সোমবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

আল্লাহর ইচ্ছায় মোজেজা

আবদুর রশিদ

মোজেজা এবং জাদু দুটিই মানুষের মনে বিস্ময় সৃষ্টি করে। কারণ সাধারণ মানুষের বোধশক্তির বাইরে এ দুটির অবস্থান। মোজেজার সঙ্গে জাদুর ধরনগত মিল থাকলেও দুটি এক নয়। মোজেজা আসে আল্লাহর ইচ্ছায়, জাদু বান্দার কারসাজি। আল্লামা শিব্বির আহমদ উসমানি (রহ.) এ বিষয়ের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেছেন, নিঃসন্দেহে আল্লাহর ও বান্দার কাজে স্পষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান। যখন মুসা (আ.) ফেরাউনকে মোজেজা দেখানোর জন্য লাঠি ফেললেন আর তা অজগর হয়ে গেল, তখন এর জবাব দেওয়ার জন্য ফেরাউন বড় বড় জাদুকরকে আহ্বান করল। তারা আপন আপন দড়ি ও লাঠি নিয়ে সমবেত হলো। মুসা (আ.)-কে নিজেদের মতো জাদুকর মনে করে তারা বলল, চাইলে আপনি লাঠি নিক্ষেপ করুন। নইলে আমরা নিক্ষেপ করি। মুসা (আ.) বললেন, তোমরাই নিক্ষেপ কর। জাদুকররা তখন নিজেদের লাঠি ও দড়িগুলো নিক্ষেপ করল এবং সেগুলো চলমান সাপ হয়ে দৃষ্টিগোচর হতে লাগল; তখন মুসা (আ.)-এর অন্তরে কিছুটা ভয় সৃষ্টি হলো। অথচ তিনি যদি পেশাদার জাদুকর হতেন, তাহলে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ ছিল না। মুসা (আ.) কেন ভীত হলেন? কেন তাকে ভীত করা হলো? অর্থাৎ ভীতির উৎস ও ভীত করার মধ্যে হেকমত কী ছিল? যদি বলা হয়, সাপগুলো দেখে ভীত হয়েছিলেন, তাহলে বলব, মুসা (আ.)-এর মতো পয়গম্বরের পক্ষে জাদুর লাঠি দেখে কোনো ভয় হতে পারে না। বিশেষত যখন এ প্রকারের উঁচু পর্যায়ের অস্বাভাবিক ঘটনার অভিজ্ঞতা ইতিমধ্যেই দুবার লাভ করেছেন। পাহাড়ের ঘটনায় তো তিনি ভয় পেয়েছিলেন। সেটা মানবিক স্বভাবের কারণে ছিল। সে ভয় সেখানেই দূর হয়ে গেছে। এরপর আবার ফেরাউনের সামনে ঘটনা ঘটেছে। অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে তাকালে অনুভব করা যাবে ওই ভয় মানবিক ছিল না। এ ভয়ের কারণ হচ্ছে, মুসা (আ.) জানতেন, তাঁর হাতে কোনো শক্তি-সামর্থ্য নেই। তিনি ভাবছিলেন, না জানি জাদুকরদের এসবের সামনে সত্য নিচু হয়ে যায় আর নির্বোধ লোকেরা বিভ্রান্ত হয়। যাই হোক, আল্লাহতায়ালা বললেন, ‘ভয় পেও না। তুমিই বিজয়ী থাকবে।’ সুরা তোয়াহা, আয়াত ৬৮।

মুসা (আ.) যখন ভয় পেলেন তখন জাদুকররা বুঝল, তিনি তাদের মতো পেশাদার জাদুকর নন। তার এমন কোনো জাদু জানা নেই, যা নিয়ে জাদুকরদের মোকাবিলায় তিনি নিশ্চিন্ত থাকবেন। এবার যখন মুসা (আ.) লাঠি ছাড়লেন এবং আল্লাহর হুকুমে তা সব জাদুর সাপকে গিলে ফেলল; তখন জাদুকররা বিশ্বাস করে নিল যে, এটা জাদুর চেয়ে উচ্চ পর্যায়ের কিছু। তারা সবাই সিজদায় পড়ে গেল এবং চিৎকার দিয়ে বলল, আমরাও মুসা ও হারুনের রবের ওপর ইমান আনলাম। ফেরাউন নানা হুমকি দিল, ভীত করতে চাইল কিন্তু তাদের উত্তর শুধু এই ছিল, ‘তুমি যা কিছু করার কর, দুনিয়ার জীবনে কিছু করা ছাড়া তুমি আর কীই-বা করতে পারবে। এখন তো আমরা আমাদের পালনকর্তার ওপর ইমান এনেছি। যাতে তিনি আমাদের গুনাহ মাফ করেন এবং যে জাদু-টোনার ওপর তুমি আমাদের বাধ্য করেছ, তা ক্ষমা করেন।’ সুরা তোয়াহা, আয়াত ৭২-৭৩। আর যারা এই স্পষ্ট নিদর্শন দেখেও ইমান আনল না; তাদের অবস্থা আল কোরআন এভাবে ব্যক্ত করছে, ‘তারা জুলুম ও অহংকার করে এগুলো অস্বীকার করল। অথচ তাদের অন্তর এগুলোকে বিশ্বাস করে নিয়েছিল।’ সূরা নামল, আয়াত ১৪।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর