবিক রাজনীতির গলা টিপে হত্যার নীরব আয়োজন চলছে। এ প্রচেষ্টা এখন সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে। যে কেউ অকপটে স্বীকার করবেন, দেশে রাজনীতি বলে কিছু নেই। না ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, না বিরোধী দলগুলো রাজনীতি করছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। টানা এক যুগের বেশি ক্ষমতায় আছে। ক্ষমতায় থাকার কলাকৌশল রপ্ত করতে করতে দলটি রাজনীতিকেই নির্বাসনে পাঠিয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রশাসনকে মাথায় তুলেছে। পুলিশ যেন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন। রাষ্ট্রযন্ত্রে ক্রিয়াশীল সব শক্তির সঙ্গে আওয়ামী লীগ প্রকাশ্য ও গোপন সখ্য গড়েছে। নির্বাচনে জয়ী হতে আওয়ামী লীগ ‘ব্যবসায়ীবান্ধব’ হয়েছে। গার্মেন্ট ব্যবসায়ীরা এমপি হচ্ছেন, মন্ত্রী হচ্ছেন, মেয়র হচ্ছেন। কালো টাকার মালিক, লুটেরা এখন আওয়ামী লীগে হর্তাকর্তা হয়ে উঠেছেন। রাজনীতিবিদরা ভয়ে মুখ লুকিয়ে আছেন। পাছে তাকে কেউ দেখে ফেলে। সুবিধাবাদী, লুটেরারা জানেন একটা মনোনয়ন পেলেই হলো। নির্বাচনে জেতা কোনো ব্যাপার নয়। সুবিধাবাদী, চাটুকার, মতলববাজ, দালালরা আওয়ামী লীগে ঢুকে কিলবিল করছে। এ যেন এক অপ্রতিরোধ্য অনুপ্রবেশ। যারা তৃণমূলে আছেন তারাও এখন বুঝতে পেরেছেন এখনই সময়। এ ভরা মৌসুমে যদি কিছু টাকাপয়সার মালিক না হওয়া যায় তাহলে আর কবে সুখের মুখ দেখবে? তাই তৃণমূলের দুই নেতাই ২ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এর তদন্ত করছে সিআইডি। স্থানীয় পর্যায়ের নেতার বাড়িতে টাকার খনি ‘আবিষ্কৃত’ হয়েছে। আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো নিয়ে যত কম কথা বলা যায় ততই ভালো। এরা এখন ‘দিবস রাজনীতি’ করে। বিভিন্ন দিবসে এরা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে কিছু স্লোগান দেয়। বনানীতে কবরস্থানে ফুল দিতে দিতে এরা ক্লান্ত হয়ে যায়। এদের অধিকাংশই নাদুসনুদুস। একটু রোদেই এদের গাল চিক চিক করে, যেন মাখন গলছে। পাঁচ তারকা হোটেলে এদের সান্ধ্য অধিবেশনে পাওয়া যায়। কেউ কেউ তো (যেমন পাপিয়া) পাঁচ তারকা হোটেলের বিলাসবহুল স্যুট নিজেদের ঘরবাড়ি বানিয়ে ফেলে। রাজনীতি যেন এখন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। একবার একটা পদপদবি বাগিয়ে নিলেই হলো। জনগণের কাছে ভোট চাইবার দরকার নেই, ভোটের বাক্স এমনিতেই ভরে যাবে। বিরোধী দলের সঙ্গে আদর্শিক লড়াইয়ের প্রয়োজন নেই, পুলিশ আছে না! এভাবেই আওয়ামী লীগ এখন রাজনীতি -শূন্যতায় ভুগছে।

