বুধবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

পয়লা বৈশাখ

করোনা থেকে মুক্ত হোক মানবসমাজ

মানবসমাজে বর্ষবরণ উৎসবের শুরু সম্ভবত ৪ হাজার বছর আগে। মনে করা হয়, ইরাকের ব্যাবিলনে বর্ষবরণ উৎসবের সূত্রপাত। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা পাড়ের মানুষও হাজার বছর ধরে পালন করে আসছে বর্ষবরণ। বাংলা সন তথা পয়লা বৈশাখকে নববর্ষ হিসেবে পালনের রেওয়াজ মোগল সম্রাট আকবরের সময় থেকে। হিজরি চান্দ্রবর্ষের সৌরবর্ষ সংস্করণ হিসেবে চালু হয় বাংলা সন। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে গ্রেগরীয় ক্যালেন্ডার রাষ্ট্রীয়ভাবে চালু হলেও গ্রামীণ সমাজে বাংলা বর্ষপঞ্জির গুরুত্ব এতটুকু কমেনি। কৃষক আজও বাংলা সন সামনে রেখে তাদের ফসলি কার্যক্রম চালায়। দেশের সবচেয়ে বড় উৎপাদনব্যবস্থার সঙ্গে বিজড়িত বাংলা সনের সম্পর্ক। বাংলা নববর্ষের অন্যতম অনুষঙ্গ বৈশাখী মেলা। এ মেলা জাতি-ধর্মনির্বিশেষে সব মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়। বাংলা সন শুরু হওয়ার পর করোনার কারণে গত বছরের মতো এ বছরও দুনিয়ার কোথাও আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে পয়লা বৈশাখ পালিত হচ্ছে না। বৈশাখী মেলাও মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হচ্ছে না কোথাও। বাংলাদেশ ভূখণ্ডে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদার পাকিস্তানিদের দখলভুক্ত এলাকায় পয়লা বৈশাখ পালনের কোনো সুযোগ ছিল না। তবে সে বছরও পশ্চিম বাংলা, ত্রিপুরাসহ দুনিয়ার অন্যত্র পয়লা বৈশাখ পালিত হয়েছে ঘটা করে। মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণাধীন মুক্ত এলাকা ও ভারতের শরণার্থী শিবিরগুলোয় পয়লা বৈশাখ পালিত হয়েছে দেশকে শত্রুমুক্ত করার প্রত্যয়ে। কিন্তু পরপর দুই বছর করোনা মহামারী বাংলাদেশ তো বটেই দুনিয়ার সব ভূখণ্ডেই বাঙালিদের প্রকাশ্যে নববর্ষ পালনের সুযোগ কেড়ে নিয়েছে। বাঙালির নববর্ষ আসে কালবৈশাখীর ঝড়ো হাওয়ার মাতম তুলে। জরাজীর্ণ যা কিছু তা উড়িয়ে দিয়ে নববর্ষে নতুনের অভিষেক হয়। নববর্ষে বাঙালি অতীতের দুঃখ-বঞ্চনা-ব্যর্থতা ভুলে সামনে এগোনোর শপথ নেয়। বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ সবখানেই রয়েছে পয়লা বৈশাখের হার না মানা প্রত্যয়। নববর্ষ বাঙালির সর্বজনীন সংস্কৃতির বাহন বলে বিবেচিত হচ্ছে যুগ যুগ ধরে। এবারের নববর্ষে সবারই প্রত্যাশা থাকবে করোনাভাইরাসের অভিশাপ থেকে যত দ্রুত সম্ভব মুক্ত হওয়া। একটি সুখী-সমৃদ্ধ জাতি গঠনে নববর্ষের স্বাজাত্যবোধ অনুপ্রেরণা জোগাবে এমনটিই প্রত্যাশিত। বাংলা নববর্ষ ১৪২৮ সবার জন্য মঙ্গলময় হোক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর