শুক্রবার, ১১ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

বেছে নিতে হবে জান্নাতের পথ

আল্লামা মাহ্‌মূদুল হাসান

বিশ্বরসুলের মৌলিক কাজের বর্ণনা দিয়ে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ ইমানদারদের প্রতি অনুগ্রহ করে তাদের জন্য তাদেরই মধ্য থেকে একজন নবী পাঠিয়েছেন যিনি তাদের আয়াত তিলাওয়াত করে শোনান, তাদের পরিশোধন করেন, কিতাবের তালিম দেন এবং হিকমত শিক্ষা দেন। যদিও আগে তারা ছিল পথভ্রষ্ট। বস্তুত এ আয়াতে গোমরাহিমুক্ত সমাজ কায়েমে রসুলের অনুসৃত তরিকার দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়। আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.)সহ অসংখ্য মুহাদ্দিস হিকমতের অর্থ করেছেন সুন্নত। আর হাদিসে বিশ্বরসুল বলেন, ‘যে আমার সুন্নতকে ভালোবাসে সে আমাকে ভালোবাসে; আর যে আমাকে ভালোবাসে সে আমার সঙ্গে জান্নাতে বসবাস করবে।’ এতে প্রমাণিত হয়, রসুলের প্রকৃত প্রেমিক যে সে রসুলের সুন্নতসমূহ যথাযথভাবে পালন করে। এমন ব্যক্তি অত্যন্ত সৌভাগ্যবান। কেননা সে নবীর সঙ্গে জান্নাতে থাকার সুসংবাদ লাভে ধন্য। অন্য হাদিসে রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমার ও খোলাফায়ে রাশেদিনের সুন্নত পালন করা তোমাদের অপরিহার্য কর্তব্য। তাই সুন্নতকে মজবুতভাবে ধারণ কর। আমার সাহাবিরা নক্ষত্রতুল্য। যে কারও অনুসরণে তোমাদের হেদায়াত লাভ হবে।’ এতে সাহাবায়ে কিরামের ওপর বিশ্বরসুলের আস্থা ও বিশ্বাস প্রস্ফুটিত হয়। বস্তুত আমাদের মুক্তি পেতে হলে এবং ইজ্জত-সম্মানসহ আরামের সঙ্গে ত্বরিত জান্নাতবাসী হতে হলে সুন্নতের পথ অবলম্বন করা একান্ত কর্তব্য। আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে নাজাতের পথে চলার তৌফিক দান করুন!

সংক্ষিপ্তভাবে দীন ইসলাম এবং শরিয়তের মূল জিনিস দুটি। একটি হচ্ছে আল্লাহর হুকুম-আহকাম এবং নিষেধাজ্ঞাকে মেনে চলা, আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে এসব বিষয়ে মনগড়া কোনো কিছু না করে রসুলের সুন্নতের অনুসরণ ও অনুকরণ করা। আল্লাহর হুকুম-আহকাম ও নিষেধাজ্ঞার মূলগ্রন্থ আল কোরআন। আর রসুলের সুন্নতের মূলসূত্র হাদিস। শরিয়তের দৃষ্টিতে এ দুটি হেদায়াতের মূল কেন্দ্রবিন্দু। আল্লাহর রসুল এ মর্মে ইরশাদ করেন, ‘আমি তোমাদের মধ্যে কোরআন এবং আমার সুন্নত রেখে গেলাম, যত দিন তোমরা এর ওপর থাকবে গোমরাহ হবে না।’

পবিত্র কোরআন ও সুন্নতের পাবন্দির দ্বারা মানুষের অন্তর, চিন্তাশক্তি ও দেহ পবিত্র হয়, নুরান্বিত হয়, আধ্যাত্মিক শক্তিতে বলীয়ান হয়। অন্তদৃষ্টি লাভ হয়। মানুষের অন্তর আল্লাহ মারিফাত ও মাআরিফের ভান্ডারে পরিণত হয়। দুনিয়ার জীবন সফল হয়। আখেরাতে বিনা হিসাবে জান্নাতলাভের সৌভাগ্য অর্জিত হয়। আর কোরআন-সুন্নাহর পাবন্দি না করলে অন্তর চিন্তাশক্তি ও দেহ কলুষিত হয়ে পড়ে, তিমিরাচ্ছন্নতা দেখা দেয়, আধ্যাত্মিক শক্তি থেকে বঞ্চিত হয়, অন্তর্দৃষ্টি লাভ হয় না। সব অন্তর, চিন্তাশক্তি ও দেহ জড়তায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। দুনিয়ার জীবন হয় বিপন্ন, আর আখেরাতে কঠোর আজাবের সম্মুখীন হতে হয়।

সুতরাং আমাদের গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে যে আমরা কোন পথে চলব- জান্নাতের পথে না জাহান্নামের পথে। এ কথা বাস্তব যে কোনো বুদ্ধিমান ও বিবেকসম্পন্ন মানুষ কোনো দিন জাহান্নামের পথে চলার আগ্রহী হতে পারে না; বরং সে অবশ্যই জান্নাতের পথে চলতে চাইবে। সুতরাং আমাকে এবং আপনাকে জান্নাতের পথ বেছে নিতে হবে; এবং সে পথেই চলতে হবে।

লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ।

সর্বশেষ খবর