আওয়ামী লীগ যদি রাজনৈতিক রক্তশূন্যতায় ভোগে তাহলে বিএনপিতে রাজনীতি ‘কোমায়’ চলে গেছে। অবশ্য বিএনপিকে রাজনৈতিক দল না বলে একটি পারিবারিক প্রতিষ্ঠান বলা ভালো। বিএনপিকে বলা যায় প্রাচীন আমলের রাজরাজড়াদের শেষ চিহ্ন। এখনো রাজতন্ত্রকে আগলে রেখেছে দলটি। এ রাজতন্ত্রে রানী এখন নির্বাক, রাজপুত্তুর নিরুদ্দেশ আর পারিষদরা সব তস্কর। বিএনপি কে চালায়, কীভাবে চলে তা বিএনপির নেতারাও জানেন না। রানী প্রাসাদে নিজেকে স্বেচ্ছাবন্দী করে রেখেছেন। পণ করেছেন তিনি কিছু বলবেন না। তাঁর নীরবতায় প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সংসদে দেওয়া সেই আকুতির কথা মনে পড়ে। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ ছবির একটি সংলাপ ধার করে বলেছিলেন, ‘একটা কিছু ক গোলাপী, একটা কিছু ক।’ বিএনপির সব কর্মীর মধ্যেই সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের উচ্চারণ যেন গুনগুনিয়ে বাজে। রানীর অভিমানে দূরদেশে থাকা রাজপুত্র চালান বিএনপি। কিন্তু রাজপুত্রের মন অর্থ আর প্রমোদে। তিনি দল থেকে ‘তোলা’ নেন। তাঁর খাজনার টাকা জোগাতে পারিষদরা হিমশিম খান। মনোনয়ন বেচে, কমিটি বেচেও রাজপুত্রের প্রমোদকর মেটানো যায় না। এজন্য পারিষদরা এখন তৃণমূলের কমিটি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠনেও কর ধার্য করছেন। পারিষদরা খাজনা আদায় করতে গিয়ে কিছুটা তস্করবৃত্তি করেন এমন অভিযোগ ওঠে। লন্ডনে সব টাকা না পাঠিয়ে কিছু নিজেদের পকেটে সরিয়ে রাখেন এমন অভিযোগে বিক্ষুব্ধ প্রজারা (কর্মীরা) মাঝেমধ্যেই নেতাদের ঘেরাও করেন। জ্বালাও-পোড়াও করেন। যদিও সরকারবিরোধী আন্দোলনে তারা বাধাপ্রাপ্ত হন, কিন্তু এ ধরনের আন্দোলনে পুলিশ নিরাপদ দূরত্বে থেকে বাদাম চিবিয়ে আয়েশ করে।

বিএনপি নেতারা ‘রাজনীতি’ ভুলে গেছেন। ‘ভুলে গেছেন’ শব্দটি সম্ভবত ভুল। কারণ বিএনপির জন্ম হয়েছিল ক্ষমতার গর্ভে। বিএনপির কাছে রাজনীতি মানেই ক্ষমতা। মন্ত্রিত্ব, না হলে এমপি অথবা স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি হওয়া। এসব না হলে নিদেনপক্ষে টেন্ডার বাণিজ্য, তদবির, নিয়োগ-বদলি বাণিজ্য করে টাকার পাহাড় বানানো। মাছ যেমন পানি ছাড়া বাঁচে না তেননি ক্ষমতা ছাড়া বিএনপিও মৃতপ্রায়। মৃতপ্রায় এবং প্রায়-এতিম এ দলটির পাহারাদার বা ম্যানেজাররা স্মৃতিকাতর। এজন্য তারা ঘুমকাতুরে হয়ে পড়েছেন। ঘুমালেই তারা স্বপ্ন দেখেন মন্ত্রিত্বের। জেগে থেকে তারা অতীতের সুখ রোমন্থন করেন। ফলে রাজনীতির মাঠে তারা নামতে পারেন না। দলটির অবস্থা দরিদ্র কৃষক গনি মিয়ার মতো। ছোটবেলায় পাঠ্যপুস্তকে পড়তাম ‘গনি মিয়া একজন কৃষক। তার নিজের জমি নেই। অন্যের জমিতে চাষ করে।’ বিএনপিরও নিজের আন্দোলনের সক্ষমতা নেই তাই অন্যের আন্দোলনে কিছু দৌড়ঝাঁপ করে। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে তারা উঁকি দেয়। হেফাজতের আন্দোলনে গলা বাড়িয়ে দিয়ে জোরে একটা থাপ্পড় খায়। চাঁদের যেমন নিজের আলো নেই তেমনি বিএনপিরও নিজস্ব ইস্যু নেই।

জাতীয় পার্টিকে আমার মনে হয় ভাঙা হাটের মতো। হাট ভেঙে যাওয়ার পর যেমন যে যেটা পারে কুড়িয়ে নিয়ে চলে যায়। কারও কোনো দিকে খেয়াল থাকে না। জাতীয় পার্টি সে অবস্থায় আছে। জাতীয় পার্টির নেতারা অবশ্য বুদ্ধিমান। তারা জানেন, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় থাকতে হলে একটি গৃহপালিত বিরোধী দল লাগবে। তাই তাদের রাজনীতি হলো আওয়ামী লীগের একান্ত অনুগত থাকা। জাতীয় পার্টি জানে আওয়ামী লীগ থাকতে তাদের মৃত্যু নেই। জাতীয় পার্টিকে বাঁচিয়ে রাখা সরকারের অবশ্যপালনীয় কর্তব্যের মধ্যে একটি।

বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে অনেক আশাবাদের জায়গা তৈরি হয়েছিল। এর মধ্যে একটি ছিল বাম গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল রাজনীতির বিকাশের সম্ভাবনা। কিন্তু বাংলাদেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দল অসুস্থ, সংকটাপন্ন হলেও বাম গণতান্ত্রিক ধারার রাজনৈতিক দলগুলো মৃত। শুধু মৃত নয়, মৃত বামদের পচা দুর্গন্ধে প্রগতি ও মুক্তচিন্তার লোকজন মুখে রুমাল এঁটেছেন। বাম নেতাদের অবস্থা এখন এমন যে একটা থলি নিয়ে শুধু তাদের ফুটপাথে বসাটা বাকি। কারও সঙ্গে পরিচিত হলেই হলো, হাত পেতে বসেন তারা। রাজনৈতিক সংগঠন তাদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন। আগে মস্কোয় বৃষ্টি হলে এখানকার মস্কোপন্থি বামেরা ছাতা মেলতেন। চীনে যা হতো সেটাই অনুসরণ করতেন চীনপন্থিরা। এখন তারা দিগ্ভ্রান্ত। ঈ করবেন নিজেরাই জানেন না। এ রকম একটি পরিস্থিতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দেশের আর্থসামাজিক বাস্তবতা। ঘুষ-দুর্নীতি এখন কোনো অপরাধ নয়। পিয়ন থেকে বড় কর্তা বেশির ভাগই দুর্নীতির টাকায় চলেন, বেতনের টাকা জমিয়ে রাখেন। দুর্নীতিকে ‘অধিকার’ বানিয়ে এরা পরকাল-ভাবনায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এরা ধর্মাসক্ত হয়ে পড়েন, ধর্মভীরু নয়। এরা নিজেদের অপরাধ থেকে পাপমুক্তির জন্য ধর্মকে ব্যবহার করেন। এরা মাদরাসা করেন, হুজুর খোঁজেন, তাবলিগে অর্থায়ন করেন। ধর্মের আলখেল্লায় এদের দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন ঢেকে ফেলেন। এ রকম একটি পরিস্থিতিতে যখন রাজনীতির বাগান নষ্ট, সমাজ দূষিত তখন দেশ ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠীর জন্য এক উর্বর ক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরগাছা রাজনীতিবিদরা মনে করেন ধর্ম-কর্ম করলে তার মনোনয়ন নিশ্চিত হবে। মাদরাসায় টাকা দিলেই মন্ত্রী হওয়ার মানত পূরণ হবে। একজন মাওলানাকে দিয়ে ‘তওবা’ করলেই তার সব অবৈধ অর্থ বৈধ হয়ে যাবে।

প্রশাসনে যখন পদোন্নতির মাপকাঠি যোগ্যতা নয় তখন পদোন্নতির জন্য নানা ফন্দিফিকির বের করেন আমলারা। রাজনীতিবিদদের মতো আমলারাও দুর্নীতির টাকা হালাল করতে ‘ধর্ম’কে ব্যবহার করেন। কত আমলা কত মাদরাসা করেছেন তার একটি হিসাব হওয়া জরুরি। এভাবেই ধর্ম প্রভাবশালী ফ্যাক্টর হয়ে ওঠে এ রাষ্ট্রে। একালে লালসালুর মজিদ নয়, উত্থান ঘটে বাবুনগরী, মামুনুল, আজহারীদের। এরা মানববর্ম হিসেবে ব্যবহার করে কোমলমতি, এতিম, অসহায় দরিদ্র শিশু-কিশোরদের। সুবিধাবাদী রাজনীতিবিদ, মতলবাজ আমলা আর লুটেরা ব্যবসায়ীরা মিলেমিশে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করেন। এদের পৃষ্ঠপোষকতা করে নিজেদের ‘অপকর্ম’ লাঘব করতে চান।

এভাবেই বাংলাদেশে গত এক দশকে মৌলবাদী ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর নীরব উত্থান ঘটেছে। হেফাজতের উত্থান ঘটেছে। রাজনীতির পরিত্যক্ত উদ্যানে হেফাজতের আবর্জনা বড় হয়েছে।

২৬ মার্চ ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। আমাদের অহংকারের দিন। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে ভারত আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানোটা তাই কেবল যৌক্তিক নয়, বাংলাদেশের দায়িত্ব। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ ব্যক্তি নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ জানায়নি। ভারতের ‘প্রধানমন্ত্রী’ প্রতিষ্ঠানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। অথচ হেফাজত এর বিরোধিতা করল। অবশ্য হেফাজত ২০১৩ সাল থেকেই রাজনীতির মাঠে আবর্জনা হিসেবে গজিয়ে উঠেছিল। রাজনীতিহীনতার রোগে আক্রান্ত সরকার হেফাজতের সঙ্গে সখ্যও গড়ে তোলে। এরপর হেফাজতও দেখে বাঃ বেশ তো! তারা পাঠ্যপুস্তক সংশোধন চায়। সরকার বায়না পূরণ করে। মুখে চকলেট নিয়ে শিশু যেমন চাঁদ হাতে পাওয়ার বায়না করে তেমনি হেফাজতের আবদারের তালিকাও দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে থাকে। আদর্শহীন রাজনীতিবিদ আর অযোগ্য আমলারা হেফাজতকে পৃষ্ঠপোষকতা দিতে থাকেন। কারণ এরা জনবিচ্ছিন্ন তাই হেফাজতের কোমলমতি, চিন্তা-চেতনা শূন্য কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে দেখে তারা ভয় পায়। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য করা যাবে কিনা এ নিয়ে সরকারের কর্তাব্যক্তিরা হেফাজতের সঙ্গে বৈঠক করেন! ভারতের প্রধানমন্ত্রী এলে তারা যেন বিরোধিতা না করে সেজন্য হেফাজতকে আদর-আপ্যায়ন করেন। নষ্ট রাজনীতিতে হেফাজত এক ভয়ংকর দানব হয়ে ওঠে। যে দানবরূপের এক চিলতে দেখা গেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২৬ ও ২৭ মার্চে। আওয়ামী লীগের এত নেতা-কর্মী তারা কী করেছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়? আওয়ামী লীগের চেয়েও বড় আওয়ামী লীগ পুলিশ প্রশাসন কেন হাত-পা গুটিয়ে ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়?

তাহলে আওয়ামী লীগ কি নিজের সাংগঠনিক শক্তিতে চলতে অক্ষম? আওয়ামী লীগ কি তার অদম্য শক্তি হারিয়ে ফেলেছে?

হেফাজতের তান্ডবে বিএনপি খুশিতে আটখানা। তাদের উল্লাস কোনোমতে চেপে রেখেছে। বিএনপি নতুন করে আশায় বুক বাঁধে, হেফাজত কিছু করলে তাদের সুদিন আসবে। তারাও হেফাজতের সঙ্গে গোপন প্রেমের নাটক করে।

জাতীয় পার্টি তো কিছুই জানে না, কিছু বোঝে না। তা ছাড়া সরকারের ইশারা ছাড়া তারা কিছু করবেই বা কেন? বামেরা হেফাজতের এত লোক দেখে দিশাহারা হয়ে যায়। এক বাচাল বাম, যিনি টকশো করেই রাজনীতিবিদ, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে বক্তব্য দেন। উগ্র ডান ও উগ্র বামের রগরগে মিলন, জাতিকে ’৭১-এর কথা মনে করিয়ে দেয়। সে সময় চৈনিক বামেরাও রাজাকার হয়েছিলেন। এখন অর্বাচীন বামেরা হেফাজত হলেন। রাজনীতির মাঠে বাধাহীন হেফাজত তার আসল রূপ বের করেছে। মেধাহীন চাটুকার আমলারা হেফাজতকে সমীহ করেন। কিছু একটা হয়ে গেলে তার চেয়ারের কী হবে এ চিন্তায় হেফাজতের কথায় কান ধরে উঠবস করতেও এসব আমলার আপত্তি নেই। ফলে এত তান্ডব চালিয়েও হেফাজতের কিছুই হয় না! ২০১৩ সালে পল্টনে, বায়তুল মোকাররমে তান্ডব চালিয়ে এদের বিচার হয় না। ২৬-২৭ মার্চ ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সহিংসতার জন্যও এরা দায়মুক্তি পায়। সাধারণ মানুষ ভয়ে কুঁকড়ে থাকে। ফেসবুকে কিছু একটা লেখার জন্য মোশতাক বিনা বিচারে কারাগারে মারা যান। নির্মমতার শিকার হন কার্টুনিস্ট কিশোর। কিন্তু এ দেশে নোংরা কুৎসিত আপত্তিকর ওয়াজের কোনো বিচার হয় না। ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে আফগানিস্তান বানানোর পরও হেফাজতের নেতারা দম্ভোক্তি করেন!

বাংলাদেশে এখন হেফাজতের আবর্জনা দুর্বিনীত হয়ে উঠেছে। সুস্থ রাজনীতির গতিময় ধারাই এ আবর্জনা সাফ করতে পারে। তা না হলে সামনে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে দুঃসময়। ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক শক্তি থেকে বাঁচতে রাজনীতিকে বাঁচাতে হবে সবার আগে।

লেখক : নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত।

[email protected]

সর্বশেষ খবর