শুক্রবার, ২২ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

রোজাদারকে ইফতার করানোর ফজিলত

মুফতি রুহুল আমিন কাসেমী

রোজাদারকে ইফতার করানোর ফজিলত

রমজান মাস বছরের শ্রেষ্ঠ সময়। এ মাসে নেক আমলের সওয়াব আল্লাহ অনেক বাড়িয়ে দেন। এ মাসে আল্লাহর বান্দারা পারস্পরিক আমলের প্রতিযোগিতা করে। গ্রীষ্মকালের প্রচন্ড- গরমে পিপাসায় কাতর একজন রোজাদার আসরের পর থেকে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে যায় এবং প্রচন্ড-ভাবে পানাহারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে এবং সব রকমের সুস্বাদু খাদ্য, ঠান্ডা শরবত ও পানীয়ের ব্যবস্থা প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও আল্লাহর হুকুমের অপেক্ষায় বান্দা পানাহার থেকে বিরত থাকে। আল্লাহর ভালোবাসায় এ প্রচ- কষ্ট ও আত্মত্যাগ একজন মুসলিমকে পবিত্র ও মহিমান্বিত করে দেয়। এটাই আল্লাহর কাছে বড় পছন্দনীয় ও গ্রহণযোগ্য খাঁটি আমল। তাই আসরের পর থেকে ইফতারির আগ পর্যন্ত সময় একজন রোজাদার মুমিনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় আল্লাহ বান্দাকে নিয়ে ফেরেশতাদের উপস্থিতিতে বড় ফখর করেন। বান্দার সব দোয়া, চাওয়া ও দাবি আল্লাহ খুশি হয়ে পূরণ করে দেন। এ সময় বান্দার না খাওয়ার কারণে মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশক আম্বরের চেয়ে সুগন্ধি হয়। এরপর সচ্ছল ও ধনী ব্যক্তিরা খুশিমনে নানা রুচিকর ও পছন্দনীয় ইফতার দ্বারা ইফতারি করে। ঠান্ডা পানির শরবত দিয়ে পরিতৃপ্ত হয়। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘রোজাদারের দুটি আনন্দ- একটি ইফতারের সময়, আরেকটি জান্নাতে আল্লাহর সঙ্গে দিদারের সময়।’ কিন্তু একজন গরিব রোজাদার মুসাফির ইফতারের এ আনন্দ থেকেও বঞ্চিত হয়। তাই কোনো সচ্ছল ব্যক্তি যদি তাদের নিজের ইফতারের সঙ্গে শরিক করে, তবেই শুধু তাদেরও ইফতার আনন্দময় হয়। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে তার সাধ্যমতো ইফতার করাবে সে ওই রোজাদারের সমান সওয়াব পাবে এবং রোজাদারের সওয়াবও কমানো হবে না।’ (তিরমিজি) তিনি আরও ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে তার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে এবং রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে। তবে ওই রোজাদারের সওয়াব কম করা হবে না। সাহাবায়ে কিরাম বললেন ইয়া রসুলুল্লাহ! আমাদের অনেকেরই তো রোজাদারকে ইফতার করানোর সামর্থ্য নেই। তিনি বললেন, পানিমিশ্রিত একটি খেজুর অথবা এক গ্লাস দুধ বা পানি দিয়ে যদি কেউ কোনো রোজাদারকে ইফতার করায় তাতেও সে পরিমাণ সওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে তৃপ্তিসহকারে ইফতার করাবে, আল্লাহ তাঁকে আমার হাউসে কাওসার থেকে এমন পানীয় পান করাবেন যার ফলে জান্নাতে প্রবেশ করার আগ পর্যন্ত কখনো পিপাসার্ত হবে না।’ (মুসনাদে আহমদ) হজরত জায়েদ ইবনে খালেদ আল জুহানি (রহ.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে সে রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে, রোজাদারের সওয়াব থেকে একটুও কমানো হবে নাভ’ (ইবনে মাজাহ) মুসলিম বিশ্বে বুজুর্গানে দীন খাবার খাওয়ানোর ক্ষেত্রে অগ্রণী ছিলেন এবং তাঁরা একে মহান ইবাদত মনে করতেন। জনৈক বুজুর্গ বলেছেন, ‘১০ জন সাথীকে দাওয়াত দিয়ে তাদের পছন্দসই খাবার খাওয়ানো আমার কাছে ১০ জন গোলাম আজাদ করার চেয়ে বেশি প্রিয়।’  ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল ও মালিক বিন দিনার (রহ.)সহ অনেকেই নিজের ইফতার অন্যদের খাওয়াতেন এবং এতে নিজেরা আত্মতৃপ্তি লাভ করতেন। হজরত ইবনে ওমর (রা.) এতিম ও মিসকিনদের সঙ্গে না নিয়ে ইফতার করতেন না। হজরত ইবনুল মুবারক (রহ.) তাঁর ইফতার সঙ্গীদের খাওয়াতেন এবং নিজেই তাদের খেদমত করতেন। আরবের বনি আদি গোত্রের লোকেরা কখনো একাকী ইফতার করত না, যদি তার সঙ্গে ইফতার করার জন্য কাউকে পেত তাহলে তাকে নিয়ে ইফতার করত। আর যদি কাউকে না পেত তাহলে নিজের খাবার নিয়ে মসজিদে চলে আসত এবং অন্যদেরও ভাগাভাগি করে দিয়ে ইফতার করত। অন্যকে খাবার খাওয়ানো একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং এতে অনেক ইবাদত একসঙ্গে পালিত হয়। নিমন্ত্রিতদের সঙ্গে হৃদ্যতা ও ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। আর পরস্পরের হৃদ্যতা ও ভালোবাসা জান্নাতে প্রবেশের কারণ। নবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা ইমান ছাড়া জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর পারস্পরিক ভালোবাসা ছাড়া তোমাদের ইমান হবে না।’ (মুসলিম) অন্য হাদিসে তিনি ইরশাদ করেন, ‘রমজানের রোজা পালন, তারাবি নামাজ আদায় ও ইফতার করানো গুনাহ মাফের কারণ।’ হজরত আবু হোরাইরা (রা.) বলেন, ‘যে গৃহবাসী কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে তাদের জন্য তার অনুরূপ সওয়াব হবে।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবদুর রাজ্জাক) আমাদের দেশে এতিম, গরিব ও অসচ্ছল রোজাদার, মুসাফির রোজাদার বিদ্যমান রয়েছে, বিশেষ করে এসব রোজাদার আল্লাহর ঘর মসজিদে গিয়ে ইফতারের সময় অবস্থান নেয়। তা ছাড়া গরিব প্রতিবেশী ও অসচ্ছল আত্মীয়স্বজন আমাদের আশপাশেই রয়েছে। রমজান সহমর্মিতা ও সমবেদনার মাস। তাই ব্যয়বহুল বাহারি ইফতারের আয়োজন না করে পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন, নিকটজন, গরিব-মিসকিন, দরিদ্র-অসহায় ও মুসাফিরদের ইফতারের বিষয়ে যত্নবান ও সচেতন হওয়া বাঞ্ছনীয়।

 

লেখক : ইমাম ও খতিব : কাওলার বাজার জামে মসজিদ, দক্ষিণখান, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর