শুক্রবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

আল্লাহর আনুগত্যহীন মানুষ জানোয়ারের চেয়েও অধম

আল্লামা মাহ্মূদুল হাসান

কুকুর অত্যন্ত ‘নিকৃষ্ট’ সৃষ্টি; মানুষ কুকুরকে ঘৃণার চোখে দেখে। যদি কুকুর স্বভাবের কোনো মানুষকে কুকুর বলে গালি দেওয়া হয় তাহলে সে ভীষণভাবে ক্ষিপ্ত হয়। কেননা কুকুর নির্লজ্জ-বেহায়া, সব ধরনের খারাবি কুকুরের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে। তাই মানুষ এরূপ গালিগালাজ সহ্য করতে পারে না বলে ক্ষিপ্ত হয়। যে ব্যক্তি তার স্রষ্টাকে বিশ্বাস করে না, তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও আনুগত্যশীল হয় না; বরং স্রষ্টার প্রতি অবিশ্বাসী হয়ে তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করে সে কুকুরের চেয়েও অধিক ঘৃণার পাত্র এবং অধম। কেননা কুকুর যতই খারাপ হোক সে তার মনিবের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল ও আনুগত্যকারী হয়। এ কারণেই আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘যারা আল্লাহর হুকুম-আহকামের প্রতি আনুগত্যশীল নয়, তারা জানোয়ারের মতো; বরং জানোয়ারের চেয়েও অধম।’ তাই আমাদের সৃষ্টির পরম উৎকর্ষ সাধন করতে হলে অবশ্যই আমাদের সৃষ্টির উদ্দেশ্য অনুধাবন করতে ও অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে সচেষ্ট হতে হবে। আল্লাহর রহমতে সৌভাগ্যশীল হওয়ার একমাত্র উপায় এটাই।

চেষ্টার ভুলত্রুটি মার্জনীয় : আমরা যদি অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে সচেষ্ট হই আর যদি আমাদের চেষ্টায় ভুলত্রুটি হয়ে যায় তাহলে এটা মার্জনীয় হয়ে সাফল্যের দ্বার উন্মোচন করতে পারে। আল কোরআন ও হাদিসে এর যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। শয়তান ভুল করেছিল কিন্তু ক্ষমাপ্রার্থী হয়নি, ক্ষমালাভের চেষ্টাও করেনি; বরং অহংকার প্রদর্শন করেছিল, ফলে শয়তান ধ্বংস হয়েছে। আর হজরত আদমও ভুল করেছিলেন; কিন্তু তিনি অহংকার না করে ক্ষমালাভের চেষ্টা করেছেন, আল্লাহর দরবারে ক্ষমাপ্রার্থী হয়েছেন। আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করেছেন। ফলে তাঁর এবং তাঁর অনুসারীদের জন্য সৌভাগ্যের দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।

ক্ষমার আজব ঘটনা : এক লোক মোমিন ছিল বটে কিন্তু নিজকে অত্যন্ত গুনাহগার মনে করত। সে মনে করত তার নাজাতের কোনো উপায় নেই। তাই স্বীয় সন্তানদের অসিয়ত করল- ‘আমার মৃত্যুর সময় অতি নিকটে, জীবনভর কেবল গুনাহই করেছি, নেক আমল বলতে আমার কিছুই নেই। তাই মৃত্যুর পর কবরের ঘাঁটি নিরাপদে পার হওয়ার কোনো উপায় নেই! কী করে আল্লাহকে মুখ দেখাব? যদি ধরা পড়ি তাহলে জাহান্নামের কঠোর আজাব ছাড়া আমার ভাগ্যে কিছুই জুটবে না। তাই আল্লাহর হাতে ধরা না পড়ার উপায় হিসেবে তোমরা আমার মৃত্যুর পর আমাকে কবরে দাফন না করে খরার মৌসুমে আগুনে পুড়িয়ে ছাইগুলো বাতাসে আর সমুদ্রের পানিতে ছড়িয়ে দেবে; এটাই আমার আত্মরক্ষার একমাত্র উপায়, আর কোনো উপায় নেই।’ লোকটি ছিল মূর্খ। সন্তানরা তার মৃত্যুর পর পিতার অসিয়তকে যথাযথভাবেই কার্যকর করল।

অপরাধের স্বরূপ। এখানে কতিপয় অপরাধ হয়েছে। যথা : ক. মৃত ব্যক্তিকে ত্বরিত দাফন করার নির্দেশ রয়েছে অথচ সে খরার অপেক্ষা করার জন্য অসিয়ত করেছে এবং তা-ই করা হয়েছে। খ. মৃত ব্যক্তিকে কবরস্থকরণের নির্দেশ রয়েছে অথচ সে তাকে পুড়িয়ে ছাইগুলো সমুদ্রে ছড়ানো এবং বাতাসে ওড়ানোর অসিয়ত করেছে এবং তা-ই করা হয়েছে। গ. এরূপ অসিয়ত আল্লাহর অসীম শক্তি অস্বীকার করার শামিল, যা অত্যন্ত বড় ধরনের অপরাধ; বরং ইমান বিনষ্টকারী।

লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ।

সর্বশেষ খবর