সোমবার, ৩ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

বাংলাদেশ আর হেফাজত একসঙ্গে চলতে পারে না

মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মাদ আলী শিকদার পিএসসি (অব.)

বাংলাদেশ আর হেফাজত একসঙ্গে চলতে পারে না

শেকসপিয়রের বিখ্যাত নাটক হ্যামলেটের বিখ্যাত ডায়ালগ ‘টু বি অর নট টু বি’। মাঝখানে কিছু নেই। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ২৩ বছর সংগ্রাম, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, তাতে ৩০ লাখ মানুষের জীবন দান এবং তার মাধ্যমে যে বাংলাদেশ অর্জন, সেই বাংলাদেশ থাকবে নাকি হেফাজতের ১৩ দফায় বর্ণিত বৈশিষ্ট্যের পাকিস্তান-আফগানিস্তান স্টাইলের বাংলাদেশ হবে- এটাই আজ বাংলাদেশের মানুষের সামনে প্রশ্ন। এর মাঝখানে কিছু নেই- ‘টু বি অর নট টু বি’। হেফাজত সব সীমা লঙ্ঘন করেছে। আর তারা একা নয়, এদের সামনে-পেছনে দেশি-বিদেশি বড় বড় পক্ষ রয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডের নেপথ্যের মূল পক্ষ পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। বঙ্গবন্ধু হত্যার মধ্য দিয়ে স্বল্প দিনের মাথায় রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমান। ডিউ প্রসেস, অর্থাৎ গণতান্ত্রিক ইতিহাসে অনুসৃত পথ, জনগণের ম্যান্ডেট নেওয়ার পদ্ধতি, নির্বাচন ও পার্লামেন্টের অনুমোদনের অপেক্ষা না করে তিনি সামরিক আদেশ দ্বারা বাহাত্তরের সংবিধানে বর্ণিত রাষ্ট্রের মৌলিক আদর্শ এবং মুক্তিযুদ্ধের দর্শন প্রতিফলিত হয় এমন সব শব্দ ও বাক্য বাতিল করে দিলেন। এর কী কারণ থাকতে পারে। সংবিধানের প্রস্তাবনার দ্বিতীয় লাইন থেকে ‘সংগ্রাম’ ও মুক্তি’, এ শব্দ দুটি সামরিক আদেশ দ্বারা বাদ দিলেন। এর দ্বারা বাংলাদেশের কী লাভ হলো।

বাংলাদেশ বেতারের নাম পরিবর্তন করে পাকিস্তানি স্টাইলে রেডিও বাংলাদেশ রাখা হলো, এতেই বা বাংলাদেশের কী লাভ হলো। পুরনো কথা আবার উল্লেখ করলাম। কারণ, হেফাজতকেন্দ্রিক যে সংকট ও সমস্যা তার সমাধান করতে হলে এর শেকড়ের গভীরতা এবং এর পেছনে দেশি-বিদেশি কারা রয়েছে সেটি উপলব্ধি করা প্রয়োজন। জিয়াউর রহমান কর্তৃক সামরিক আদেশ দ্বারা বাহাত্তরের সংবিধান পরিবর্তনের ফলে যে বিশাল ক্ষতি হয়েছে তার প্রমাণ পঁচাত্তরের পর থেকে দেখে আসছি। সেই সংশোধনের মধ্য দিয়ে জামায়াত এবং সর্বশেষ ২০১০ সালে এসে রাষ্ট্র ও রাজনীতির ভিতরে হেফাজতসহ চরম সব ধর্মীয় উগ্রবাদের উত্থান, শক্তি অর্জন ও বিস্তার ঘটেছে। আজ যখন দেশের জনগণ ৩০ লাখ মানুষের রক্তে লেখা বাহাত্তরের সংবিধানে বর্ণিত রাষ্ট্র পুনরায় প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে তখন তার বিরুদ্ধে জামায়াত-হেফাজত ও তাদের সঙ্গীরা জাতির পিতার ম্যুরাল শাবল দিয়ে ভাঙছে, রাষ্ট্রের সম্পদ ধ্বংস এবং রাজপথ রক্তে রঞ্জিত করছে। সামরিক আদেশ দ্বারা বাহাত্তরের সংবিধান সংশোধনের পর রাষ্ট্রের যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য দাঁড়ায় তার সঙ্গে পাকিস্তানের সংবিধান মিলিয়ে দেখলে শুধু দেশের নাম দুটির পার্থক্য ছাড়া আর কোনো পার্থক্য কেউ খুঁজে পাবেন না। বাহাত্তরের সংবিধানকে পাকিস্তানিকরণের উদ্দেশ্য, তাতে সামরিক-মোল্লাতন্ত্রের ধারক-বাহকরা বাংলাদেশে ক্ষমতায় থাকতে পারবে এবং সেই সূত্রে একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়া যেমন হবে, তেমনি আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতি ও সামরিক কৌশলের সমীকরণে পাকিস্তান বিশাল সুবিধা পাবে। কিন্তু এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই ভালো করে জানে দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের বৃহত্তর মানুষ এটা মেনে নেবে না। সুতরাং পাকিস্তানের সেই পুরনো কৌশল, রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে ধর্মকে সামনে আনতে হবে। ধর্মের নামে মিথ্যাচার, অপধর্ম এবং ধর্মীয় ধূম্রজাল সৃষ্টি করে তার আড়ালে সব কাজ করতে হবে। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পঁচাত্তরের পর বাংলাদেশে ধর্মীয় রাজনীতি পুনরায় চালু করা হয়। জামায়াত, খেলাফত, ইসলামী ঐক্যজোট ইত্যাদি নামে ডজনখানেক ধর্মীয় দল ও সংগঠনকে রাজনীতির মাঠে নামিয়ে দেওয়া হয়।

উদ্দেশ্য, ধর্মীয় উত্তেজনা ছড়ানো এবং ধর্মের অপব্যাখ্যার দ্বারা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী সব রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গের কর্মকান্ডকে ইসলামবিরোধী আখ্যা দিতে হবে। এ কাজ তারা অব্যাহত করে যাচ্ছে। গত সত্তর ও আশির দশকে রাষ্ট্র ক্ষমতার ব্যবহার এবং সব পন্থা ও কৌশলে ধর্মের অপব্যাখ্যা ও ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের একটা অংশ এবং এক শ্রেণির সুবিধাবাদী মানুষ, যারা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেছে তারাও ওই পক্ষের রাজনীতির বড় ধারক পঁচাত্তরোত্তর সামরিক শাসকদের দলে ভিড়ে যায়। ফলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষের জনবিন্যাসে সত্তর-একাত্তরের তুলনায় একটা বড় পরিবর্তন ঘটে যায়। এ বিন্যাসে তাদের পক্ষ আরও ভারী হয় যখন ওই পক্ষের বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় চলে আসে। অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহারের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও বাঙালি সংস্কৃতির নেটওয়ার্ক ও ভিত্তিটা এ সময়ে তারা অনেকটাই ভেঙে ও দুর্বল করে দিতে সক্ষম হয়। কিন্তু সব বাধা পেরিয়ে ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে এতদিন সুপ্তপ্রায় মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও বাঙালি সংস্কৃতি আবার জেগে ওঠতে শুরু করে। তাতে তারা বুঝতে পারে ধর্মীয় অপব্যাখ্যা, প্রপাগান্ডা, ইতিহাস বিকৃতি ও ষড়যন্ত্র করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষকে ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। সুতরাং পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ধারণকারী সব কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করে দেওয়ার মিশন নিয়ে প্রস্তুতকৃত বহু নামের সশস্ত্র জঙ্গি সংগঠনকে তারা মাঠে নামায়। ১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ যশোরে উদীচীর সম্মেলনে বোমা-গ্রেনেড হামলার মধ্য দিয়ে সশস্ত্র জঙ্গিদের প্রথম বহিঃপ্রকাশ ঘটে। তারপর পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানসহ একের পর এক সমাবেশ ও ব্যক্তি অনুষ্ঠানের ওপর আক্রমণ চলতে থাকে। সশস্ত্র জঙ্গি সংগঠনের উৎপত্তি, তৎপরতা এবং পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের পরিকল্পনায় দেশি-বিদেশি সম্মিলিত বৃহত্তর ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় তখন আওয়ামী লীগ সরকারের আগাম কোনো প্রস্তুতি ছিল বলে মনে হয়নি। ফলে ২০০১ সালের নির্বাচনে জামায়াত-বিএনপিসহ সব উগ্রবাদী ইসলামিস্ট দলের সম্মিলনী পক্ষ পুনরায় রাষ্ট্রক্ষমতায় চলে আসে। এবার রাষ্ট্রক্ষমতার ছত্রছায়ায় জঙ্গি সংগঠনের তৎপরতা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। এক সময়ে বিভিন্ন নামে প্রায় ১২৫টি সশস্ত্র জঙ্গি সংগঠনের সন্ধান পাওয়া যায়। সুতরাং চূড়ান্ত মিশন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দল আর যাতে ক্ষমতায় না আসতে পারে তার জন্য চতুর্মুখী অভিযান শুরু হয়। তাদের বড় টার্গেট শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা হয় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। পরিকল্পিতভাবে দেশব্যাপী হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর চরম নির্যাতন নেমে আসে, যাতে তারা দেশ ছেড়ে চলে যায়। বাঙালি সংস্কৃতির বাহন পয়লা বৈশাখ, পালা-পার্বণ, মেলাসহ সিনেমা হলের ওপর একের পর এক চলে বোমা আর গ্রেনেড হামলা। বিভিন্ন অঞ্চলে আওয়ামী লীগের সম্ভাবনাময় জনপ্রিয় নেতাদের হত্যা করা হয়, যার শিকার হন আহসানউল্লাহ মাস্টার, খুলনার মনজুরুল ইমাম, নাটোরের মমতাজউদ্দিন, শাহ এ এম এস কিবরিয়াসহ আরও অনেক নেতা-কর্মী। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকা বুদ্ধিজীবী, লেখক, চিন্তক ও সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ হয়, অনেকেই নিহত হন। তাদের দ্বিমুখী লক্ষ্য, প্রথমত, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকা রাজনৈতিক, একাডেমিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মাথা ও সম্ভাবনাময় তরুণদের হত্যা করা, হিন্দুদের দেশত্যাগে বাধ্য করা এবং দ্বিতীয়ত, গ্রেনেড-বোমা আর তলোয়ারের ভয় দেখিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ত্রাস ও ভীতির পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে সবাইকে নীরব ও নিস্তব্ধ করে ফেলা। ২০০১-২০০৬ মেয়াদে এ কৌশলে তারা রাষ্ট্রক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে চায়। কিন্তু ষড়যন্ত্র আর হত্যাকান্ড যাদের রাজনীতির অবলম্বন হয় তখন তারা নিজেরাও বুঝতে পারে না কখন নিজেরাই নিজেদের গর্তটা তৈরি করে ফেলে। ২০০৭-২০০৮ সালে তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। পার্লামেন্টে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করায় তাদের পাপ আত্মা কেঁপে ওঠে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় টার্নিং পয়েন্ট। এ বিচার ঠেকাতে জামায়াত-বিএনপিসহ সব উগ্রবাদী ইসলামিস্ট দল দেশব্যাপী জ্বালাও পোড়াওসহ ধ্বংসযজ্ঞের আন্দোলন চালায়। সশস্ত্র জঙ্গিদের মাঠে নামিয়ে দেয়। সম্প্রীতির আদর্শে বিশ্বাসী উদার দৃষ্টিভঙ্গির ইসলামিক পীর-আলেমদের তারা হত্যা করে। সঙ্গে অন্য ধর্মের ধর্মগুরু, পুরোহিত, নিরীহ মানুষ এবং বিদেশি নাগরিকদের সুবিধা মতো টার্গেট করে হত্যা করতে থাকে, যাতে সরকার চাপে পড়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করতে বাধ্য হয়। শত শত কোটি টাকার বিনিময়ে পশ্চিমা বিশ্বে প্রভাবশালী লবিস্ট নিয়োগ দেয়, যাতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধে তারা বাংলাদেশ সরকারকে চাপ দেয়। কিন্তু এত কিছু করেও তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে পারে না। ফলে রাজনীতির মাঠে জামায়াতের কোমর ভেঙে যায়। সুতরাং জামায়াত এবং সব উগ্রবাদী ইসলামিস্ট দল মিলে নতুন কৌশলের অংশ হিসেবে অরাজনৈতিক ছদ্মবেশে হেফাজতে ইসলাম নামধারী একটি নতুন সংগঠনকে মাঠে নামিয়ে দেয়। এ সংগঠনের সভাপতি প্রয়াত আহমদ শফী ব্যতীত প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হন জামায়াতসহ অন্যান্য সব ইসলামিস্ট দলের নেতারা, যারা আবার সবাই বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ। অর্থাৎ নতুন বোতলে পুরনো মদ। মাঠে নেমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে সোচ্চার গণজাগরণ মঞ্চকে নিষিদ্ধের দাবি জানায় হেফাজত। একই সঙ্গে সরকারের কাছে ১৩ দফা উত্থাপন করে, যার সবকিছুই রাষ্ট্র ও রাজনীতি বিষয়ক, অরাজনৈতিক কিছু নেই। এ ১৩ দফা বাস্তবায়ন মানে বাংলাদেশ আরেকটি তালেবানি আফগানিস্তানে পরিণত হওয়া। তার অর্থ হলো- পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ২৩ বছরের সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ, ৩০ লাখ মানুষের জীবন বিসর্জনের লক্ষ্য, আকাক্সক্ষা, চেতনা, আদর্শ ইত্যাদি সবকিছুর চিরস্থায়ী কবর রচিত হয়ে যাওয়া। ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ শাপলা চত্বরে কয়েক হাজার মাদরাসার ছাত্র নিয়ে হেফাজত অবস্থান নেয় এবং ১৩ দফা মেনে নেওয়ার জন্য সরকারকে আলটিমেটাম দেয়। হেফাজতের সঙ্গে সম্মিলিত পক্ষসমূহের চেহারাটা আবার সেদিন সবার কাছে উন্মোচিত হয়ে পড়ে। বিএনপির সিনিয়র নেতারা মঞ্চে উঠে প্রকাশ্যে হাত উঠিয়ে হেফাজতকে সমর্থন দেয়। আর খেলাফতসহ অন্যরা তো হেফাজতের অংশ। কিন্তু পুলিশের কৌশলী পদক্ষেপে হেফাজত সেদিন পিছু হটতে বাধ্য হয়। তারপর ২০১৩ থেকে ২০২১, সাত বছরে সরকার আর হেফাজতের মধ্যে আপস যেমন হয়েছে, তেমনি সমান্তরালভাবে বিপরীতমুখী কার্যক্রমও চলছে। তেলে আর জলে মিলবে না, সেটা দুই পক্ষই বুঝেছে। সরকারের আপসের সুযোগ নিয়ে হেফাজত দেশে-বিদেশে ব্যাপকভাবে তাদের সংযোগ এবং সর্বদিকের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে। এ ধারা যদি হেফাজত আরও কয়েক বছর অব্যাহত রাখতে পারে তাহলে বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক হুমকি সৃষ্টি হবে, যা তখন সামাল দেওয়া আরও কঠিন হবে। তবে বিপরীতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার টানা ১২ বছর ক্ষমতায় থেকে এ সত্য প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে, বাংলাদেশের উন্নতি, সমৃদ্ধি এবং আগামী প্রজন্মের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে হলে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের ওপর রাষ্ট্র পরিচালনা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। তাতে হেফাজতের নেপথ্যের মূল পক্ষসমূহ এবং বিদেশি পৃষ্ঠপোষকরা বুঝতে পেরেছে আরও সাত-আট বছর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে তাদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব এবং স্বার্থ বাংলাদেশে আর থাকবে না। সুতরাং ২০২৩ সালের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করার অংশ হিসেবে গত ২৭-২৮ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ সারা দেশে হেফাজতের মাধ্যমে তারা একটা মহড়া দিল মাত্র, টেস্ট কেস। বুঝতে চেয়েছে সরকারি প্রশাসন ও জনগণের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া কী হয়। আগামী দিনগুলোতে বিভিন্ন অসিলায় ও পন্থায় আরও বড় অঘটন তারা ঘটাতে চাইবে। সুতরাং বাংলাদেশের বড় শত্রু আজ হেফাজত। আর ছাড় দেওয়া যায় না। মোটকথা হেফাজত থাকলে বাংলাদেশ থাকবে না। বাংলাদেশ আর হেফাজত একসঙ্গে চলতে পারে না। মাঝখানে কিছু নেই, টু বি অর নট টু বি।

 

লেখক : রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

[email protected]

সর্বশেষ খবর