শিরোনাম
সোমবার, ৭ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

আসুন সালাতের মাধ্যমে দুনিয়া ও আখিরাতের জীবন সুন্দর করি

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

আসুন সালাতের মাধ্যমে দুনিয়া ও আখিরাতের জীবন সুন্দর করি

পবিত্র কোরআনে সুরা বাকারায় আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘ইয়া আইয়্যুহাল্লাজিনা আমানুস তায়িনু বিসসাবরি ওয়াসসালাহ। হে ইমানদারগণ! তোমরা সালাত ও সবরের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা কর। ওয়াইন্নাহা লাকাবিরাতুন ইল্লা আলাল খাশিয়িন। নিশ্চয়ই এ কাজটি খুবই কঠিন। শুধুমাত্র বিনয়ী ব্যক্তিদের পক্ষেই এমনটি করা সহজ।’ মানবজীবনের সব সমস্যা, হতাশা, অপ্রাপ্তির সমাধান একবাক্যে-এক কথায় বলে দিয়েছেন আল্লাহ তায়ালা। আল্লাহর সাহায্য ছাড়া এক মুহূর্তও বেঁচে থাকা, সামনে আগানো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। মানুষ যখন হতাশ হয়ে পড়ে, আশার আলো যখন নিভু নিভু করে, ঘোর অন্ধকার থেকে বেরোনোর পথ খুঁজে বেড়ায় তখন কী করবে, কীভাবে আলোর দেখা পাবে সে জটিল প্রশ্নের সহজ উত্তর দেওয়া হয়েছে এ আয়াতে। আল্লাহ বলেছেন, যত বড় বিপদেই পড় না কেন সালাত এবং সবরের মাধ্যমে সাহায্য চাও। সহি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রসুল (সা.) যখন দুশ্চিন্তায় ভুগতেন কিংবা কোনো বিপদে পড়ে যেতেন সঙ্গে সঙ্গে সালাতে দাঁড়িয়ে আল্লাহর সাহায্য চাইতেন। আল্লাহর সাহায্য চাওয়ার মাধ্যমে বান্দার শুধু যে দুনিয়াবি উপকারই হয় তা নয়, এতে করে বান্দার সঙ্গে আল্লাহর গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়। বুখারি হাদিসে রসুল (সা.) বলেছেন, ‘মানলাম ইয়াসআলিল্লাহি ইয়াগদাব আলাইহি। যে আল্লাহর কাছে চায় না, আল্লাহ তার ওপর রাগ করেন।’ তাই রসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা বেশি বেশি আল্লাহর কাছে চাও। এমনকি তোমার জুতার ফিতা ছিঁড়ে গেলে অথবা খাবারের লবণ ফুড়িয়ে গেলেও। দার্শনিক ইমাম গাজ্জালি (রহ.) বলেন, আল্লাহর কাছে চাওয়ার মাধ্যমে বান্দার ভিতর তায়াক্কুল তৈরি হয়। বান্দার বিশ্বাস গাঢ় হয়- দেওয়ার একমাত্র মালিক আল্লাহ তায়ালাই। বান্দা যখন আল্লাহ তায়ালাকে দেওয়ার একমাত্র মালিক বলে বিশ্বাস করে নেয় তখনই সে আধ্যাত্মিক জগতের একটি উঁচু স্তরের সিঁড়ি অতিক্রম করে। যে সিঁড়ি বান্দার সঙ্গে প্রভুর সম্পর্ক আরও গভীর করে দেয়। ফলে বান্দা দুনিয়াতেই জান্নাতের সুখ-সমৃদ্ধি অনুভব করে। আল্লাহর কাছে চাওয়ার দুটি মাধ্যম রয়েছে। একটি হলো সালাত। আরেকটি সবর। সালাতের মাধ্যমে বান্দা নিবিড়ভাবে আল্লাহর কাছে যাবতীয় দুঃখ-কষ্ট, অভাব-অনটন ও প্রয়োজনের কথা তুলে ধরে। আর সবরের মাধ্যমে বান্দা অপেক্ষা করে কখন আল্লাহ তার বিপদাপদ-অভাব-অনটন দূর করবেন। সবর বান্দাকে ধৈর্যহারাতে দেয় না। মানুষ যখন ধৈর্য হারিয়ে ফেলে তখন সে ইমানের মালা গলা থেকে খুলে কুফুরির মালা গলায় পড়ে নেয়। সে আল্লাহর শক্তি-সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে। কিন্তু সবরকারী এ ধরনের বিচ্যুতি থেকে বেঁচে যায়। তাই আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার জন্য সালাত এবং সবর দুটোই খুব তাৎপর্যপূর্ণ। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা যতনা সালাতের চর্চা করছি, সবরের চর্চা তার সিকি ভাগও করি না। ফলে আমাদের ব্যক্তিজীবন থেকে রাষ্ট্রীয় জীবন কোথাও ধৈর্যের চিহ্ন দেখা যায় না। এর মারাত্মক ফল দাঁড়িয়েছে জাতিগতভাবে আমরা আল্লাহর ওপর তায়াক্কুল করা ছেড়ে দিয়ে মানুষের ওপর, ক্ষমতার ওপর, নেতার ওপর নির্ভর করা শুরু করেছি। মানুষ যখন আল্লাহ বিমুখ হয়ে যায়, তখন তাদের জন্য ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই অপেক্ষা করে না। এখনো সময় আছে, আসুন আমরা সালাত ও সবরের মাধ্যমে আল্লাহর দিকে ফিরে আসি।

রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন যে আল্লাহ বলেছেন, হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতের জন্য অবসর হয়ে নাও। আমি তোমার অন্তরকে ধনী করে দেব, আর তোমার অভাব দূর করে দেব। আর যদি তা না কর, তাহলে আমি তোমার অন্তর ব্যস্ততা দিয়ে পেরেশন করে দেব, অভাবও দূর করব না (ইবনু মাজাহ, ৪১০৭ তিরমিজি ২৪৬৬)। নবীজি (সা.) অন্যত্র বলেছেন, “কোনো ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে একাধারে চল্লিশ দিন তাকবিরে উলার (প্রথম তাকবির) সঙ্গে জামায়াতে সালাত আদায় করতে পারলে তাকে দুটি নাজাতের ছাড়পত্র দেওয়া হয়, জাহান্নাম হতে নাজাত এবং মুনাফিকি হতে মুক্তি (তিরমিজি, ২৪১; সহিহ, ১৯৭৯)। নবীজি (সা.) অন্যত্র বলেছে “বান্দা যখন সালাতে দাঁড়ায় তখন তার সব গুনাহকে এনে তার মাথায় এবং দুই কাঁধে রাখা হয়। অতঃপর সে যখন রুকু ও সিজদাহ করে তার গুনাহ ঝরে যেতে থাকে (ইবনু হিব্বান, ১৭৩৪, আবদুল্লাহ বিন উমর (রা.) হতে, সালাত অধ্যায়, সহিহ)। সিজদারত বান্দাকে দেখে শয়তান কীভাবে কাঁদে তার বর্ণনা দিয়ে নবীজি (সা.) বলেছেন, “আদম সন্তান যখন সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করে সিজদাবনত হয়, তখন শয়তান কাঁদতে কাঁদতে দূরে সরে পড়ে এবং বলতে থাকে হায় দুর্ভাগ্য! আদম সন্তানকে সিজদার আদেশ করা হয়েছে আর সে সিজদা করেছে। এর বিনিময়ে তার জন্য জান্নাত নির্ধারিত হলো। আর আমাকে সিজদার জন্য আদেশ করা হলো কিন্তু আমি তা অস্বীকার করলাম, ফলে আমার জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত হলো (মুসলিম, ৮১, ) কীভাবে নামাজে গুনা ধুয়ে যায় তার বর্ণনা দিয়ে নবীজি (সা.) বলেছেন, “ধ্বংসাত্মক কাজ (গুনাহ) করতে করতে তোমরা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাও। অতঃপর যখন তোমরা ফজরের সালাত আদায় কর, তা সবকিছু (গুনাহ) ধুয়ে মুছে সাফ করে দেয়। আবার ধ্বংসের কাজ (গুনাহ) করতে করতে তোমরা চূরান্ত ধ্বংসের দশায় পৌঁছে যাও। তারপর যখন তোমরা জহুরের সালাত আদায় কর, তা সবকিছু (গুনাহ) ধুয়ে মুছে সাফ করে দেয়। আবার ধ্বংসাত্মক কাজ (গুনাহ) করতে করতে তোমরা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাও। যখন তোমরা আসরের সালাত আদায় কর তা সব কিছু (গুনাহ) ধুয়ে মুছে সাফ করে দেয়। আবার ধ্বংসাত্মক কাজ (গুনাহ) করতে করতে তোমাদের ধ্বংসের উপক্রম হয়ে যাও যখন তোমরা মাগরিরের সালাত আদায় কর, তা সবকিছু (গুনাহ) ধুয়ে মুছে সাফ করে দেয়।

লেখক : চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ মুফাস্সির সোসাইটি আউলিয়া নগর।

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর