রবিবার, ১৭ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

মহান আল্লাহ মানুষকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন

মুহম্মাদ আশরাফ আলী

আল্লাহ মানুষকে স্বাধীন সত্তা হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। মানুষ তাঁর সৃষ্টিকর্তা ছাড়া অন্য কারও কাছে দায়বদ্ধ নয়। মানুষকে আল্লাহ যে মর্যাদা দিয়েছেন তা-ও অতুলনীয়। সুরা বনি ইসরাইলের ৭০ নম্বর আয়াতে মানুষের মর্যাদা সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি আদমসন্তানকে মর্যাদা দান করেছি এবং জলে-স্থলে তাদের আরোহণ করিয়েছি, তাদের পবিত্র বস্তু দিয়ে রিজিক দিয়েছি এবং আমার বহুসংখ্যক সৃষ্টির ওপর সুস্পষ্ট শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। (এসব আমার দয়া ও অনুগ্রহ)।’ আল্লাহর দৃষ্টিতে সব মানুষই সমান। তাঁর কাছে তারাই বেশি সম্মানিত যারা পরহেজগার এবং আল্লাহভীরু। এ ক্ষেত্রে আর্থিক সামর্থ্য, ক্ষমতা বা অন্য কিছু বিবেচনায় আসবে না। মানবজাতির শ্রেষ্ঠত্বের বর্ণনা ও তার কারণ উল্লেখ করে সুরা হুজুরাতের ১৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে অধিক আল্লাহভীরু ব্যক্তিই আল্লাহর কাছে অধিক সম্মানিত।’

আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে তৈরি করেছেন। তাদের এ শ্রেষ্ঠত্ব যাতে উপলব্ধি করা যায়, সেজন্য মানুষকে সৌন্দর্যমন্ডিত করা হয়েছে। সুরা ত্বিনের ৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ মানবসন্তানের বাহ্যিক অবকাঠামো ও রূপ-সৌন্দর্যের বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘আমি মানুষকে অতি সুন্দর অবয়বে সৃষ্টি করেছি।’

সুরা আলে ইমরানের ৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ আরও ইরশাদ করেন, ‘তিনিই তো ওই সত্তা যিনি তোমাদের মায়েদের গর্ভে নিজের ইচ্ছামতো আকৃতি গঠন করেন। তিনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। তিনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।’ অন্য আয়াতে মানব সৃষ্টির উপাদান বর্ণনা করে আল্লাহ বলেন, ‘আমি মানুষকে গন্ধযুক্ত কর্দমের শুষ্ক ঠনঠনা মৃত্তিকা থেকে সৃষ্টি করেছি।’ সুরা হিজর, আয়াত ২৬। মানুষের শারীরিক অবকাঠামো গঠন, বৃদ্ধি ও পরবর্তী পর্যায়ের বিশদ বর্ণনা দিয়ে আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘হে লোকসকল! মৃত্যুর পর পুনরুত্থান সম্পর্কে যদি তোমরা কোনো সন্দেহ পোষণ করে থাক (তাহলে ভেবে দেখ) আমি তোমাদের মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি, পরে শুক্রকীট থেকে, তারপর রক্তপি- থেকে, পরে মাংসপি- থেকে যা আকৃতি সম্পন্নও হয়, আবার আকৃতিবিহীনও; যেন তোমাদের কাছে প্রকৃত সত্য সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করি। আমি যেটিকে (শুক্রকীট) ইচ্ছা করি একটি নির্ধারিত সময় পর্যন্ত জরায়ুর মধ্যে স্থিতিশীল করে রাখি। পরে তোমাদের শিশুরূপে ভূমিষ্ঠ করি। ফলে তোমরা তোমাদের যৌবনে পদার্পণ করে থাক। আর তোমাদের মধ্যে কাউকে এর আগেই মৃত্যু দেওয়া হয়। আবার কাউকে নিকৃষ্টতম জীবনের (বার্ধক্য) দিকে প্রত্যাবর্তন করানো হয়, ফলে সে সবকিছু জেনে নেওয়ার পরও কিছু জানে না। আপনি শুষ্ক জমিন দেখতে পাচ্ছেন। পরে যখনই আমি তার ওপর পানি বর্ষণ করি সহসাই তা সতেজ হয়ে ওঠে, ফুলে ওঠে এবং তা সব ধরনের সুদৃশ্য উদ্ভিদ উৎপাদন শুরু করে দেয়।’ সুরা হজ, আয়াত ৫। আল্লাহ কোরআনে সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ইবাদত করার জন্যই তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন। সুরা আল আহজাবের ৪১ ও ৪২ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর এবং সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর।’

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর